ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ০২:২১ পিএম
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ০২:২১ পিএম
রৌদ্রের প্রখর তাপে হাঁসফাঁস জনজীবন। সেই তাপেও খুশিতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ভুট্টা চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে ভালো হয়েছে ভুট্টার ফলন।
অপরদিকে বাজারে মিলছে ভুট্টার ভালো দাম। সব মিলিয়ে আনন্দে আত্মহারা ভুট্টা চাষিরা। তবে উল্টো চিত্র ইরি ধান চাষির। রোদের প্রখর তাপে পুড়ছে ধানের জমি। জমিতে সেচ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের। বৈদ্যুতিক লোডশেডিং এবং জমিতে সেচ দিতে সিরিয়ালে নেওয়ার ঝামেলায় দুশ্চিন্তায় ধান চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য বলছে, চলতি মৌসুমে ঘোড়াঘাট উপজেলায় ১ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১২ মেট্রিক টন।
অপরদিকে ধানচাষে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার ১২৬ হেক্টর। উৎপাদিত ধান থেকে চাল উৎপানের লক্ষ্যমাত্রা হেক্টর প্রতি সাড়ে ৩ মেট্রিক টন। দুটি ফসলেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে এই উপজেলায়।
সরেজমিনে সোমবার সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিস্তৃত ফসলের মাঠে জমি থেকে ভুট্টা ভাঙতে ব্যস্ত চাষি ও শ্রমিক। নানা বয়সী নারী-পুরুষ গাছ থেকে ভুট্টা ভাঙছেন। কেউবা ভুট্টার খোসা ছড়িয়ে বস্তায় ভরছেন। বস্তায় ভর্তি এসব ভুট্টা জমি থেকে চলে যাচ্ছে চাতালে অথবা কৃষকের বাড়ির আঙিনায়।
অপরদিকে সেচযন্ত্রের ঘরে পানির জন্য ঘোরাফেরা করছেন ধান চাষি। নিজের ধানের জমিতে পানি নেওয়ার জন্য নিজের সিরিয়াল কখন আসবে, তা জানতে অপেক্ষার কোন কমতি তাদের।
কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। আশানুরূপ দাম পাওয়ার পাশাপাশি ভুট্টা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না কৃষককে। খুচরা ও পাইকারি ক্রেতা এবং বিভিন্ন কোম্পানি সরাসরি কৃষকের কাছে থেকে ভুট্টা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে কাঁচা ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে মণ প্রতি ৯১০ থেকে ৯৫০ টাকা দরে।
অপরদিকে শুকনা ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে মণ প্রতি ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত। এদিকে রোদের প্রখর তাপ এবং তীব্র তাপদাহে নুয়ে পড়ছে ধান গাছ। জমি শুকিয়ে যাওয়ায় এক সপ্তাহ পরপর দিতে হচ্ছে পানি। তবে অগভীর সেচপাম্প থেকে পানি দিতে নিতে হয় সিরিয়াল। যথাসময়ে সিরিয়াল না মেলায় এবং বিদ্যুতের যাওয়া আসা খেলায় ধানের জমিতে পানি দেওয়ার কাজ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ঘোড়াঘাট পৌরসভার মহুয়ারবাগ গ্রামে সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে পালোয়ান জাতের ভুট্টা এবং পুঁইয়াগাড়ী গ্রামে ৮ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছে আজগর আলী (৮৫)। বলেন, সবার জমিতেই ভুট্টার ভালো ফলন হয়েছে। আমি রোববার ৯২০ টাকা মণ দরে কাঁচা ভুট্টা বিক্রি করেছি। আজকেও শ্রমিকরা আমার জমির অবশিষ্ট ভুট্টা ভাঙছে। গড়ে বিঘা প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ মণ ভুট্টা হবে। তবে ধানের জমি নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে জমিতে ঠিকমতো পানি দিতে পারছি না।
এদিকে ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান বলেন, এই উপজেলায় ভুট্টার ভালো ফলন হয়েছে। ধানের ফলনও ভালো হবে বলে আশা করা যায়। তীব্র গরম হলেও, ধানে চাষে আমরা এখনও নিরাপদ অবস্থানে আছি। ধানের জমিতে নিয়মিত সেচ দিতে আমরা কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। ধান গাছের গোড়ায় পানি থাকলে গরমেও ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।
ইএইচ