Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল-ডাল আত্মসাতের অভিযোগ

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুর প্রতিনিধি

জুলাই ৬, ২০২৪, ০৩:২২ পিএম


ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল-ডাল আত্মসাতের অভিযোগ

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ ও পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে (ভিজিডি কার্ডের) গরিবের চাল-ডালসহ বিভিন্ন উপকরণ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। উপকারভোগীদের পরিবর্তে চাল-ডালসহ বিভিন্ন উপকরণ যাচ্ছে চেয়ারম্যানের পকেটে।

ভুক্তভোগীদের নামে আসা সকল চাল, ডাল আত্মসাৎ করছেন চেয়ারম্যান নিজেই। বিষয়টি অনেকেই জানতে পেরে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। মাসের পর মাস সরকারি রিলিফের খাদ্য সহায়তা না পেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন পরিবারগুলো।

হতদরিদ্র কৃষক স্বামীর সংসারে সরকারি সহযোগিতা পেতে বিগত প্রায় দুই বছর আগে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দ্বারস্ত হয়েছিলেন রোকেয়া বেগম (৫২)। ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের কাছে আকুতি মিনতিতে পাঁচশ টাকার বিনিময়ে পেয়ে যান একটি ভিজিডি কার্ড। প্রথমবার সহযোগিতা পেলেও বন্ধ হয়ে যায় সেই ভাগ্যের দুয়ার। কেড়ে নেওয়া হয় তার সহায়তা কার্ড। এরপর তার নামে প্রতিবারই আসতে থাকে সরকারি চাল, ডালসহ বিভিন্ন উপকরণ কিন্তু একবারও পৌঁছেনি তার হাতে।

শুধু রোকেয়া বেগম নয়- এই ইউপিতে এমনই ৪০ জন ব্যক্তির নামে মাসের পর মাস আসতে থাকে সরকারি সহযোগিতা। তাদের মধ্যে অনেকেই জানেনই না তার নামে কার্ড ইস্যু হয়েছে। কিন্তু উপকারভোগীদের তালিকায় রয়েছে তাদের নাম। এই কার্ডের উপকারভোগীদের পরিবর্তে বরং সেই চাল-ডালসহ বিভিন্ন উপকরণ যাচ্ছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ৮ নং শেখর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ ও পরিষদের সদস্যদের পকেটে।

সরেজমিনে এমনই তথ্য ওঠে এসেছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে না গিয়ে নিজের ব্যক্তিগত অফিসকে ইউপি কার্যালয়ে রূপান্তরিত করেছেন।

ভিজিডি কার্ডের জন্য চেয়ারম্যানের কাছে নিজের ও স্বামী বিল্লাল শিকদারের ছবি দিয়েছিলেন রাখালতলী গ্রামের জোসনা বেগম। এরপর জানতে পারেনি তার নামে কার্ড ইস্যু হয়েছে। কিন্তু ভিজিডি কার্ডের তালিকায় ১২৩ নম্বরে নাম রয়েছে তার। এই নারী বলেন, আমাদের নাম ও ছবি নিয়েছিল কিন্তু আজও আমরা কিছু পাইনি। কার্ড হয়েছে কি-না তাও আমি বলতে পারব না।  

এই ভিজিডি কার্ডের তালিকায় নাম থাকা বারাংকুলা গ্রামের মো. দেলোয়ার কাজীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির চারদিকে টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা, ভেতরে আধাপাকা জোড় ঘর রয়েছে, দেখে মনে হবে না কোনো হতদরিদ্রের বাড়ি। অথচ ওই তালিকায় ১২৭ নম্বরে দেলোয়ার কাজীর স্ত্রী লিমা সুলতানার নাম রয়েছে।

বিষয়টি জানতে চাইলে দেলোয়ার কাজী হতভম্ব হয়ে পড়েন। তিনি জানেনই তার স্ত্রীর নামে ভিজিডি কার্ড রয়েছে। তিনি বলেন, আমার জানামতে কোনো কার্ড নেই। এমনকি কোনো সুবিধাও পাইনি। আমিতো কখনও আবেদনই করি নাই। আল্লাহ জানে কেমনে কী হয়েছে। এটা যে করেছে সে অবশ্যই অপরাধ করেছে।  

ব্যক্তিগত অফিসই পরিষদ, জনগণের ক্ষোভ :

উপজেলার ২৯টি গ্রাম নিয়ে গঠিত শেখর ইউনিয়ন। মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪৩ হাজার। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়টি ৮নং ওয়ার্ডের চরশেখর গ্রামে। গ্রামটি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এ গ্রামের নামেই নামকরণ করা হয়েছে ইউনিয়নের। ২০১০-১১ অর্থবছরে ইউনিয়ন কার্যালয়ের আধুনিকায়ন করে নির্মিত হয় দুই তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ইউনিয়ন কমপ্লেক্স ভবন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইউনিয়ন কমপ্লেক্স যেন এখন জরাজীর্ণ ও জনশূন্য একটি ভূতুড়ে ভবনে রূপান্তরিত হয়েছে। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর একদিনও সেখানে অফিস করেননি কামাল আহমেদ। এমনকি সেখানে কোনো কার্যক্রমই নেই। এই সুযোগে ভবনটিতে অনেকেই গরু ছাগল পালনের কাজে ব্যবহার করছে।

এসব বিষয়ে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামাল আহমেদের ব্যক্তিগত অফিস সহস্রাইল বাজারে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ইউপি সচিব বসে অফিস করছেন। এরপরই ওই ইউপি সচিব সেখান থেকে আড়াল হয়ে যান। এর কিছুক্ষণের মধ্যে উপস্থিত হোন চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে শেখর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ বলেন, আমার ও পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেন।

তিনি বলেন, কার্ড আত্মসাৎ করা কোনোভাবেই সম্ভব না। যতগুলো কার্ড রয়েছে প্রত্যেককেই দেওয়া হয়। যত মালামাল আসে সবই সঠিকভাবে বণ্টন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের ১০ কেজি চাল চেয়ারম্যান মেরে দেবে, এটা আমার মাথায় আসে না। আমার বরাদ্দের বেশি থেকেও মানুষকে দিয়ে থাকি। তিনি দাবি করে বলেন, এলাকায় দল পাল্লা থাকে, যে কারণেই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত হবে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের একজনকে কর্মকর্তাকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিবে। এতে তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইএইচ

Link copied!