নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া
এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ১০:২২ এএম
নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া
এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ১০:২২ এএম
কুষ্টিয়ায় শুধুমাত্র লাইসেন্সবিহীন অনটেষ্ট মোটরসাইকেল আটক করে জেলা পুলিশের মাসিক আদায় কোটি টাকার ঊর্ধ্বে। এমন তথ্য উঠে এসেছে কুষ্টিয়া জেলা ট্রাফিক অফিসের অক্টোবর- ২০২৩ থেকে ৩এপ্রিল- ২০২৪ পর্যন্ত মামলার আওতাভুক্ত সর্বমোট ১ হাজার ৮শত মোটর সাইকেল আটক করে পুলিশ।
এরমধ্যে লাইসেন্সবিহীন অনটেষ্ট মোটরসাইকেল রয়েছে ৭ শতাধিক। বিধিমতে আটক ওইসব মোটরসাইকেল মালিকরা লাইসেন্সসহ প্রাসঙ্গিক আইনসিদ্ধ কাগজপত্র তৈরি করে পুলিশের কাছে উপস্থাপন পূর্বক নির্ধারিত জরিমানার টাকা পরিশোধ পূর্বক আটক মোটরসাইকেল ফেরত পাওয়ার আবেদন করবেন।
আবেদনের সাথে সংযুক্ত কাগজপত্র যাচাইবাছাই করে সঠিক প্রতীয়মান হলে পুলিশ হেফাজতে থাকা গাড়িটি আবেদনকারীকে ফেরত দেওয়া হয়। এছাড়া পুলিশ হেফাজত থেকে আটক মোটরসাইকেল বৈধ প্রক্রিয়ায় মুক্ত করার কোন বিধান নেই।
অভিযোগ উঠেছে, কুষ্টিয়া জেলা ট্রাফিক পুলিশ অফিসের কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক টি আই- ওয়ান ফকরুল ইসলামের যোগসাজশে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করে আটক মোটরসাইকেল মালিকদের গাড়িটি ফেরত দেয়ার তথ্য ফাঁস হয়েছে।
ট্রাফিক অফিসের ফকরুল একটি ভুয়া অফিসিয়াল ডেটা শিট প্রস্তুত করে সেখানে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া মোটরসাইকেলগুলোর বিপরীতে একটি করে ভুয়া নম্বর সংযোজন করে তার বিপরীতে মামলার ধরণ ভিত্তিতে ২ হজার ৫শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারিত জরিমানা টাকা পরিশোধ দেখানো হয়।
এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কুষ্টিয়া ট্রাফিক অফিসের টিআই ওয়ান পুলিশ পরিদর্শক ফকরুল ইসলাম।
কুষ্টিয়া ট্রাফিক অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মাসে জেলা সদরসহ ৭টি থানা এলাকায় আটককৃত ১ হাজার ৮শ টি বাইক লাইসেন্স বিহীনসহ নানা বিধি ভঙ্গের কারণে অভিযোগ দিয়ে মামলা দেয়া হয়। টি আই ওয়ানের নেতৃত্বে এসব মামলাগুলি যথাক্রমে এসআই আব্দুস সবুর করেন ৩১৩টি, এসআই সুব্রত কুমার গাইন করেন ২৯০টি, সার্জেন্ট রাসেল আহমেদ ২৮০টি, সার্জেন্ট আমিরুল ইসলাম ২৪৫টি, সার্জেন্ট মোস্তাক আহমেদ ২৩২টি, সার্জেন্ট মিজানুর ১৯৪টি, সার্জেন্ট নুরে আলম ১৩২টি এবং সার্জেন্ট এইচ এম সাজিদ হোসাইন ১১৭টি মামলা করেন।
কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ গ্রামের হায়দার আলীর অভিযোগ, গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি কুষ্টিয়ার মজমপুর এলাকা থেকে ট্রাফিক পুলিশ আমার লাইসেন্স বিহীন অনটেষ্ট মোটরসাইকেল আটক করে। কোন প্রকার কাগজপত্র বা রিসিট না দিয়েই আমাকে মজমপুর ট্রাফিক অফিসে যোগাযোগ করতে বলে পুলিশ। পরে সেখানে গেলে দেখতে পায় মুন্সির টেবিলে লাইন ধরে লোকজন টাকা দিচ্ছে। কোন প্রকার রিসিট ছাড়াই প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। আমিও টাকা দিলাম গাড়ি ছাড়ানোর জন্য কিন্তু রিসিট চাওয়াতে মুন্সিসহ ওই অফিসের আরও তিন চারজন পুলিশ আমার উপর চরম ক্ষেপে যায় এবং আমার সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে অফিস থেকে বের করে দেয়। পরে আমর বাইকটি ছাড়িয়ে এনে রাগে ক্ষোভে দু:খে আমার বাইকটি আবার শো-রুমে ফেরত দিলাম। উনারা টাকাও নেবেন আবার দুর্ব্যবহার করাটাও নিত্যদিনের ঘটনা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কুষ্টিয়া ট্রাফিক অফিসের টিআই ওয়ান পুলিশ পরিদর্শক ফকরুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্স বিহীনসহ নানা কারণে আটক মোটরসাইকেল কোনোভাবেই টাকা পয়সার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) পলাশ কান্তি নাথ অভিযোগ নাকচ করে বলেন, এসব নম্বরগুলিকে ভুয়া নম্বর বলার কোন সুযোগ নেই। কারণ পুলিশ যখন কোন নম্বর বিহীন গাড়ি আটক করে তখন সেইসব গাড়িগুলির মামলা দিতে হলে আমাদের ব্যবহৃত সফট ওয়ারে এন্ট্রি করার ক্ষেত্রে যে কোন একটি নম্বর ব্যবহার করতে হয়। এখানেও সেটাই করা হয়েছে। তাছাড়া টাকা পয়সার বিনিময়ে বৈধ কাগজপত্রসহ নির্ধারিত জরিমানা পরিশোধ ব্যতীত আটক কোনো গাড়ি অবমুক্ত করার কোন বিধান নাই।
ইএইচ