Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪,

ফেনীর ৫ উপজেলা ও ৩৫ ইউপি চেয়ারম্যানসহ সব পৌর মেয়র আত্মগোপনে

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

আগস্ট ১৮, ২০২৪, ০৭:৩৬ পিএম


ফেনীর ৫ উপজেলা ও ৩৫ ইউপি চেয়ারম্যানসহ সব পৌর মেয়র আত্মগোপনে

স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ফেনীর ৫ উপজেলা চেয়ারম্যান, সব পৌর মেয়রসহ ৩৫ জন ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে গেছেন।

রোববার জেলাজুড়ে অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এতে পৌর ও ইউনিয়নগুলোতে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা। ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং দলটির সদ্য সাবেক সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েই আত্মগোপনে চলে গেছে ফেনীর ৬টি উপজেলার মধ্যে শুধুমাত্র পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ আহমেদ মজুমদার ছাড়া ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল ও পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজি, দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন ও পৌর মেয়র ওমর ফারুক খান ,সোনাগাজী জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন ও পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম, ফুলগাজীর হারুন মজুমদার ও ছাগলনাইয়া  উপজেলা মিজানুর রহমান মজুমদার ও পৌর মেয়র মো. মোস্তফাসহ অন্তত আরও ৩৫ জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

সূত্র আরও জানায়, জেলার এসব উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র ছাড়াও ৪৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও নারী ইউপি সদস্য মিলে ৫৫৯ জন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। ছাত্র-জনতার এক দফা আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরে এদের বেশিরভাগই গাঢাকা দিয়েছেন।

স্থানীয়দের দাবি এর মধ্যে কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে সুবিধামতো স্থানে অবস্থান করলেও নিজ কার্যালয়ে আসছেন না। ফলে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে জন্মসনদ, মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ কোনা প্রকার সেবা পাচ্ছে না নাগরিকরা।

আলী আশরাফ নামে ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে জন্ম নিবন্ধনের কাজে পরিষদে আসলেও চেয়ারম্যান-মেম্বার কাউকে পাইনি। জরুরি প্রয়োজন থাকলেও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের জন্য ভোগান্তিতে পড়েছি। বিষয়গুলো বিবেচনা করে সাধারণ নাগরিকদের দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে দ্রুত একটি নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন।

আবুল কালাম নামে আরেক সেবাপ্রার্থী বলেন, জানি না কতদিন আমাদের এভাবে ভোগান্তি পোহাতে হবে। সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে দ্রুত কার্যক্রম স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।  

এদিকে চেয়ারম্যানশূন্য উপজেলাগুলোতে স্থানীয় নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভাগুলোতে সচিবরা স্বল্প পরিসরে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেলেও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর কোথাও কোথাও সচিব ও উদ্যোক্তাদের দেখা গেছে।

এ প্রসঙ্গে সোনাগাজীর চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সুব্রত কুমার শীল বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষ ছাড়া কোনো কিছুই অক্ষত নেই। ৫ আগস্ট বিকালে একদফায় পরিষদে হামলা-ভাঙচুর হয়। সন্ধ্যার পরে দ্বিতীয় দফায় আবারও হামলা চালিয়ে কম্পিউটার, প্রিন্টার, আসবাবপত্র, ডকুমেন্টসসহ আলমারি নিয়ে গেছে। এখানে নাগরিক সেবা দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। এছাড়া চেয়ারম্যান না থাকায় কেউ  এলেও সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, নিয়মিত অফিস করলেও কোনো ধরনের কাজ করা যাচ্ছে না। ইউপি চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় সবধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে জেলার সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর, ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও, ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর, শুভপুর, ঘোপাল, মহামায়া, দাগনভূঞা উপজেলার রামনগর, ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ও আনন্দপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইউপি কার্যালয়ে এসে দাপ্তরিক কাজ পরিচালনা করছেন।

এছাড়া জেলার পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ও দাগনভূঞা সদর ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনার পর দুয়েকদিন পরিষদে এলেও বাধার মুখে পরবর্তী সময়ে তারা আর আসেননি।

সাইদুল ইসলাম নামে সোনাগাজীর নবাবপুর ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলেন, পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের কোনো চেয়ারম্যান কর্মস্থলে না থাকলেও আমাদের চেয়ারম্যান সবসময় পরিষদে আসছেন। সেবা কার্যক্রমেও তেমন সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি। মূলত আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যানরা পালিয়ে গেছে।

ছাগলনাইয়ার মহামায়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান মিনু বলেন, স্বাভাবিকভাবেই কাজ করছি। কোন ধরনের সমস্যা হচ্ছে না।

উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম বলেন, সরকার পরিবর্তন হলেও পরিষদে এসে নিয়মিত কাজ করছি। কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হইনি।

নবাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, আমরা নিয়মিত নাগরিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে ইউপি সচিব ও একজন ইউপি সদস্য ছাড়া অন্যরা আত্মগোপনে রয়েছেন। এতে কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াত পন্থি সদস্য নজরুল ইসলাম নিয়মিত পরিষদে আসছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগ ফেনীর উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন বলেন, কর্মস্থলে উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যানদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে জানতে চেয়েছিল। পরে আমরা এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছি।

ইএইচ

Link copied!