সোনাতলা (বগুড়া) প্রতিনিধি
আগস্ট ২০, ২০২৪, ০৪:৩৭ পিএম
সোনাতলা (বগুড়া) প্রতিনিধি
আগস্ট ২০, ২০২৪, ০৪:৩৭ পিএম
বগুড়ার সোনাতলায় বস্তায় আদা চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষকেরা। পতিত জমি, রাস্তার ধার, বাড়ির আঙিনা, পুকুর পাড়, ছাদে এমনকি স্কুল কলেজের পতিত মাঠেও বস্তায় আদা চাষ নতুনভাবে স্বপ্ন দেখাচ্ছে কৃষকদের। এতে করে সোনাতলায় বস্তায় আদা চাষের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা যায়, সোনাতলা উপজেলায় সোনাতলা পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ১৮ হাজার বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্য বেশি চাষ করা হয়েছে থাইল্যান্ডের জাত। পাশাপাশি দেশী জাতের চাষও হয়েছে।
মধুপুর ইউনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামের শিক্ষক আলমগীর হোসেন তার পতিত জমিতে পাঁচশ বস্তায় আদা চাষ করেছেন।
বলেন, ‘ইউটিউবের মাধ্যমে বস্তায় আদা চাষ সম্পর্কে জেনে, নিজের ১২ শতক জমিতে অন্যান্য ফলের গাছের পাশাপাশি ৫০০ বস্তায় আদা চাষ করেছি। মোটামুটি ফলন খুব ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যই একেকটা বস্তায় প্রায় পৌনে এক কেজি করে আদা হয়েছে। আরও এক দুই মাস যাওয়ার পরে এই আদাগুলো হারভেস্ট করবো’।
শিক্ষক আলমগীর আরও জানায়, আদার বীজ সংগ্রহ থেকে এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা। তবে তিনি আশাবাদী এ আদা উত্তোলনের পর খরচ বাদ দিয়েও তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় করতে পারবেন তিনি।
পৌর এলাকার কানুপুর গ্রামের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল হক বাবু তার পতিত জমিতে সাড়ে ৭০০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। বলেন, পাশের বাড়ির অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার তার বাড়িতে বস্তায় করে আদা চাষ করেছিল। তার দেখে এবং তার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে আমার পতিত জমিতে চাষ শুরু করি। খুব ভালো হয়েছে আগামীতে আরও বেশি করে বস্তায় আদা চাষ করবো, সে সাথে সবাই কে বলবো আপনাদের বাড়ির উঠানে ৫/১০ টা করে বস্তায় আদা চাষ করার জন্য।
উপজেলার ড. এনামুল হক কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক তার কলেজ প্রাঙ্গণে ৫০০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার কলেজের পতিত জায়গায় বস্তায় আদা চাষ করেছি। এটা দেখে পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠান তারাও উদ্বুদ্ধ হয়ে তার প্রতিষ্ঠানে আদা চাষ শুরু করেছেন’।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চৈত্র থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত বস্তায় আদা রোপণের উৎকৃষ্ট সময় এবং পৌষ-মাঘে আদা উত্তোলনের সময়। এ সময়ের মধ্য বস্তায় আদা চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
এছাড়াও বস্তায় আদা চাষে তেমন রোগবালাইয়ের ভয় নেই। তবে কন্দ পঁচা রোগ ও পোকামাকড়ের হাত থেকে আদা রক্ষায় নিয়মিত বিকেলে ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘কৃষককে উদ্ববুদ্ধ করতে আমি আমার অফিসের পাশে পতিত জায়গায় প্রায় এক হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি এবং আমার কৃষক ভাইদেরকে ডেকে এনে বস্তায় আদা চাষের নিয়ম হাতে কলমে শিখিয়েছি। যার ফলে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং অনেকেই তাদের পতিত জায়গায় আদা চাষ শুরু করেছে। বর্তমানে সোনাতলা উপজেলায় প্রায় ১৮ হাজার বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘বস্তায় আদা চাষের খরচ অনেক কম। আদা উত্তোলনের আগ পর্যন্ত প্রতি বস্তায় খরচ হয় মাত্র ৫৫-৬০ টাকা। আর প্রতিটি বস্তায় ১ থেকে ১.৫ কেজি আদা উৎপাদন হয়। এতে প্রতি বস্তায় খরচ বাদ দিয়েও একজন কৃষকের আয় হবে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা’।
ইএইচ