Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

সৈয়দপুরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে ভেজাল চিপস

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি

জুলাই ১, ২০২৪, ০৩:৫৯ পিএম


সৈয়দপুরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে ভেজাল চিপস

নীলাফামারীর সৈয়দপুর শহরের প্রায় ১০-১২ স্পটে প্রকাশ্যেই তৈরি হচ্ছে শিশুদের লোভনীয় ভেজাল চিপস। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কি কি উপাদান দিয়ে এসব চিপস তৈরি করা হচ্ছে তা কেউ জানে না।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তৈরিকৃত চিপসে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক রঙ মেশানোর খবর জেনেও কেন নিশ্চুপ তা অনেকের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবাসিক এলাকার মধ্যে পরিবেশের কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে ওইসব চিপস কারখানা। দীর্ঘদিন ধরে নোংরা পরিবেশে ও ক্ষতিকারক রঙ মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে চিপস। আটা-ময়দার সঙ্গে অপরিশোধিত লবণ, কাপড়ের রঙ মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে রিঙ চিপস।

আবার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খোলা মাঠে রোদে শুকিয়ে প্যাকেট জাত করে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। আর শিশুরাই ওইসব চিপসের প্রধান ভোক্তা।

স্থানীয়রা জানান, সৈয়দপুর শহরের ২-৩টি চিপস কারখানা ছাড়া কোন কারখানায় কখন চিপস তৈরি করা হচ্ছে তা অনেকেই জানতে পারে না। কারণ মাঝ রাতেও কারখানা চলার নজির আছে। প্রশাসনের চোখের সামনেই দিনে ও রাতে চিপস বানিয়ে অন্যত্র বিক্রি করছেন কারখানার মালিকরা।

সৈয়দপুর শহরের সুলতানুল উলুম মাদরাসা সংলগ্ন একটি চিপস কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, এ কারখানার বিএসটিআই অনুমোদন ছাড়াই কারখানার খোলা আকাশের নিচে নানা রঙের রিং চিপস রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। চারদিক থেকে ধুলাবালি এসে পড়ছে। শ্রমিকেরা পায়ে ঠেলে রিঙ চিপস রোদে শুকাচ্ছেন। সেখানে দুর্গন্ধযুক্ত পানি ব্যবহার হচ্ছে ওই চিপস তৈরিতে।

শুধু তাই নয়, চিপসের কাঁচামাল তৈরি করার সময় শ্রমিক পোশাক ছাড়াই খালি হাতে তা তৈরি করছেন। চিপস তৈরির মেশিনের নিচেই স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা দেখা গেছে। তার পাশে দুর্গন্ধযুক্ত একটি বালতি ময়দা মাখানো পড়ে আছে। যেখানে আটা মাখানো হচ্ছে তার পাশে পড়ে রয়েছে সিগারেটের ছাই ও প্যাকেটসহ ময়লাযুক্ত স্যান্ডেল।

কারখানার এক কর্মচারী জানান, এভাবেই দীর্ঘ ৫-৬ বছর ধরে আমরা চিপস তৈরি করে আসছি। এতে আমাদের কেউ কোন বাধা দেয়নি। তবে বছর খানিক আগে প্রশাসন এসে জরিমানা করেছিলেন, কিন্তু এরপরেও মালিকের টনক নড়েনি।

শহরের চিপস ব্যবসায়ী হীরা ও গোপাল বলেন, ওইসব চিপস কারখানার মালিকদের ২-১ জন ছাড়া অনেকেরই প্রয়োজনীয় কোন কাগজপত্র নাই। শুধুমাত্র পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে রঙ মিশিয়ে চিপস উৎপাদন করছেন। বিএসটিআই পরিচয়দানকারী কিছু কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাত করে প্রকাশ্যেই চুটিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিশুদের স্বাস্থ্য হানি করে বনে যাচ্ছেন কোটিপতি।

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ওয়াসিম বারি জয় ও মেডিকেল ডিপার্টমেন্ট থেকে বলা হয়, ওইসব চিপস শিশুদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এই চিপস খেলে ডায়রিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, আলসারের মত রোগ হতে পারে। শিশুদের ডায়রিয়া হয়ে হতে পারে স্বাস্থ্য হানি।

এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা ভোক্তা অধিদপ্তর কর্মকর্তা (এডি) সামসুল আলম বলেন, জনবল সংকট থাকায় মাঝে মধ্যে অভিযান চালানো হয়। পর্যাপ্ত জনবল থাকলে প্রতিসপ্তাহেই বড় ধরনের অভিযান চালানো যেতো বলে জানান তিনি।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই আলম সিদ্দিকি বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি, অচিরেই ভোক্তা অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে অভিযান চালাবেন বলে জানান তিনি।

ইএইচ

Link copied!