নিজস্ব প্রতিনিধি:
এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ০৯:৫৪ এএম
নিজস্ব প্রতিনিধি:
এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ০৯:৫৪ এএম
আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপি, জামায়াত ইসলামী ও সমমনা অন্যান্য দল আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিলেও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা নির্বাচনে ৩টি পদেই বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করেছে উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ।
এই ঘটনায় বিএনপির সাধারণ সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অধীনে সকল ধরনের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি এবং সমমনা দলের জোট। এমনকি কেন্দ্রের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে, তাদেরকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।
তবে সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলা বিএনপির অফিসে রীতিমতো মিটিং ডেকে আসন্ন পেকুয়া উপজেলা নির্বাচনে ৩টি পদেই বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের এম বাহাদুর শাহ।
আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ,যুগ্ম সম্পাদক মোঃ শাহনেওয়াজ মেম্বার সহ পেকুয়া উপজেলা বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী গতকাল সোমবার বিকেলে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভা ডেকে আসন্ন পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পেকুয়া উপজেলা যুবদলের সভাপতি কামরান জাদিদ মুকুট, ভাইস চেয়ারম্যান পদে পেকুয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আহসান উল্লাহ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পেকুয়া সমবায় কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল অবিচারের সহধর্মিণী রাজিয়া সুলতানা এর নাম চূড়ান্ত করেছেন। পরে মতবিনিময় সভা শেষে তাদের নাম ঘোষণা করেন বাহাদুর শাহ।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩টি পদেই বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার বিষয়ে জানতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সদর ইউপির চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ এর সাথে মুঠোফোনে ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে এবারের পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে `বিদ্রোহী` প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে দুইবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়াত আজিজ রাজু মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তিনি বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এবং চকরিয়া - কুতুবদিয়া আসনের সাবেক এমপি মরহুম মাহমুদুল করিম চৌধুরীর বড় ছেলে।
রাজু এক সময় পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি, উপজেলা যুবদলের সাধারণ ও সভাপতি এবং পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০০৯ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
২০১৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জন করায় তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন নি। পরবর্তী সময়ে দুইবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং তৃণমূল নেতাদের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকদের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি।
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জন করলেও এবারের পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী হিসেবে কামরান জাদিদ মুকুট ও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে শাফায়েত আজিজ রাজু ,ভাইস চেয়ারম্যান পদে আহসান উল্লাহ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাজিয়া সুলতানা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কারণে জেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান মঞ্জু। দল এবং জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন নি। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে পেকুয়া উপজেলা নির্বাচনে ৩টি পদেই বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সমর্থকরা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এর অনুপস্থিতিতে তাঁর নাম বিক্রি করে কিছু নেতা উপজেলা নির্বাচনে ফায়দা হাসিলের জন্য দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন বলে জানা গেছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।
এই বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দফতরে কর্মরত বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল ইসলাম তেনজিং বলেন, "পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩টি পদেই বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তাদের কে বসে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।এই বিষয়ে কক্সবাজারের বিএনপির অভিভাবক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এর সাথে কথা হয়েছে আমার।যদি সরে না যায়, তাহলে তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে।"
এদিকে পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, আজ ২৩ এপ্রিল বিভিন্ন প্রার্থীর দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই করা হবে। ২৪-২৬ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের, ২৭-২৯ এপ্রিল আপিল নিষ্পত্তি, ৩০ এপ্রিল প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন, ২ মে বৈধ প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ এবং ২১ মে পেকুয়া উপজেলার সবকটি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বিআরইউ