মিরাজ আহমেদ, মাগুরা
জুন ৩০, ২০২৪, ০৫:৫২ পিএম
মিরাজ আহমেদ, মাগুরা
জুন ৩০, ২০২৪, ০৫:৫২ পিএম
মাগুরা জেলার ঐতিহ্যবাহী কুমার নদী এখন পানিশূন্য আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় কৃষক চলতি মৌসুমে ভালো ফলনের আশায় পাট রোপণ করেছেন। এমনকি মাঝ নদীতে পাট চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন গাছ, নেপচুন ঘাস এবং সবজি চাষের পাশাপাশি খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মাগুরা সদর ও শ্রীপুর উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদীটি সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে গেছে। এলাকাজুড়ে নদীর মধ্যে চাষ হচ্ছে ধান, পাট, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের। অথচ এক সময় কুমার ও নবগঙ্গা নদীতে বড় বড় স্টিমারসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচলের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে নদী দুটির বাণিজ্যিক গুরুত্ব একেবারে নেই। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অনেক স্থানে মানুষ রীতিমতো চাষাবাদ করছেন। নদী কোন কোনো অংশ খেলার মাঠ হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।অপর দিকে নদীর জমি দখলে চলছে হিড়িক।
নদীটি সংস্কার না হওয়ার ফলে সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। তেমনি নদীর খাস জমি দখল করে নিচ্ছেন ভূমিদস্যুরা। নদীর স্থান বেঁধে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দুর্বৃত্তরা জমি দখলে মেতে উঠেছেন।
কুমার নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চুয়াডাঙ্গা জেলা, কুষ্টিয়া জেলা, ঝিনাইদহ জেলা ও মাগুরা জেলায় অবস্থিত অন্যতম নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১২৪ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭৫ মিটার।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক কুমার নদের প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ১০, কুমার ও নবগঙ্গা নদীর খনন কাজ নেই বললেই চলে। ফলে নদীটিতে জেগে ওঠা চর অপসারণ সম্ভব না হওয়ায় নৌ চলাচল যেমন ব্যাহত হেচ্ছে, তেমনি তীরবর্তী অনেক এলাকায় ফসলি জমিতে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য মাগুরা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস থেকে নদী দীর্ঘ দিনেও আলোর মুখ দেখেনি।
নদী তীরবর্তী খোকন শেখ বলেন, আমাদের মতো কর্মজীবী মানুষের জীবিকা উপার্জন খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। বাইরে থেকে মাছ কিনে নিয়ে এসে বিক্রি করি হাট-বাজারে, নদীতে কোন পানি নেই। লোকজন রীতিমতো চাষ করছে।
মাগুরা পওর বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ইরিগেশন খাল অধিগ্রহণকৃত জমির বিবরণ, জিকে সেচ প্রকল্প ২৫৮৪.৮৫ একর, কালিদাসখালী-আড়পাড়া উপ প্রকল্প ৬০৫.০৬ একর, বামন খালি বর্ণালি উপ প্রকল্প ২৪৭.২২ একর, মধুমতি নবগঙ্গা উপ প্রকল্প ৫৬৮.৫৭ একর, পদ্মা হাওর উপ প্রকল্প ৩ একর, সাগর খালি বড় বিলা নিষ্কাশন প্রকল্প ৪.৫৪ একর জমিসহ সর্ব মোট ৪০১৩.২৪ একর জমির মধ্যে ব্যবহৃত জমির পরিমাণ রয়েছে ৩৭২২.৮৪ একর। এরমধ্যে ৩২ একর জমি জেলা প্রশাসক মাগুরা ২০০০ সালে একতরফাভাবে রিজিউম করে নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমার নদীর ৬ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে ২৪ কোটি ৬১ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যায়সহ প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়। খনন কাজ সমাপ্ত করার সময় ধরা হয় ২০১৩ সালের জুন মাস। এছাড়া নবগঙ্গা নদী ৬ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য ২০১৫ সালের জুলাই মাসে ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ৮৩ টাকা ব্যায়সহ একই প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাব পাঠানো হয়। এটির কাজ শেষের সময় সীমা ধরা হয় ২০১৬ সালের জুন মাস। কিন্তু কুমার নদী খননের প্রকল্প প্রস্তাবটি গত ৪ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। একইভাবে নবগঙ্গা নদী খননের প্রকল্প এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
এ বিষয়ে রোববার দৈনিক আমার সংবাদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্বাহী প্রকৌশলী পওর বিভাগ মাগুরা সারোয়ার জাহান সুজন বলেন, ছোট্ট নদী খাল প্রকল্পের আওতায় এনে নবগঙ্গা, কুমার, ফটকি, চিত্রা নদী খননের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মাগুরাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা ঝিনইদাহ ও চুয়াডাঙ্গার মৃতপ্রায় নদীগুলো একই সাথে খনন না করা হলে নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে না নদীগুলো। যেমন নবগঙ্গা নদীর পূর্ণ খনন প্রকল্প প্রস্তাবিত হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাগুরা শহরের ১১ কিলোমিটার। নদী খননে ইতিমধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ২৫ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এ সকল নদীকে পুনরায় সবল করতে একি সাথে এ জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার নদী খননের গুরুত্ব অপরিসীম তাছাড়া খননে মিলবে না কোন সুফল।
ইএইচ