জসীম উদ্দিন জয়নাল, পার্বত্যাঞ্চল থেকে
আগস্ট ৩, ২০২৪, ০৪:৪৮ পিএম
জসীম উদ্দিন জয়নাল, পার্বত্যাঞ্চল থেকে
আগস্ট ৩, ২০২৪, ০৪:৪৮ পিএম
টানা ভারী বর্ষণে খাগড়াছড়িতে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ২৫টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ জেলায় দীঘিনালাসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যায় প্লাবিত অঞ্চলের পানিবন্দিদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য প্রায় ১০০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি পৌর এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। পৌর এলাকায় প্রায় ৬-৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি।
এ ছাড়াও চেঙ্গী নদী ও মাইনি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চেঙ্গী নদীর দু-কূল উপচে পৌরএলাকার মুসলিম পাড়া, শান্তিনগর, বাঙ্গালকাটি, খবংপুড়য়া, রাজ্যমনিপাড়া, ফুটবিল, বটতলীসহ কয়েকটি এলাকার হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
শহরের পৌর বাস টার্মিনাল, নিচের বাজার ও আশপাশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়ক দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সদর উপজেলার কমলছড়ি ও গোলাবাড়ি ইউনিয়নের গঞ্জপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে প্রায় ৪০০ ঘরবাড়িতে বন্যার পানিতে ডুবেছে। রাস্তায় কোমর ও গলাসমান পানি থাকায় নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন। ভয়াবহ বন্যার পাশাপাশি ব্যাপক পাহাড়ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী কয়েকশত পরিবার পাহাড় ধসের আতঙ্কে আছে।
জেলা সদরের কলাবাগান, হরিনাথ পাড়া, শালবাগান, রসুলপুর এলাকায় পাহাড় ধসের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
মূলত, পাহাড় কেটে যেসব ঘরবাড়ি তোলা হয়েছে, সেই সব স্থানে পাহাড় ধসের ঝুঁকি বেশি। খাগড়াছড়ি পৌরসভার হিসেবে মতে পৌর এলাকায় অন্তত দুই শত পরিবার পাহাড় ধসের ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করে।
অপরদিকে দুপুরে চেঙ্গী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা সদরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে গঞ্জপাড়া, অপর্ণা চৌধুরি পাড়া, রাজ্যমনি পাড়া, কালাডেবা, বটতলী, ফুটবিল এলাকার নীচু এলাকায় পানি উঠেছে এবং অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। অব্যাহত বৃষ্টির কারণে জেলা সদরের নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি পরিবার বন্যার কবলে পড়েছে।
বন্যার কারণে জেলার চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দীঘিনালার কবাখালী ও মেরুং এলাকায় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় রাঙামাটির সাজেক ও লংগদুর সঙ্গে খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে।
জেলা শহরের মুসলিম পাড়ার একাংশ, মিলনপুর, কল্যাণপুর, মেহেদিবাগ, উত্তর ও দক্ষিণ গঞ্জপাড়া, শান্তিনগর ও বাঙ্গালকাটির একাংশ এলাকায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাহাড়ধস ও বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খাগড়াছড়ি গেইট সংলগ্ন পর্যন্ত বন্যার পানি উঠেছে।
দ্বিতীয়বারের মতো এমন ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হচ্ছে খাগড়াছড়িবাসী। এর আগে প্রথমবারের ২০০৭ সালে বন্যার এমন ভয়াবহ রূপ দেখেছিলেন জেলাবাসী।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরি জানান, বন্যায় পৌর এলাকার ৬-৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের জন্য ২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পৌরসভার উদ্যোগে আশ্রয় নেয়া প্রত্যেকের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, প্রবল বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় দুর্গত ও পাহাড়ের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেকোনো ধরনের দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলাস্থ বন্যা দুর্গত উত্তর ও দক্ষিণ গঞ্জপাড়া এলাকা পরিদর্শন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুকনা খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ করেন জেলা প্রশাসন ও পার্বত্য জেলা পরিষদ।
এ সময় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দিদারুল আলম দিদার, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাঈমা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
ইএইচ