Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

ঝালকাঠির কাগজি লেবুর চাহিদা সারা দেশে

এস.এম. পারভেজ, ঝালকাঠি

এস.এম. পারভেজ, ঝালকাঠি

জুলাই ৭, ২০২৪, ০৪:০৪ পিএম


ঝালকাঠির কাগজি লেবুর চাহিদা সারা দেশে

ঝালকাঠি জেলার ২২টি গ্রামের ৯২ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় সুগন্ধি কাগজি লেবু। ভিটামিন সি যুক্ত রসালো লেবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা ঝালকাঠিসহ সারাদেশের বাজার।

বাজারে বিভিন্ন জাতের লেবু বারোমাস পাওয়া গেলেও মৌসুমি এ কাগজি লেবুর চাহিদাই বেশি।

সদর উপজেলার কৃষি অঞ্চল খ্যাত কির্তিপাশা, নবগ্রাম ও গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ২২টি গ্রামেই কাগজি লেবুর উৎপাদন হয়। গ্রামীণ হাট-বাজারে বিক্রি হলেও মূল মোকাম ভীমরুলী।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভিমরুলীর ভাসমান লেবুর হাট চলতি মৌসুমে জমে উঠেছে। প্রতিদিন এখানে লাখ লাখ লেবু কেনাবেচা হচ্ছে। পাইকাররা নৌকা থেকে লেবু কিনে গাড়িতে করে বরিশাল আড়তে নিয়ে বিক্রি করছে।

অনেকে মালবাহী ট্রলার বা ট্রাকে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ফরমালিন ও ক্যামিকেলমুক্ত সুগন্ধি কাগজি লেবু সবার কাছেই প্রিয়। ঝালকাঠির বাউকাঠি, শতদশকাঠি, ভিমরুলী, কাফুরকাঠি, আটঘর, গাভারামচন্দ্রপুর, পোষন্ডা, ডুমুরিয়া, খেজুরা, কির্ত্তীপাশা, মিরাকাঠিসহ ২২টি গ্রাম এখন লেবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা। প্রতিদিন এসব গ্রামের কৃষকরা গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে নৌকায় ভিমরুলী বাজারে নিয়ে আসে। অপেক্ষমাণ পাইকাররা ট্রলারে বসেই লেবু কিনে রাখছে।

লেবু চাষিরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনে অনাবৃষ্টির কারণে গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কম হওয়ায় দাম বেশি। গত বছর ১ পোন (৮০টি) লেবু ছিল আড়াইশ’ টাকা। এবার তা ৪শ’ টাকা। গ্রামের কৃষকরা সজ্জন পদ্ধতিতে (কাঁদি কেটে) লেবু চাষ করছেন। একেকটি কাঁদি ১শ’ থেকে ১১০ হাত লম্বা এবং ৭-৮ হাত চওড়া হয়। প্রতিটি কাঁদিতে ২২ থেকে ২৫টি গাছ লাগানো যায়। এরকম ১ বিঘার কাঁদিতে লেবু চাষ করতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। ফল ধরার পরে প্রতি বছর লেবু বিক্রি করে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পাওয়া যায়। সে হিসেবে লেবু বিক্রি করে প্রতি বছর কৃষকরা আয় করছে দেড় থেকে ৩ কোটি টাকা।

লেবুর পাইকারী ব্যবসায়ী রহমান জানান, পটুয়াখালী থেকে মালবাহী ট্রলার এলে সেই ট্রলারে পটুয়াখালী মোকামে পাঠানো হয়। ওখানের কাঁচামাল বিক্রেতাদের আগেই চুক্তি করা থাকে। কেনা দামের ওপর লাভ রেখে বিক্রি করা হয়।
পাইকাররা জানান, তীব্র গরমে কারণে ঘেমে শরীর দুর্বল হয়। জ্বর,  সর্দি, কাঁশিতে আক্রান্ত হলে লেবুর শরবত পান করলে আরোগ্য লাভ করে। তাই কাগজি লেবুর চাহিদা প্রতিবছরের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। এজন্য কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্য দিয়েই লেবু কিনে নেয়া হচ্ছে। প্রতিবছরই লেবুর চাহিদা থাকে কিন্তু এবছর একটু চাহিদা বেশি।

ডুমুরিয়া গ্রামের লেবু চাষি তপন মন্ডল জানান, ঝালকাঠির এ লেবুর কদর সবার কাছেই সমান। ফলন ধরার পর দু’ভাবে লেবু বিক্রি করে থাকি। প্রথমত স্থানীয় ভিমরুলী বাজারে পাইকারদের কাছে। এছাড়াও গাছে ফল আসার পর পাইকারদের কাছে বাগান বিক্রি করি এককালীন নগদ টাকায়। ভীমরুলী থেকে নৌকা বা ট্রলারে করে পাইকাররা কিনে তা সরবরাহ করেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এবছর ঝালকাঠি জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ৯২ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ করা হয়েছে। অনাবৃষ্টির কারণে লেবুর ফলন প্রতিবছরের চেয়ে এবছর কম হলেও কৃষকরা ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি। দেশীয় সুগন্ধিযুক্ত কাগজি লেবু ছোট হলেও ভেতরে পর্যাপ্ত রস থাকে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবুর প্রতি সবারই কমবেশি আকর্ষণ আছে। লেবুচাষিদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে গাছের পরিচর্যাসহ সার্বিক পরামর্শ দেয়া হয়। প্রতিবছরের মতো এবছরও তিন কোটি টাকার বেশি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইএইচ

Link copied!