মো. জালাল উদ্দিন, সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা)
আগস্ট ২৩, ২০২৪, ০৫:০৫ পিএম
মো. জালাল উদ্দিন, সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা)
আগস্ট ২৩, ২০২৪, ০৫:০৫ পিএম
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়া শহীদ নাজমুল হাসানের খবর কেউ রাখেনি।
নাজমুল হাসান (২৪) সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের মৃত হাইদুল (হামিদুল) ইসলামের পুত্র।
জানা যায়, নাজমুল হাসান(২৪) হতদরিদ্র পরিবারের তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। তার বাবা একজন দিনমজুর ছিলেন। অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পড় পরিবারের অভাব মিটানোর ঢাকায় গিয়ে একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয় নাজমুল।
গত ৪ আগস্ট বিকালে চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চার বন্ধু মিলে আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করে। বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয় নাজমুল ও এক বন্ধু।
তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ আগস্ট মারা যায় তার বন্ধু।
নাজমুল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৪ম তলায় ২১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাকে ঐ দিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয় ও তার বুকের নিচে লাগা গুলি বের করে আইসিইউ থেকে পরের দিন বিকাল ৫টায় বেডে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা সুস্থতা জন্য আশাবাদী হলেও ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় সে মারা যায়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ দাফনের জন্য ৯ আগস্ট রাতে তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয় ও ১০ আগস্ট গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসে তার বাবার করবের পাশে কবরস্থ করা হয়।
তার মৃত্যুর ১৩ দিন অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশ নতুনভাবে স্বাধীন হলেও নাজমুল হাসানের মৃত্যুর পর কেউ নেয়নি তার পরিবারের খোঁজ। দাঁড়ায়নি পাশে।
কিছুতেই থামছে না তার মা বোন ও দাদীর আর্তনাদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত নাজমুল ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
তার উপার্জনের অর্থে চলতো সংসার। বাড়িতে যে টাকা পয়সা ছিল তার সবটাই ব্যয় হয়েছে নাজমুলের চিকিৎসার পিছনে।
কান্না জড়িতকণ্ঠে নাজমুলের বয়োবৃদ্ধ দাদি বলেন, বড় আশা ছিল আমার ছেলে মৃত্যুর পর নাতিটা সংসারের হাল ধরবে, তাকেও আল্লাহ কেড়ে নিলো, হামরা এখন কেমনে বাচমো। হামি অসুস্থ গত কয়েকদিন থেকে বাড়িতে খাবার নাই, হামার ওষুধ নাই।
তার ছোট বোন আয়শা বলেন, ভাই মারা যাওয়ার পর আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। কীভাবে চলবে সংসার?
এলাকাবাসীরা জানায়, গত কয়েকদিন পূর্বে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জেলা সভাপতি তাদের বাড়িতে এসেছিল। গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে গরিব পরিবার তারাই। নাজমুলের বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে নাজমুলই সংসার চালাতো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নাজমুল মারা যাওয়ার পর তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। তাদের বাড়ির ভিটা ৩ শতক ছাড়া আর কোন জমিজমা নেই। নাজমুল খুব ভালো ছেলে ছিল। দেশের মানুষের জন্য তার আত্মত্যাগের প্রতিদান ফেলনা তার পরিবার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয় ও আন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা মন্ডলীদের নিকট আমাদের আকুল আবেদন আপনারা এই অসহায় পরিবারটির দিকে একটু তাকান। নাজমুল আমাদের গ্রামের অহংকার। আমাদের জোর দাবি তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদি মর্যাদা দেয়া হোক। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া হোক তার পরিবারের প্রতি।
ইএইচ