Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪,

আবরার হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর: সন্তানের স্মৃতি আঁকড়ে দিন কাটে মা রোকেয়ার

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া

অক্টোবর ৭, ২০২৪, ০১:০০ পিএম


আবরার হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর: সন্তানের স্মৃতি আঁকড়ে দিন কাটে মা রোকেয়ার

‘ছেলের ব্যবহৃত হাতঘড়ি, দুটি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, নামাজের টুপি, তসবি, ব্রাশ, না খাওয়া চকলেট, জুতা, জামাকাপড়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড, নিত্যব্যবহার্য জিনিসগুলি স্বযত্নে রেখেছেন মা রোকেয়া খাতুন।

এছাড়াও আলমারিতে সুরক্ষিত আছে ছেলের অর্জিত বিভিন্ন পুরস্কার। সর্বশেষ কিনে দেয়া অক্ষত মোড়কের নতুন জামাটিও রয়েছে মায়ের সংগ্রহশালায়। হলে থাকা কাপড় চোপড় পরম যত্নে রেখেছেন বাড়িতে যে কক্ষটি ছিল আরবারের থাকার জন্য। থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন ছেলের পড়া বই। আবরার ফাহাদ মারা গেলেও তার মা তার স্মৃতি গুলোকে সংরক্ষণ করে আগলে রেখেছেন।

রোববার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডের শাখা বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদ সড়কের ৫নং ওয়ার্ডের ৩নং বাড়িতে বড় ছেলে প্রয়াত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের রেখে যাওয়া স্মৃতির সাথে বিড়বিড় করে নিজের মনেই কথা বলে একাকী দিন কাটান মা রোকেয়া খাতুন।

পুলিশের কাছ থেকে ফেরত পাওয়া এন্ড্রয়েট মোবাইলটি এবং আসুস ল্যাপটপটি নাড়াচাড়া করতে করতে প্রলাপ করে বলেন, এই মোবাইলটাই ওর জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ালো, আমি কি জানতাম যে মোবাইলে ফেসবুকে পোস্ট করে ওর জীবন যাবে তাহলে তো মোবাইল কিনে দিতাম না।

আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ ব্র্যাকে কর্মরত নিরীক্ষক হিসেবে ঢাকায় থাকেন। মূলত, ছোট ছেলে ফায়াজের পড়ালেখার জন্যই তিনি পোস্টিং নিয়ে থাকেন ঢাকায়। কুষ্টিয়ার বাসায় শুধু থাকেন আবরার ফাহাদের মা।

রোকেয়া খাতুন আবরারের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করে বলেন, যেদিন আমার ছেলে বাড়ি থেকে গিয়েছিলো সেদিন ছিল ৬ তারিখ রোববার। ৫ বছর পরে আজকে ঠিক সেই রোববার এবং ৬ তারিখ। আজকের এই দিনেই সকালে বাসে উঠিয়ে দিয়ে এসেছিলাম। বার বার ফোন দিয়ে বলছিলো কোথায়। জ্যাম ছিল না তাও বার বার বলছিলো যে দেরি হচ্ছে। হয়তো এটাই ছিল ওর জীবনে শেষ যাত্রা।

তিনি বলেন, সেদিন কেউ এগিয়ে আসে নাই। কত ছাত্র ছিল দারোয়ান ছিল কেউ এগিয়ে আসেনি। আমার ছেলেকে ওরা শিবির বলে মেরে ফেলেছে। আমার ছেলেকে অনেক কষ্ট দিয়ে মেরেছে। আমার ছেলের কথা গুলো আমার কানে বাজে। আজ ৫ বছর চলে গেছে আমি কিছুই ভুলতে পারিনি।

তিনি বলেন, নিম্ন আদালতে মামলার রায় হয়েছিল। ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আদালত। আসামিদের মধ্যে এখনও যে ৩ জন পলাতক রয়েছে তাদের যেন দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয় এবং দ্রুত রায়টা কার্যকর করা হয়। তবে জেল থেকে আবরারের খুনিরা পালিয়ে গেলো কিনা সেটাও আমি আশঙ্কা করছি।    

আবরারের মা জানান, আমার ছেলে দেশের মানুষের জন্য ফেসবুকে ইলিশ মাছ নিয়ে লিখেছিলো। পানি চুক্তির অসমতা নিয়ে লিখেছিলো ও দেশকে অনেক ভালোবাসতো। ও কোন দল বা রাজনীতির কারণে ফেসবুকে লিখেছিলো না। আমরা সবাই চাই দেশের সাধারণ মানুষগুলো ভালো থাক।

ইএইচ

Link copied!