Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪,

মৃত মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে পিতা দেখিয়ে ভাতা উত্তোলন করে ভাতিজা

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি

সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪, ০৩:৫২ পিএম


মৃত মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে পিতা দেখিয়ে ভাতা উত্তোলন করে ভাতিজা

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা পেতে কাগজে কলমে অবিবাহিত মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে পিতা দেখিয়ে ২০১৮ সাল থেকে ভাতা উত্তোলন করছে ভাতিজা বাবলু হোসেন। সে এই ভাতার লোভে নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে মায়ের নাম ঠিক রেখে মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে পিতা দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানি ভাতা উত্তোলন করে আসছে।

সোনালী ব্যাংক বাগাতিপাড়া শাখা থেকে বাবলু হোসেনের নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদিকে কোন ব্যক্তি মৃত হওয়ায় ৬ বছর পরেও কীভাবে পুত্র সন্তানের বাবা হলেন? এই প্রশ্নও উঠেছে নানা মহলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী শেখ ১৯৭৯ সালে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। সে সময় তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তার মৃত্যুর ছয় বছর পর ১৯৮৫ সালে জন্ম হয় বাবলু হোসেনের। অথচ সেই চাচাকে পিতা দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৬ বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা উত্তোলন করে আসছে প্রতারক বাবুল হোসেন। এই বাবুল হোসেন (৩৯) বাগাতিপাড়া উপজেলার দায়ারামপুর ইউনিয়নের ডুমরাই (ঢাকাপাড়া) গ্রামের মো. তৈয়ব আলী (৭৭) ও মোছা জরিনা বেগম (৬০) দম্পতির ছেলে।

স্থানীয় অনেকেই আক্ষেপ করে জানান, বাগাতিপাড়ার ডুমরাই (ঢাকাপাড়া) গ্রামের মৃত অশোল আলী প্রামাণিকের ছেলে ও বাবলু হোসেনর চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী শেখ ১৯৭৯ সালে অবিবাহিত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর ৬ বছর পরে বাবলু হোসেনের জন্ম হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী শেখ ব্যক্তি জীবনে অবিবাহিত ও তার কোন ওয়ারিশ না থাকায় তার প্রাপ্য সম্মানি ভাতা পাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাবলু হোসেন এই জালিয়াতির আশ্রয় নেয়।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মো. বাবলু হোসেনের জন্ম ১৯৮৫ সালে। ২০০৮ সালে ভোটার হয় সে। জন্ম সনদ ও জাতীয় পরিচয় পত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে ২০০৮ সালে তার পিতার নাম ছিল মো. তৈয়ব আলী এবং মাতা জরিনা বেগম। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা নিজে নামে পাওয়ার লোভে ২০১৮ সালে সে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে তার পিতা মো. তৈয়ব আলীর নাম পরিবর্তন করে চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী শেখকে পিতা হিসেবে সংযোজন করে। জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধনে মাতার নাম তার নিজ মা জরিনা বেগমেরই নাম রাখে।

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা (বাংলাদেশ রেলওয়ের অবসর প্রাপ্ত অ্যাটেনডেন্ট) আনোয়ার হোসেন (৭৫) জানান, তিনি এবং আয়ুব আলী ছোটবেলা থেকেই একই সাথেই লেখাপড়া করেছেন। তারা উভয়েই ভারতের মিত্রবাহিনীর অধীনে ট্রেনিং করেছিলেন এবং ৭নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধও করেছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আয়ুব আলীর মৃত্যুর অনেক বছর পরে বাবলু হোসেনের জন্ম হয়। আর বাবলু হোসেন আয়ুব আলীর ভাই তৈয়ব আলীর ছোট ছেলে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্কাস আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাবলু হোসেন জাতির পরিচয় পত্রে তার পিতার নাম পরিবর্তন করেছে। সেই সময় সংশোধনীর কাগজপত্র ডিজিটাল না হওয়ায় হাতে লিখেই পাঠানো হতো। মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলীর কোনো স্ত্রী, সন্তান না থাকায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা অফিস এর লোকজনের সুপারিশেই সংশোধনী কাগজপত্র পাঠানো হয়েছিল।

এ বিষয়ে মো. বাবলু হোসেন বলেন, ছোটবেলায় তার চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী শেখ তাকে পালক পুত্র হিসেবে নেন। তার প্রথম জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্মদাতা পিতার নাম তৈয়ব আলী ভুল করে দিয়ে ফেলেন। পরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের সঙ্গে পালক পুত্রের বিষয়টি কথা বলে তাদের সহায়তায় পিতার নাম তৌয়ব আলী পরিবর্তে আয়ুব আলী শেখ নামে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করে।

বাগাতিপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান জানান, বাবলু হোসেনের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। বাবলু হোসেন জাতীয় পরিচয় যখন সংশোধন করেন সেই সময় অজাদ হোসেন উপজেলা ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। তিনিই সেই সময় অভিযোগী করে বাবলু হোসেন এর কাগজপত্র সংশোধনে সাহায্য করেন।

এ বিষয়ে সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আজাদ হোসেন বলেন, তার শরীর খারাপ, কথা বলতে পারছেন না। আর সেই সময় তিনি দ্বায়িত্বে ছিলেন-না।

বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনামিকা নজরুল বলেন, এ বিষয়ে তিনি অবগত না। কাগজপত্রাদি দেখে ব্যবস্থা নেবেন।

ইএইচ

Link copied!