Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪,

হুমকিতে বিদ্যুৎ-টাওয়ারসহ হাইওয়ে

কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনের মুখে মিরপুরের চার গ্রাম

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪, ০৪:১৯ পিএম


কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনের মুখে মিরপুরের চার গ্রাম

প্রমত্তা পদ্মা নদীর ভয়াবহ অব্যাহত ভাঙ্গনের কবলে পড়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চার গ্রামের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে পড়েছে।

গ্রাম চারটির মধ্যে রয়েছে তালবাড়ীয়া, বহলবাড়ীয়া ও সাহেবনগর ও মির্জানগরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বসত ঘরবাড়ি, মাঠের ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে এলাকার মানুষ গুলো। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে হাই ভোল্টেজ ৫টা বিদ্যুতের টাওয়ার। নদী ভাঙন রোধে বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হলেও এখনো কোন বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়নি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

সর্বগ্রাসী পদ্মার অব্যাহত ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতে এলাকার মানুষ মানববন্ধনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়াকে ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করেছে। এতে কোন কাজ হচ্ছেনা।

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর ভেড়ামারা) সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম পদ্মার ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ডিজিকে জানাতে। শহীদুল ইসলাম ডিজিকে ঘটনা বিস্তারিতভাবে জানানোর পর তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমানকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। তার পরেও কোনো কাজ হচ্ছে না। নির্বাহী প্রকৌশলী গোপনে আওয়ামী লীগের ঠিকাদারের সাথে আঁতাত করে নয় ছয় শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এলাকাবাসী জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ইতোমধ্যে এসব এলাকার কয়েক ‘শ’ ঘরবাড়ি নদীতে তলিয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক। দেশের উত্তর - দক্ষিণ অঞ্চলের একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থায় কুষ্টিয়া- ঈশ্বরদী মহাসড়কটি যেকোনো মুহূর্তে বিলীন হতে পারে নদীগর্ভে এমন আশঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ।

সাহেবনগর নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অপু বলেন, পদ্মার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে বহলবাড়ীয়া, বারুইপাড়া, তালবাড়ীয়া, খাদিমপুর, সাহেবনগর, মির্জানগর ও ঘোড়ামারাসহ বেশকিছু এলাকা। বিগত তিন বছর যাবত নদীগর্ভে শত শত একর আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডের ছয়টি বিদ্যুৎ সঞ্চালনের টাওয়ারসহ বসতবাড়ি, শতবর্ষী স্কুলকলেজ ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। কুষ্টিয়া ঈশ্বরদী-মহাসড়ক থেকে নদী মাত্র ৫০ মিটার দূরে আছে। সড়কটি যেকোনো সময় ভাঙনের কবলে পড়বে।

মহেদী হাসানের অভিযোগ, এসব এলাকার ভাঙন রোধে সরকারিভাবে ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হলেও চলতি মৌসুমে কোনো জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করেনি পাউবো। যত টুকু জিও ব্যাগ ফেলেছিল তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না। দ্রুত এই প্রকল্পের টাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

এলাকাবাসী আরো বলেন, পদ্মার তীর ঘেঁষে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ নির্মাণের কারণে ভাঙন তীব্র হয়েছে। এটি নির্মাণের পর থেকেই তাদের বসতবাড়ি ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমানের বলেন, সাহেবনগর বেড়ীবাঁধসহ ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ও টিউব ব্যাগ ফেলার কাজ খুব দ্রুতই চলছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে শুরু হবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান আরো বলেন, টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি ২-৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ওই এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। আমরা ব্যাপারটি অবজারভেশনের মধ্যে রেখেছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন টাওয়ার ও বেড়িবাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় সেখানে দ্রুত জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। আপদকালীন পরিস্থিতি পার করে দ্রুত ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য নেওয়া প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

বিআরইউ

Link copied!