Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪,

ঋণের চাপে ৭ মাস ঘরছাড়া, অত:পর মায়ের মৃত্যুতে বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরল ছেলে!

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

জুলাই ৮, ২০২৪, ০৮:৪৯ পিএম


ঋণের চাপে ৭ মাস ঘরছাড়া, অত:পর মায়ের মৃত্যুতে বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরল ছেলে!

স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন বগুড়ার শাজাহানপুরের গোহাইল ইউনিয়নের চেলো হিন্দুপাড়া গ্রামের সুদেব চন্দ্র মোহন্ত (৭০)। পেশায় তিনি একজন কর্মকার। স্ত্রী রঞ্জিতা (৫৫) সহ পরিবারে তার তিন কন‍্যা সন্তান যথাক্রমে চন্দনা (৩৫), বন্দনা (৩০), রঞ্জনা (২৫) এবং ছেলে সুশীল চন্দ্র মোহন্ত (২৮)। পৈতৃক সূত্রে বাবার বাড়ি ভিটা ছাড়া তার আর কোনো জমিজমা নেই সুদেবের। কেবল একটি ঘর আর বারান্দায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন সুদেব। পরিবারের ভরন পোষণ মেটাতে গিয়ে লেখাপড়া শেখানোর সুযোগ হয়নি সন্তানদের। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় অনেক কষ্টে বড় মেয়েকে বিয়ে দেন। প

পরবর্তী দুই মেয়েকে বিয়ে দিতে গিয়ে টানতে শুরু করেন ঋণের বোঝা। এমতাবস্থায় সুদেব প্রথমে গ্রামীণ ব‍্যাংক থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। পরে আবারও ব্র‍্যাক এনজিও থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নেন। সংসার চালানোর পাশাপাশি দুইটি ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হয় সুদেবকে। কিস্তির চাপে সুদেব স্থানীয় এলাকার কিছু দাদন ব‍্যবসায়ীদের থেকে অধিক মুনাফায় আবারও প্রায় ৪ লাখ টাকা ঋণ নেন। একদিকে এনজিওর কিস্তির চাপ অন‍্যদিকে দাদন ব‍্যবসায়ীদের সুদের টাকার চাপে শেষমেষ বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন সুদেব।

জানাযায়, রবিবার (৬ জুলাই) বগুড়া শহরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রা প্রতি বছরের ন‍্যায় এবছরেও পালিত হচ্ছিলো। রবিবার বিকেলে সেই রথযাত্রায় অংশ নিতে যায় সুদেবের স্ত্রী ও তার এক নাতনীসহ বড় মেয়ে চন্দনা (৩৫)। একপর্যায়ে রথযাত্রা বগুড়ার সেউজগাড়ী ইস্কন মন্দির থেকে বের হয়ে আমতলা মোড়ে পৌঁছাতেই রথযাত্রা বিদ‍্যুতায়িত হয়ে সাধুসহ ৫জন নিহত ও প্রায় ৪০ জন আহত হন। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় নিহত হন সুদেবের স্ত্রী এবং আহত হন মেয়ে চন্দনা। ঘটনার পর আহত মেয়ের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে স্ত্রী রঞ্জিতার লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরেন সুদেব ও তার ছেলে। সোমবার (৮ জুলাই) বেলা ১২টায় নিহত রঞ্জিতার মরদেহ সৎকার কাজ সম্পন্ন করা হয়।

কর্মকার সুদেব চন্দ্র মোহন্তের ভাতিজা রঞ্জিত চন্দ্র মোহন্ত (৪০) জানান, আমার কাকার কোন জমিজমা নেই। তিনি অন‍্যের সহায়তা ছাড়া যেকোনো ধর্মীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠান করতে পারেন না। অন‍্যের সাহায্য ও ঋণ নিয়ে মেয়েদের কোনো রকমে বিয়ে দেন। এমন অবস্থায় ঋণের চাপ কাটাতে না পেরে নাতীপুতি, ছেলে ও ছেলের বউকে নিয়ে অন‍্যত্র চলে যান। দীর্ঘ ৭ মাস পর কাকী মারা যাওয়ায় তারা বাড়িতে ফেরেন। এখনো তাদের ঋণের অনেক চাপ আছে। পরবর্তীকালে তারা বাড়িতে থাকতে পারবে কিনা তা আমরা জানিনা।

এঘটনায় গোহাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, সুদেবের স্ত্রী রথযাত্রা দেখতে গিয়ে বিদ‍্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে মর্মে জেনেছি। আবার সুদেব স্থানীয় দাদন ব‍্যবসায়ীদের সুদের টাকার চাপে পড়ে বাড়ি ছেড়েছিল এ ঘটনাও শুনেছি। তবে ইদানিং ওই এলাকায় বেশ কিছু সুদের ব‍্যবসায়ীরা গরীবদের নিঃস্ব করে ফেলছে বলে মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগহলে ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে থাকব।

আরএস

Link copied!