আশরাফুল ইসলাম তুষার, কিশোরগঞ্জ
মে ৪, ২০২৪, ০৪:৪২ পিএম
আশরাফুল ইসলাম তুষার, কিশোরগঞ্জ
মে ৪, ২০২৪, ০৪:৪২ পিএম
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে এক পরিবহন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সরকারি জায়গা দখল করে দেয়াল নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।
করিমগঞ্জ পৌরসভার ব্যাপারী পাড়া মোড় এলাকায় কিশোরগঞ্জ-চামড়া মহাসড়কের ঘেঁষে সড়ক ও জনপদের জায়গায় প্রশস্ত দেয়াল নির্মাণ করেছেন দেলোয়ার হোসেন চুন্নু (৫০)। এতে পশ্চিম নয়াকান্দি গ্রামের মানুষ মহাসড়কটিতে উঠতে পারছে না। চলাচলের বিকল্প রাস্তা না থাকায় সড়কের পাশে থাকা গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
এর আগে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি গ্রামের পানি নিষ্কাশনের দুটি কালভার্ট বন্ধ করে দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করায় তার বাড়ির উত্তর পাশের অন্তত একশ পরিবার বর্ষায় পানিবন্দি অবস্থায় থাকছে। এখন বাড়ির সামনে এই দেয়াল নির্মাণ করায় বর্ষায় গ্রামের আরও একশ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন চুন্নু উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের বৈরাটিপাড়া গ্রামের মৃত মন্নাফের ছেলে। ২০১২ সালে তিনি পশ্চিম নয়াকান্দি গ্রামে এসে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে বিশাল বাড়ি করেন।
পশ্চিম নয়াকান্দি গ্রামবাসীর অভিযোগ, প্রায় ৩০-৪০ বছরের মানুষের চলাচলের পুরানো রাস্তা আটকে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছেন দেলোয়ার হোসেন চুন্নু। এতে গ্রামের প্রায় এক তৃতীয়াংশ পরিবারের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামের অন্য অংশের লোকেরা দীর্ঘ রাস্তা ঘুরে বাইরে বের হতে পারলেও দেয়ালের পিছনের পাড়ার লোকজন মহাবিপদে পড়েছেন।
বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় পৌরসভার মেয়র, করিমগঞ্জ থানা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
শুক্রবার দুপুরে পশ্চিম নয়াকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, যে জায়গায় দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে এর পিছনে ১০-১৫ জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। তাদের কারো হাতে বাজারের ব্যাগ, কারো হাতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র, সঙ্গে পরিবারের অসুস্থ সদস্য। কেউ সড়কে চায়ের দোকানে যাবেন বলে বেরিয়ে ছিলেন। যেতে পারছেন না। সবার চোখে মুখে হতাশা।
এদিকে দেয়ালে ইট বসিয়ে এটিকে আরও উঁচু করছেন কয়েকজন রাজমিস্ত্রি। ট্রাক্টর দিয়ে আনা হচ্ছে ইট-বালু। জানা গেছে, ওরা চুন্নুর লোক। গ্রামের দীর্ঘ রাস্তা ঘুরে গিয়ে কথা হয় দেয়ালের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামের ভুক্তভোগী লোকজনের সঙ্গে।
ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম নান্নু বলেন, এলাকার বাচ্চু মিয়ার কাছ থেকে কিছুদিন আগে আড়াই শতাংশের মতো জায়গা কেনেন দেলোয়ার হোসেন চুন্নু। এই জায়গার সূত্র ধরে তিনি সরকারি সড়কের জায়গাজুড়ে ইট দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ শুরু করেছেন। বাড়ি থেকে বের হওয়ার বিকল্প রাস্তা বা পথ না থাকায় গ্রামবাসী মহাবিপদে পড়েছেন।
গ্রামের রমজান আলী বলেন, চুন্নু সাহেবকে পায়ে ধইরা কইছি আমরা, ভাই আমরারে একটু রাস্তা দেন। আমরা ৪০ বছর ধইরা এইহান দিয়া চলতাছি। সে আগে কইছে রাস্তা দিবো, এহন আরও ব্যারিক্যাড দিয়া দিতেছে। আমরা গরিব মানুষ। আমরা অসহায়। শক্তির জোরে সে আমরার রাস্তা বন্ধ কইরা দিয়েছে।
গ্রামের কলেজছাত্রী সীমা আক্তার বলেন, যে জায়গায় দেওয়াল তোলা হয়েছে, এই জায়গা দিয়েই সব সময় আমরা স্কুল-কলেজে যাওয়া আসা করি। রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় এখন আমাদের স্কুল কলেজে যেতে সমস্যা হচ্ছে। গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে আসছে। চুন্নু সাহেব প্রভাবশালী। জোর-জবরদস্তি করে তিনি রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছেন।
গ্রামের গৃহবধূ সেলিনা আক্তার বলেন, একটা সময় গ্রামে আমরা সবাই মিইল্লা-মিইশ্যা ভালাই ছিলাম। চুন্নু ভাই আইসা বাড়ি কইরা আমরার কপাল পুড়িয়েছে। চুন্নু ভাই যখন না আসছিন আমরা পানির তলে ডুইব্বা থাকতাম না। চুন্নু ভাই আইসা বিল্ডিং কইরা বাড়ি বান্ধনের সময় রাস্তাকে মাঝখানে রেখে বাড়ি বানছে। গ্রামের রাস্তা দখল করছে।
অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন চুন্নু চিশতী বলেন, আমি সরকারি জমিতে দেয়াল তুললে গ্রামবাসীর তাতে কি? সরকার আমাকে না করুক। গ্রামবাসী বাধা দেওয়ার কে? আমি দেয়াল তোলার কারণে সরকারের বরং আরও উপকার হয়েছে। সড়কের পাশের মাটি সরবে না। দেয়ালে আটকে থাকবে। আর গ্রামবাসী যে বলছে তাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটা, এটা ঠিক না। শুকনোর সময় কিছু মানুষ এই দিক দিয়ে চলাফেরা করলেও বর্ষার সময় সব মানুষ অন্যদিক দিয়ে চলাফেরা করে। আমি কারও রাস্তা দেব না।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাবদ্দীন এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রাস্তাটি বন্ধ থাকলে কয়েকশ মানুষের চলাচলে খুবই সমস্যা হবে। তাই জনগণের স্বার্থে আমার মেয়রকে সঙ্গে নিয়ে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করবো।
করিমগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. মুসলেহ উদ্দিন বলেন, পশ্চিম নয়াকান্দির লোকজন বিষয়টি আমাকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। জনগণের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে দেয়াল তোলা অবশ্যই অন্যায় কাজ। পৌরসভার পক্ষ থেকে বিষয়টা যতটুকু দেখার আমরা অবশ্যই দেখবো। আর কালভার্টের ব্যাপারটি অচিরেই দেখছি।
এ বিষয়ে করিমগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফারহানা আলী বলেন, আমি এখন স্টেশন লিভে আছি। অফিসে এসে আমি সরাসরি ঘটনাস্থলে যাব। সরকারি জায়গা দখল করে কেউ স্থাপনা নির্মাণ করে থাকলে সেটি উচ্ছেদ করে জায়গা উদ্ধার করা হবে। এরপর জনগণ যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।
ইএইচ/আরএস