Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪,

লাইব্রেরিতে আটকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি

জুলাই ৪, ২০২৪, ০৬:১৪ পিএম


লাইব্রেরিতে আটকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

বরগুনার পাথরঘাটায় সপ্তম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে লাইব্রেরিতে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ফয়সাল ও জুবায়ের নামের দুই যুবকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পরে লজ্জায় ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ভুক্তভোগীর বাবা সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বেলা সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চরদুয়ানী বাজারের মিনা লাইব্রেরি এন্ড কসমেটিক্স দোকানে এ ঘটনা ঘটে। পরে পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ী শাহাদত, লাবু ও মিলন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করেন।

অভিযুক্তরা হলেন, পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের উত্তর কাঠালতলী এলাকার মো. বেল্লাল হোসেনের ছেলে ফয়সাল, চরদুয়ানী ইউনিয়নের ছহেরাবাদ এলাকার মোশারফ এর ছেলে জুবায়ের এবং কাঠালতলী ইউনিয়নের তালুক চরদুয়ানী এলাকার মনির হোসেনের ছেলে ও লাইব্রেরি ব্যবসায়ী সাকিবুল ইসলাম হৃদয়।

সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জুন বৃহস্পতিবার সকালে ৮ম শ্রেণির মাদরাসাছাত্রী তন্নি তার বান্ধবীকে নিয়ে চরদুয়ানী বাজারের মিনা লাইব্রেরি এন্ড কসমেটিক্সের দোকানে কেনাকাটার জন্য প্রবেশ করে। সেখানে মুক্তা ও তন্নির পূর্ব পরিচিত জুবাইয়ের ও তার বন্ধু ফয়সাল লাইব্রেরিতে ঢুকে সাটার টেনে বন্ধ করে দেয়। পরে দোকানদার শাকিব তাদের ৪ জনকে ভিতরে রেখে বাহির থেকে তালা দিয়ে চলে যায়। সেখানে জোবায়ের স্কুল শিক্ষার্থীকে জোড় করে ধর্ষণ করে ভিডিও করে রাখেন।

পরে আবার ফয়সাল গিয়ে পূর্ণরায় তাকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি বেলা দেড়টার দিকে দিকে স্থানীয় যুবকদের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। পরে দোকানদার শাকিবকে তার দোকান খুলতে বাধ্য করে। এরপর ভিতরে ঢুকে স্কুলছাত্রীর মাস্ক খুলে বিভিন্ন মোবাইল দিয়ে ভিডিও ধারণ করে স্থানীয় কিছু যুবক। পরে এই ঘটনা নিয়ে সালিশ বৈঠক হবে স্থানীয়দের এমন সিদ্ধান্তে ওই দুই ছাত্রীকে তাদের অভিভাবক এনে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় জানাজানি হলে লজ্জায় দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বসতঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী শাহাদাত ফিটার জানান, দোকানের মধ্যে দুটি ছেলে ছিল তাদের মধ্যে ফয়সাল বিবাহিত, সে তন্নির প্রেমিক। এছাড়াও জুবায়েরের সাথে ভুক্তভোগীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে দিতে ফয়সাল ও তন্নির সহযোগিতা ছিল বলে জানান তিনি।

ভুক্তভোগীর মা বলেন, ওই দিন আমার মেয়ে বাড়ি থেকে সাড়ে ৯টার দিকে স্কুলে যায়। আমি জানতাম না এরকম ঘটনা ঘটেছে। দুপুরের দিকে জানতে পেরেছি। বাড়ি এসে আমার মেয়ে আমার কাছে লাইব্রেরিতে অটকে ধর্ষণ করে ভিডিও করে রাখার বিষয়ে বলে গেছে। লোকলজ্জার ভয়ে আমরা কারো কাছে কিছুই বলিনি। এ লজ্জা আমার মেয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। তিনি এর সুষ্ঠু বিচার চান।

মিনা লাইব্রেরি এন্ড কসমেটিকস ব্যবসায়ী শাকিব বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তাদেরকে ভিতরে রেখে বাহির থেকে দোকানে তালা দিয়ে পাথরঘাটা বাজারে আসেন, এর পরে কি হয়েছে তা তিনি কিছুই জানেন না।

অভিযুক্ত জুবায়েরের বাবা মোর্শারফ হোসেন জানান, এরকম একটি ঘটনার কথা আমি শুনেছি। যদি আমার ছেলে এরকমের কাজ করে থাকে তাহলে আমিও চাই তার উপযুক্ত বিচার হোক।

পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল মামুন জানান, এক স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যার একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে এর আগে কী ঘটেছিল তা কেউ পুলিশকে অবহিত করেনি। পরে ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। এখন ওই ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা ধর্ষণের অভিযোগ করছে। ধর্ষণের বিষয়টি ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসলে বলা যাবে। এবং রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ইএইচ

Link copied!