নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ২৮, ২০২৪, ০১:১৪ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ২৮, ২০২৪, ০১:১৪ পিএম
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বশেষ যুগান্তকারী অধ্যায়ে সংযোজিত ক্যান্সার ও হরমোনজনিত রোগীর চিকিৎসা সেবার যাত্রা শুরু হয় পরমাণু শক্তিকে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহারের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরমাণু শুক্তি কমিশন দেশের একটি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড এ্যালাইড সায়েন্সেস (ইনমাস) নামে দেশে ২১টি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে তার মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা সেবা শুরু করেছে অনেক পূর্বেই।
তার ধারাবাহিকতায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে নির্মিত ‘ইন্সষ্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড এ্যালাইড সায়েন্সেস (ইনমাস)’ প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা ছাড়াই রোগী সেবার পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু করেছে। ইতোমধ্য এখানে আগত রোগীরা উন্নত যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ সেবা কর্মীদের আন্তরিক ব্যবহারসহ রোগ নির্ণয় সেবা প্রাপ্তরা নানাভাবে উপকার ও সুবিধাভোগের কথা স্বীকার করছেন।
প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরমাণু চিকিৎসা একটি বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থা। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থেকে নির্গত আয়নায়নকারী বিকিরণের নিরাপত্তা সমুন্নত রেখে সম্পূর্ণ নিরাপদ প্রয়োগের মাধ্যমে পরমাণু চিকিৎসা বিদ্যা কাজ করে। কেবল নির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক জটিল রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ের জন্যই এই চিকিৎসা সেবার যাত্রা শুরু হয়। এটিকে অন্তর্ঘাতমুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থাও বলা হয়। ফলে এই চিকিৎসা গ্রহণে রোগীর কোন কষ্ট, যন্ত্রণা, ভোগান্তি এমনকি কোন পার্শপ্রতিক্রিয়াও নাই।
দেশব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ডায়াগোনোষ্টিক ক্লিনিকগুলিতে রোগ নির্ণয় করতে গিয়ে রোগীরা যেখানে নানাভাবে হেনস্তা ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতিসহ কাঙ্ক্ষিত সেবার বদলে প্রতারিত হচ্ছেন; সেখানে এই পরমাণু শক্তি ভিত্তিক রোগ নির্ণয় প্রতিষ্ঠান ইনমাস কুষ্টিয়াতে ক্যান্সারাক্রান্ত রোগীর অস্থিতন্ত্রের রোগ নির্ণয় যেমন- স্তন, মূত্রতন্ত্র ও ফুসফুসের ক্যান্সার শনাক্তকরণসহ তার চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া লিভার বা যকৃতের অবস্থান আকার আকৃতি নির্ণয়পূর্বক লিভারের টিউমার ক্যান্সার ফোড়াসহ লিভার কোষের কার্যকারিতা সক্ষমতা ও অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা শনাক্ত করে চিকিৎসা প্রয়োগ করা। একইভাবে মানবদেহে হরমোন ভিত্তিক যে কোন জটিলতা শনাক্তকরণ যেমন- থাইরয়েড গ্রন্থির আয়োডিন ধারণ ক্ষমতার কোন তারতম্য আছে কি না তা নির্নয়সহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান করার হয়। এভাবে কিডনি স্ক্যান, থাইরয়েড গ্রন্থির স্ক্যান, রেনোগ্রাম, হেপাটোবিলিয়ারি স্ক্যান, বোন মিনারেল ডেনসিটি, হাইটেক বেইসড আল্ট্রাসনোগ্রাফীসহ প্রায় অর্ধশত আইটেমের রোগ নির্ণয় সেবা চালু করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রচলিত প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগোনষ্টিক সেন্টারগুলোতে উল্লিখিত রোগ নির্ণয় সেবা পেতে যে আর্থিক খরচ গুনতে হয় রোগীকে সেখানে ইনমাস-এ ওই সব অভিন্ন সেবা খরচ অর্ধেকেরও কম এমনকি কিছু কিছু রোগ নির্ণয় সেবা খরচ এক চতুর্থাংশ।
মেহেরপুরের গাংনীর কলেজ ছাত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ২৫০শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে মেডিসিন বিভাগে ডাক্তার দেখান। সাবিনা জানান, ‘চিকিৎসক তার রোগ নির্ণয়ের জন্য সিবিসি, এস.টিএসএইচ, ইউরিন আর/ই, আরবিএস ও এস.ক্রিটিনাইন পরীক্ষার জন্য লিখে দেন। এগুলি নিয়ে কুষ্টিয়ার কলেজ মোড়ে সনো হাসপাতালে গেলে তারা সবগুলি টেস্টের জন্য ৩হাজার ৭শ টাকা চান। আমিন ডায়াগোনসিস সেন্টারে সাড়ে ৩হাজার টাকা চান এবং পপুলারে চান ৪ হাজার ২শ টাকা। পরে এতো টাকার খরচ করে টেস্ট করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় জানিয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা: তাপস কুমারের কাছে আবেদন করলে তিনি হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ ও ইনমাস সেন্টার থেকে টেষ্টগুলি করার পরামর্শ দেন। পরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের ইনমাস সেন্টার থেকে সবগুলি টেস্ট করতে সাকুল্যে আমার খরচ হয়েছে ৭শ ২০টাকা।
২৫০শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: তাপস কুমার জানান, ‘কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের ইনমাস সেন্টার অসচ্ছল রোগীদের রোগ নির্ণয়ে মানসম্মত পরীক্ষা নিরিক্ষার একটা নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। যে কোন রোগীই চিকিৎসকের পরামর্শে সেখান থেকে স্বল্প খরচে রোগ নির্ণয় করতে পারেন’।
ইন্সষ্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড এ্যালাইড সায়েন্সেস (ইনমাস) কুষ্টিয়া সেন্টারের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ডা: মো: সানি আনাম চৌধুরী জানান, ‘ইনমাস সেন্টার কুষ্টিয়ায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ছাড়াও বিশেষ করে থাইরয়েড জনিত ও হরমোন জনিত রোগের চিকিৎসা সেবাও দিচ্ছে। একজাতীয় রোগীরা খুব সহজ ও স্বল্পমূল্যে এখান থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন’।
বিআরইউ