Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০২ এপ্রিল, ২০২৫,

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত দক্ষিণাঞ্চল

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো

মে ২৮, ২০২৪, ০৫:৩৪ পিএম


ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত দক্ষিণাঞ্চল
  • গোটা বরিশাল ছিল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
  • বাড়ি-ঘরসহ কৃষি ও মৎস্য খাতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
  • বিভাগে লন্ডভন্ড হয়েছে অসংখ্য গাছপালা
  • এখনও পানিতে তলিয়ে রয়েছে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট
  • দক্ষিণাঞ্চলে এর আগে কখনও দেখা যায়নি এতো পানি
  • রিমাল হারমানিয়েছে সিডর-আইলা-নার্গিসকেও
  • ক্ষতিগ্রস্ত ও আশ্রয় নেওয়া মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ
  • পরিবারকে আর্থিক সহায়তা

ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে মুষলধারে বৃষ্টি ও জোয়ারে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে মাছের কয়েক হাজার ঘের ও লক্ষাধিক একর ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে খামারি ও চাষির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, এবারে ঝড়ের সময় যে প্লাবন হয়েছে তা দক্ষিণাঞ্চলে এর আগে কখনও দেখা যায়নি। আবার ঘূর্ণিঝড় রেমালের মতো দীর্ঘসময় ঝড়ের তাণ্ডব দেখেননি তারা। এ ঝড় রাত কাটিয়ে গোটা দিনের অর্ধেকের বেশি সময় অর্থাৎ ১২-১৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দক্ষিণাঞ্চলে প্রভাব খাটিয়েছে। যা সিডর, আইলা, নার্গিসের সময়ও এমনটা লক্ষ্য করা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে। 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপক‚লীয় অধ্যয়ন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলন, গত ২০ বছর পূর্বেও বর্ষার সময়েই ৮০ ভাগ বৃষ্টিপাত হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমান আমরা শীতকালেও বৃষ্টিপাত হতে দেখছি। তিনি বলেন, বছরে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে যে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা তার ২০ শতাংশও হয়নি। তবে সংরক্ষণে থাকা শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ঘূর্ণিঝড় রিমালে। ফলে ঝড়ের সময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে ঝড়ের সময়ে স্বাভাবিক নিয়মে সাগরের পানি ফুলে ফেঁপে উঠে, তেমনি নদ-নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যায় এটাও ঠিক। সবমিলিয়ে জোয়ারের সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টিপাত প্লাবনের পানির উচ্চতা বাড়িয়েছে বলে মত দেন তিনি। 

এদিকে, ঝড়ের দীর্ঘ স্থায়িত্বের কারণে প্লাবনের সময়টা দীর্ঘ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্লাবিত এলাকার পানি নেমে গেছে। তবে তবে বরিশাল নগরের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখানে অপরিকল্পিত নগরায়ণ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। একই কথা জানিয়েছেন বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম। তিনি বলেন, ঝড়ের কারণে স্বাভাবিক জোয়ারের সময়েই নদ-নদীতে পানির উচ্চতা বিপৎসীমা অতিক্রম করেছ। তার ওপরে মুষলধারে বৃষ্টি থাকায় প্লাবিত এলাকায় পানির উচ্চতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণাঞ্চলের মেঘনা, বুড়িশ্বর, বলেশ্বর, তেঁতুলিয়া, বিশখালী, কচা, কীর্তনখোলা নদীসহ বেশিরভাগ নদীর পানি ঝড়ের দিন সর্বোচ্চ বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো কোনো নদীর পানি বিপৎসীমার ৫-৮ ফুট উচ্চতা অতিক্রম করে প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ১৪০ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা স্বল্প সময়ে বেশ ভালো পরিমাণের বৃষ্টিপাত। এদিকে বরিশালে গত কাল সকাল থেকে মধ্যরাত কখনো মুষলধারে আবার কখনো অল্প বৃষ্টি হয়েছে দেয়াল ধসে ও গাছের ডাল ভেঙে পড়ে বরিশালে তিনজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ,সেই সঙ্গে ছিল দমকা হাওয়া। 

এদিকে রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল নয়টা পর্যন্ত বরিশাল ছিল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। ফলে মোবাইল নেটওয়ার্কও ধীরে ধীরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর বরিশাল জেলায় ২৫৫ টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ২ হাজার ৬৮৫ টি ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া মোট ৫৪১ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রায় ২৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তবে বাড়ি-ঘরসহ কৃষি ও মৎস্য খাতের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তাতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

অপরদিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে গোটা বরিশাল বিভাগে লন্ডভন্ড হয়েছে অসংখ্য গাছপালা। শহর ও গ্রাম মিলিয়ে পানিবন্দি আছেন অনেক মানুষ। ফসলি জমি, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে রয়েছে এখনও। বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপরে পড়েছে, যা অপসারণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া এখনও বটতলার নবগ্রাম সড়ক, মুন্সি গ্যারেজ, কীর্তনখোলা নদী, বঙ্গবন্ধু কলোনি, ভাটিখানা সড়ক, ওসমান খান সড়ক, জুমির খান সড়ক, ধান গবেষণা রোডসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। 

অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও আশ্রয় নেওয়া মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার রাতে বরিশাল নগরের সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আশ্রয়কেন্দ্রে ও বরিশাল অডিটোরিয়ামে আশ্রয় নেওয়া মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে বিতরণ অব্যাহত থাকবে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের এ খাদ্যসহায়তা চলমান থাকবে। তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বরিশালে দেয়াল ধসে দুজনের মৃত্যু ও বাকেরগঞ্জে এক জনের মৃত্যুর ঘটনায় তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

আরএস

 


 

Link copied!