কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
মে ৩, ২০২৪, ০৫:১৪ পিএম
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
মে ৩, ২০২৪, ০৫:১৪ পিএম
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফের মহানুভবতায় রৌমারী উপজেলার দুর্গম উত্তর আলগার চরের স্কুলছাত্রী কবিতা তার জীবন ফিরে পেয়েছে।
জেলা প্রশাসকের এমন মাহানুভবতার জন্য কবিতার মা-বাবাসহ সারা জেলার মানুষ জেলা প্রশাসকের প্রশংসা এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।
রৌমারীর বকবান্দা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী কবিতা বেগম (১৪)। তার বাবা দিনমজুর আইয়ুব আলী। অভাবী সংসার তাদের। কবিতার চার বোনের মধ্যে সে ছোট। প্রায় ১৫ দিন থেকে পেটের তীব্র ব্যথায় ভুগছিল সে। গ্রাম্য ডাক্তার ও রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিলেও কোন কাজ হয়নি।
গত শনিবার সকাল থেকে তীব্র পেট ব্যথার মধ্যেই তার বাবা আইয়ুব আলী মেয়েকে নিয়ে কুড়িগ্রামে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। গ্রামবাসী তার এক চাচাতো ভাই মোটরসাইকেলে রৌমারী ঘাটে পৌঁছে দেয় তাদের। সেখানে বাবা-মেয়ে কুড়িগ্রামগামী নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ঘাটপারে কবিতা তীব্র পেটের ব্যথায় কাতরাছিল। ঘাটের লোকজন কবিতার শারীরিক অবস্থা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। নৌকা ছাড়ার কোন উপায় নেই। কিন্তু তাকে দ্রুত কুড়িগ্রাম হাসপাতালে পৌঁছতে হবে।
ঠিক ওই সময় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ রৌমারী উপজেলায় তার দাপ্তরিক কাজ শেষে কুড়িগ্রাম সদরে ফিরছিলেন। তিনি রেীমারি ঘাটে এসে কবিতার সংকাটাপন্ন অবস্থা দেখতে পান। ঘাটের মানুষরা তাকে ভীর করে আছে। তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তার স্পিডবোটে কবিতা ও তার বাবাকে উঠিয়ে নিয়ে কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মাত্র ২৫ মিনিটের মধ্যে চিলমারী ঘাটে পৌঁছালে তিনি তাকে তার গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে আধাঘণ্টার মধ্যে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং তার চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নেন। শুরু হয় কবিতার চিকিৎসা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের টানা তিন দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসার পর ধীরে ধীরে কবিতা সুস্থ হয়ে উঠে। চারদিন কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে চিকিৎসার পর অবশেষে সুস্থ হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কবিতা বাবার সাথে বাড়িতে ফিরে গিয়েছে।
জেলা প্রশাসকের এমন মাহানুভবতার জন্য কবিতার বাবা-মা সহ সারা জেলার মানুষ জেলা প্রশাসকের প্রশংসা করছে।
কবিতা সুস্থ হয়ে জানায়, আমি গ্রাম ডাক্তার ও রৌমারী হাসপাতালে চিকিৎসা করেও কোন লাভ হয়নি। আমরা গরীব বলে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে দ্রুত আসতে পারিনি। তবে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মহানুভবতার কারণে আজ আমি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি।
কবিতার বাবা আইয়ুব আলী জানান, আমি দিনমজুরি করে সংসার চালাই। কবিতা কয়েকদিন থেকে পেটের ব্যথায় অসুস্থ হলেও টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করতে পারিনি। সেদিন যদি জেলা প্রশাসক স্যার আমার মেয়ের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না নিতেন তাহলে পথেই সে মারা যেতো। সে টানা দুই সপ্তাহ থেকে খুবই অসুস্থ ছিল।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আর এম ও ডা. শাহিনুর রহমান শাহীন জানান, গত চারদিন থেকে কবিতার বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করিয়েছি। তার শরীরে বড় কোন সমস্যা ধারা পড়েনি। ও কয়েকদিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, আমি এবং পুলিশ সুপার রৌমারী থেকে কুড়িগ্রাম আসার পথে দেখতে পাই রৌমারী ঘাটে কবিতা খুবই পেট ব্যথায় কাতরাচ্ছিল। এই অবস্থায় তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য আমার সাথে কুড়িগ্রাম নিয়ে আসি। এবং তার চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার গ্রহণ করেছি। কবিতা সুস্থ হয়ে বাড়ি যাওয়াতে আমি খুব খুশি। সরকারি কাজের বাহিরে এই মানবিক কাজ করে আমিও খুব খুশি।
ইএইচ