ফেনী প্রতিনিধি
আগস্ট ৬, ২০২৪, ০৮:২৩ পিএম
ফেনী প্রতিনিধি
আগস্ট ৬, ২০২৪, ০৮:২৩ পিএম
ফেনী শহরের মাস্টার পাড়া এলাকায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার আলিশান বাগানবাড়ি রেখেই পালালেন ফেনী-০২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। হাতির ঝিলের আলোকে লেক, হ্যালিপ্যাড, সুইমিং পুল, মদের বার- কি নেই যা ছিলো না এখানে। কথিত আছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য নেতারা ফেনী-নেয়াখালী এলেই এ বাড়িতে কমবয়সী মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করতেন।যা এ বাড়িটি তৈরির পূর্বে শহরের বিসিক এলাকার কুসুমবাগে অন্য এক সিআইপির বাগান বাড়িতে চলতো বলে
দলটির প্রয়াত সাংসদ জয়নাল আবেদীন হাজরী জীবদ্দশায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিকবার তুলে ধরেছিলেন।
ভোগ-বিলাশের যাবতীয় সব আয়োজন ছিলো এই বাড়িতে। বিশাল আয়তনের এই বাড়িতে ফেনী জেলার সাধারণ কোন মানুষজন প্রবেশ করতে পারতো না। ভিআইপিরাই শুধু প্রবেশ করতে পারত।অথচ গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের হলফনামা হাজার কোটি টাকার এই বাগান বাড়ির তথ্য উল্লেখই করেনি তিনি।
ওইসময় বিলাসবহুল এ বাগান বাড়িসহ তার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ৩টি ভবনের তথ্য বহুল সংবাদ প্রকাশের মধ্য দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে দৈনিক আমার সংবাদ।
সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরের ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে উত্তেজিত জনতা। বিকেল ৩টার দিকে শহরের মাস্টারপাড়া এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়,উত্তেজিত জনতা দুপুর থেকে মাস্টারপাড়ায় এমপি নিজাম হাজারীর ভোট কাছারি, পুরাতন বাড়ির দিকে আসতে শুরু করে।
এসময় তার সেকেন্ড ইন কমান্ড শুসেন চন্দ্র শীল ও নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজি সহ সশস্ত্র দলীয় ক্যাডারদের সাথে নিয়ে তাদের উদ্দেশ্য করে নিজেও প্রকাশ্যে গুলি চালাতে থাকে নিজাম উদ্দিন হাজারী।
এসময় বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও উত্তেজিত জনতা পিছু না হঠায় এবং গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার পলায়নের খবর পেয়ে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে সাঙ্গপাঙ্গ সহ সপরিবারে পালিয়ে যায় এক সময় জয়নাল আবেদীন হাজারির গাড়ি চালকের পেশায় নিয়োজিত এ আওয়ামী লীগ নেতা।
এরপর তার সবকয়টি বাড়িতেই ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় বিজয়ের স্মারক হিসেবে `গণভবনের` মতো বাগানবাড়ীসহ ৩ বাড়ি থেকেই যে যার মতো করে জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এছাড়া ফেনী-১ আসনের ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন বাড়িটি ও শহরের বাঁশপাড়াস্থ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীলের কার্যালয়, পিটিআই স্কুল, ফেনী পৌরসভা, স্টেশন রোডস্থ জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়,একাডেমি রোডস্থ ছাগলনাইয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলের বহুতল ভবন, ফেনী মডেল থানা,দাগনভূঞা ও ছাগলনাইয়া থানা সহ জেলা শহরে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা।
এরপর এ-সব স্থাপনা থেকেও বেশকিছু মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে এ জেলায় অবস্থানরত খুলনাসহ বহিরাগত নিম্ন শ্রেণির অসংখ্য নারী পুরুষ ও কিশোরকে।
যদিও এর আগে থেকেই স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী ও ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল শেষে দল দুটির পক্ষ থেকে কোনো প্রকার প্রতিশোধ পরায়ণ না হয়ে সকলকে ধৈর্য্য ধরণের অনুরোধ জানিয়ে শহরজুড়ে মাইকিং শুরু করে।
তবুও শেখ হাসিনার পালানোর সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে তাদের এ আহ্বান কোনো কাজেই আসেনি।
অপরদিকে জেলার সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস,উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও দাগনভূঞা উপজেলার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে আমাদের স্থানীয় সংবাদদাতারা জানিয়েছেন।
আরএস