খুলনা ব্যুরো
সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম
খুলনা ব্যুরো
সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম
দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে অকার্যকর হয়ে পড়েছে খুলনার দুই শতাধিক স্লুইস গেট। এতে বিভিন্ন স্থানে অতিবৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে হাজার একরের কৃষি ক্ষেত ও মৎস্য খামার; ক্ষতি হয়েছে শত কোটি টাকারও বেশি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সংস্কারের পাশাপাশি নতুন করে কয়েকটি স্লুইস গেট তৈরির প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
জানা যায়, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় পানি প্রবেশ ও বের হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে শোলমারি নদীর ওপর নির্মিত বড় স্লুইস গেটটি। তবে বছরের অধিকাংশ সময়ই পলি জমে গেটের মুখ আটকে থাকে। ফলে গত সপ্তাহে টানা চারদিনের বৃষ্টিপাতে উপজেলার অন্তত ৭টি ইউনিয়নই ডুবেছে জলাবদ্ধতায়।
শুধু ডুমুরিয়া নয়, জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় ১১৪৫ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৫৮ কোটি টাকারও বেশি। অন্যদিকে মৎস্য বিভাগের তথ্য বলছে, ৫৭২৬ হেক্টর ঘের তলিয়ে ক্ষতি হয়েছে ৯৪ কোটি টাকার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৪৮৬টি স্লুইস গেটের মধ্যে একেবারেই অকার্যকর বা সংস্কারযোগ্য নয় ৭০টি। আরও শতাধিক স্লুইস গেটে কখনও কাজ করে, আবার কখনও করে না। কার্যকর থাকা স্লুইস গেটগুলো নিয়মিত পরিচালনা করা হয় না, হয় না পলি অপসারণও। ফলে এসব গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন ও নিয়ন্ত্রণ না করতে পারায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক এলাকায় বসতভিটা সবই তলিয়ে আছে পানির নিচে। এতে ভোগান্তি চরমে স্থানীয়দের। উপজেলাগুলো বাদেও খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় সংস্কার প্রয়োজন এমন ১২টি স্লুইস গেট রয়েছে।
শোলমারি এলাকার কৃষক হাসান আলী বলেন, ‘আমাদের ডুমুরিয়া এলাকায় কৃষি কাজের সবথেকে বড় ক্ষতি হচ্ছে স্লুইস গেটটির কারণে। গেটের মুখে সব সময় পলি জমে থাকে। গেট দিয়ে পানি বের হয় না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি মেশিন দিয়েও পলি কেটে বের করার চেষ্টা করা হলেও তা কাজে আসছে না। আবারও পলি জমে যাচ্ছে। আমাদের ক্ষেত খামার সব ভেসে যাচ্ছে। বাড়িঘরও পানির নিচে।’
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা রফিকুজ্জামান বলেন, ‘শুধু নামেই পলি কাটার কাজ করছে। আগে নদী খনন করতে হবে, সবগুলো স্লুইস গেট কার্যকর করতে হবে। গত সপ্তাহের বৃষ্টিতে আমাদের সব ক্ষেত এখন পানির নিচে। আগামী মৌসুমে আমাদের ফসল উৎপাদন হবে না ঠিকমতো। শুধু ক্ষেত খামার কিংবা মৎস্য ঘেরই না, তলিয়ে গেছে বহু বসতভিটাও।’
একই এলাকার রহিমা বেগম বলেন, ‘স্লুইস গেট বন্ধ থাকায় পানি বের হতে পারে না। ফলে আমাদের বাড়ি-ঘরেও পানি প্রবেশ করে এখন হাঁটু সমান পানিতে থাকতে হয়। নানা রকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে পরিবারের সদস্যরা।’
এ দিকে কৃষি ও মৎস্য বিভাগ থেকে স্লুইস গেটগুলো কার্যকর রাখতে মতামত দেয়া হলেও উদ্যোগ নেই বললেই চলে বলে জানান খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল। তিনি বলেন, ‘স্লুইস গেটগুলো কার্যকর না থাকায় বহু ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা বিভিন্ন মাসিক সভায়, বিভিন্ন ফোরামে একাধিকবার এসব সমস্যা দূর করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাই না।’
একই রকম অভিযোগ করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের খুলনা জেলার উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে জানালে তারা বলে আমাদের বাজেট নেই। অথচ আমাদের কোটি কোটি টাকার ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।’
পলি অপসারণে নিয়মিত কাজ করার পাশাপাশি বড় প্রকল্পে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন, আমরা নিয়মিত সংস্কার কাজ সব সময়ই করে যাচ্ছি। ডুমুরিয়ার শোলমারি নদীর পাড়ে পলি অপসারণে একটি মেশিন থাকলেও সেটা নষ্ট আমার জানা ছিল না। নতুন একটা প্রকল্পে আমরা এখানে জার্মানি থেকে বড় একটি মেশিন আনার ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া এসব সমস্যা সমাধানে নতুন একটি প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ইএইচ