Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

ভবন দখল করতে তাণ্ডব: আসামিদের গ্রেপ্তারে আদালতের নির্দেশ

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

জুন ৩, ২০২৪, ০৯:৫৬ এএম


ভবন দখল করতে তাণ্ডব: আসামিদের গ্রেপ্তারে আদালতের নির্দেশ

ফেনীর দাগনভূঞা পৌর শহরের হাসপাতাল রোডের অভিরামপুর এলাকায় ৫ তলা ভবন দখল করতে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এরপর ভবনটির মালিক আবদুল গফুর ভূঞা মারা যাওয়ার পর ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।

নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, ক্যান্সার আক্রান্ত গফুর ভূঞা ওইদিনের ঘটনায় হামলার শিকার হন। এরপর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরবর্তীতে ঢাকায় নেয়ার পথে তিনি মারা যান।

রোববার নিহতের ছেলে রিয়াদ হোসেন বাদী হয়ে ফেনীর জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে দাগনভূঞা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামারপুকুরিয়া গ্রামের মকবুল আহমেদের ছেলে জয়নাল আবেদীন মামুন (৫০) সহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে এ ঘটনায় একটি সিআর মামলা দায়ের করেন।

দাগনভূঞা আমলী আদালতের পেশকার জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিচারক ফারহানা লোকমান মামলার বাদীকে পরীক্ষা করে দাগনভূঞা থানাকে মামলাটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু ও আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ প্রদান করেন।

এর আগে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, দাগনভূঞা উপজেলার সদর ইউনিয়নের জগতপুর এলাকার কাতার প্রবাসী আবদুল গফুর ভূঞা প্রায় ১৫ বছর আগে স্থানীয় পৌর শহরের হাসপাতাল রোডের পলাশ চন্দ্র সাহার কাছ থেকে ৬ শতক জায়গা কেনেন।

ওই জায়গায় ২০১৩ সালে ৫ তলা ভবন নির্মাণ করেন। ২০২৩ সালে কাতার থেকে দেশে ফেরেন গফুর ভূঞা। ইতিমধ্যে পলাশ চন্দ্র সাহার ভাগ্নে সয়েল সাহা নিজেকে ওই জায়গার মালিক দাবি করেন। তার কাছ থেকে জায়গাটির আমমোক্তারনামা নেন ইকবাল। সে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবদীন মামুনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।

মৃত্যুর আগে বৃহস্পতিবার গফুর ভূঞা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময় ওই বাড়ি থেকে তিনি ও তার পরিবারকে উচ্ছেদ, বাড়িটি দখলে নিতে হুমকি-ধামকি দেন চেয়ারম্যান মামুন। বিষয়টি নিয়ে তারা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর শরণাপন্ন হয়েছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানায়, বুধবার দুপুরে ৪০-৫০ জন যুবক ভূঞা ম্যানশনে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা প্রথমে সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। এরপর সবকটি মিটার ভেঙে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ও পানির মোটর খুলে নিয়ে যায়। নিচতলার বাসার বাইরে দরজা আটকিয়ে দ্বিতীয় তলায় গফুর ভূঞার বাসায় হানা দেয়। কিছু বুঝে উঠার আগেই গফুর ভূঞা, তার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, পুত্রবধূ ও দেড় বছর বয়সী নাতনিকে বেদম মারধর করে। এ সময় আসবাবপত্র ভাঙচুর ও তাদের ব্যবহৃত সবকটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।

বৃহস্পতিবার বিকালে বাসায় মেয়ে ও পুত্রবধূর সামনেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আবদুল গফুর ভূঞা। তিনি বলেছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে তার পরিবারকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ এবং জায়গাটি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজাপুরের চেয়ারম্যান মামুন তাদের বাড়ি ছেড়ে দিতে বারবার হুমকি দিচ্ছেন। বারবার হামলা হয়েছে। মামুনের নির্দেশে বুধবার অসংখ্য পোলাপান হামলা চালিয়েছে। 
আবদুল গফুর ভূঞার ছেলে রিয়াদ হোসেন রাজু জানান, হামলার ঘটনায় থানায় গেলে পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। আদালতের রায় তাদের পক্ষে থাকলেও হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় আইনের তোয়াক্কা করছে না। অব্যাহত হুমকির মুখে তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।

দাগনভূঞা থানার ওসি আবুল হাসিম জানান, ভোটের দিন ঘটনা জেনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। শনিবার ওই বাড়ির মালিক গফুর ভূঞা মারা গেছেন। এছাড়া আদালতের আদেশের বিষয়টি শুনেছি। তবে, লিখিত কোন কিছু এখনও হাতে পাইনি। আদেশের কপিটি হাতে পাওয়ার পরই এব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিবেদিতা চাকমা বলেন, আদালতের রায় থাকলেও জোর করে উচ্ছেদের কোন সুযোগ নেই। ভূমির মালিক হলে দখলদারদের উচ্ছেদ করে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মালিকগণ দখল বুঝে নিতে হয়।

দাগনভূঞা পৌর শহরের হাসপাতাল রোডের ভূঞা ম্যানশনে হামলার ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবদীন মামুন। ভূঞা ম্যানশনের মালিক আবদুল গফুর ভূঞা ঘটনার পর পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার জন্য মামুনকে দায়ী করেন। এর আগে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারিসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করেন।

কিন্তু ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন জয়নাল আবদীন মামুন। তার দাবি, কারো প্ররোচনায় গফুর ভূঞা তার নাম বলেছেন। এছাড়া গফুর ভূঞার প্রতিপক্ষ সয়েল সাহা থেকে আমমোক্তারনামা গ্রহণকারী ইকবাল মামুনের ঘনিষ্ঠ নয় বলে দাবি করেন তিনি। তবে গফুর ভূঞার সাথে জায়গা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত থেকে মামলার রায় সয়েল সাহার পক্ষে পেয়েছেন এমনটি তিনি জেনেছেন। এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত না হতে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ জানান।

ইএইচ

Link copied!