Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

ফরিদপুর ডায়বেটিক হাসপাতালে তুঘলকি কাণ্ড

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুর প্রতিনিধি

আগস্ট ২৪, ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম


ফরিদপুর ডায়বেটিক হাসপাতালে তুঘলকি কাণ্ড

ফরিদপুর ডায়বেটিক সমিতির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। শনিবার সমিতির নির্বাহী কমিটির এক সভায় পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

সমিতির সভাপতি মীর নাসির হোসেনের সভাপতিত্বে সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল হাসানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, ফরিদপুর ডায়বেটিক হাসপাতালের পাঁচ বছর আগের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনের শনিবার দুপুরে সমিতির নেতৃবৃন্দকে অবরুদ্ধ করার পর তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেছে।

এ সময় ডায়বেটিক হাসপাতালের কতিপয় স্টাফদের প্রহারে আহত হন ওই হাসপাতালেরই এন্ড্রোকোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নাহিদ উল হক। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দীর্ঘক্ষণ পরে তাকে উদ্ধার করেন।

শনিবার দুপুরের পর বেলা ৩টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সেখানে এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করে। এ সময় হাসপাতালের রোগী তাদের স্বজনদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

জানা গেছে, শুক্রবার সকালে ডায়বেটিক হাসপাতালের সাবেক এন্ড্রোকোলজি চিকিৎসক ডা. নাহিদ উল হক ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।

তিনি এ সময় অভিযোগ করেন, ২০১৯ সালে একটি মিথ্যা অভিযোগে বেআইনিভাবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ সময় তিনি তার বিরুদ্ধে এই অন্যায়সহ ডায়বেটিক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া বিভিন্ন রোগীদের টেস্টের নানা অসঙ্গতির তথ্য প্রমাণ তুলে ধরেন সুবিচার কামনা করেন।

এর প্রতিবাদে শনিবার সকালে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে ডায়বেটিক হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডা. নাহিদ উল হকসহ ৩ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও ডায়বেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম। তাকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে তদন্ত কমিটি গঠন ও রোগীদের নানা টেস্টের অসংগতি ছাড়াও অনিয়মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

এদিকে, এ অবস্থায় দুপুর ৩টার কিছুক্ষণ আগে ডা. নাহিদ উল হক কতিপয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ডায়বেটিক হাসপাতালের দোতলায় সমিতির সভাপতির কক্ষে যান। এ সময় সেখানে অবস্থান করছিলেন সমিতির সভাপতি মীর নাসির হোসেন, সহ-সভাপতি শহিদুল হাসান, আওয়ামী লীগ নেতা সাহেব সরোয়ারসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডা. নাহিদ সমিতির কর্মকর্তাদের নিকট তাকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতির কৈফিয়ত চান। একপর্যায়ে তিনি তাদের সাথে অশোভন আচরণ করেন। এ সময় সেখানে ডায়বেটিক হাসপাতালের স্টাফদের কেউ কেউ তাদের পূর্ব পরিচিত দু-একজন ছাত্র সমন্বয়কদের সাথে আগত শিক্ষার্থীদের পরিচয় নিশ্চিত হতে চান। এসময় জেলার ছাত্র আন্দোলনের নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে সোহেল, নিশাত সহ অন্যান্যরা সেখানে উপস্থিত হন। তারা ডা. নাহিদের সাথে আগত শিক্ষার্থীরা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এবং তারা প্রকৃতই ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন কিনা জানতে চান।

এ সময় কোন সদুত্তর না পেয়ে ছাত্র আন্দোলনের নেতা সোহেল বলেন, ফরিদপুরের ছাত্র আন্দোলনের কোন শিক্ষার্থী আজকের এই ঘটনার সাথে নেই। তিনি এমন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সাথে আন্দোলনকারীদের জড়িয়ে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট না করার জন্যেও তারা সকলের নিকট অনুরোধ জানান। এরপর তারা সেখান থেকে সকল শিক্ষার্থীদের বের হয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এসময় সেখান থেকে মীর নাসির ও শহিদুল হাসান সহ কর্মকর্তারা চলে যান।

এদিকে, ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িতরা চলে যাওয়ার পরে সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ডায়বেটিক হাসপাতালের কতিপয় স্টাফরা ডা. নাহিদকে তার অশোভন আচরণ করার কারণ জানতে চান। একপর্যায়ে এক কথা- দুই কথায় ডা. নাহিদের উপর কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে তারা। এ অবস্থায় নাহিদ সেখান থেকে বাঁচার চেষ্টা করলেও চারদিক থেকেই তার উপর হামলা করা হয়। প্রায় মিনিট পাঁচেক এ অবস্থা চলতে থাকার পরে সেখানে উপস্থিত হন ফরিদপুর ড্যাবের সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান শামীম। তিনি সেখানে দু-হাত দিয়ে হামলাকারীদের নিবৃত্ত করে ডা. নাহিদকে রক্ষা করেন।

এ সময় খবর পেয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশ, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমটি আক্তার টুটুল, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মাসুদ সহ অন্যান্যরা উপস্থিত হন।

এদিকে, সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতিকে অবরুদ্ধ ও তাদের সাথে অসদাচরণের খবর পেয়ে সেখানে ডায়বেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিক্যাল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে নাহিদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষুব্ধরা নাহিদকে বের করে শাস্তি দেয়ার জন্য কলাপসিবল গেট খুলে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। বিক্ষুব্ধদের সামাল দিতে গিয়ে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ প্রায় ঘণ্টাখানেক চেষ্টা চালান। তারা ডা. নাহিদকে সমিতির শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ডা. নাহিদ তার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও বিক্ষুব্ধরা ক্ষ্যান্ত হননি।

এরপর সেখানে ফরিদপুরে অবস্থানরত আর্মি ক্যাম্পের সেনা সদস্য ও কোতোয়ালি থানার পুলিশের একাধিক দল উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। প্রায় আধাঘণ্টা পরে সেনা সদস্যরা ডা. নাহিদকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।

ফরিদপুর ডায়বেটিক সমিতির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির প্রধান মীর নাসির হোসেন বলেন, ডা. নাহিদের ঘটনাটি অনেক পুরোনো। তার প্রতি অবিচার করা হলে তার আইনগতভাবে প্রতিকার চাইতে পারতেন।

তিনি বলেন, সমিতি পরিচালনার জন্য পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ৫ সদস্য বিশিষ্ট এআহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

ইএইচ

Link copied!