শ্যামল সরকার, চাঁদপুর
অক্টোবর ১৩, ২০২৪, ১২:০৯ এএম
শ্যামল সরকার, চাঁদপুর
অক্টোবর ১৩, ২০২৪, ১২:০৯ এএম
মা ইলিশ রক্ষায় আজ রোববার (১৩ অক্টোবর) থেকে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। ইতোমধ্যে ঘাটে ভিড়েছে মাছ ধরার সব ট্রলার।
মা ইলিশ রক্ষায় দেশের সাগর ও নদীগুলোতে মাছ শিকারের ক্ষেত্রে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।
শনিবার দিনগত রাত ১২টার পর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সাগর ও নদীগুলোতে জারি থাকবে এ নিষেধাজ্ঞা। এ সময়ে সাগর ও নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকার, মজুত ও পরিবহণ দণ্ডনীয় অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হবে।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রজননের সময় বিবেচনা করে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাকে সামনে রেখে এই ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রাখার পাশাপাশি মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানও বাস্তবায়ন করা হবে। ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইতোমধ্যে নৌকাসহ মাছ ধরার সরঞ্জামাদি তীরে ওঠাচ্ছেন উপকূলের জেলেরা।
আইন অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন ইলিশ মাছ আহরণ ও বিক্রি করলে দায়ী ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানাসহ উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
প্রতিবছর এই সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পদ্মা-মেঘনা নদীতে ছুটে আসে। আগামী ২২ দিন চাঁদপুরের মেঘনা নদীর ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় কোনো জেলে নদীতে নামতে পারবেন না। ইতোমধ্যে পদ্মা-মেঘনা পাড়ের জেলেরা জাল নৌকা তীরে উঠিয়ে নিয়েছেন।
এদিকে কর্মহীন এ মৌসুম নিয়ে বরাবরের মতোই দুশ্চিন্তা ভর করেছে উপকূলবর্তী জেলেদের মাথায়। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
সূত্রে জানা গেছে, অর্ধলক্ষাধিক জেলে রয়েছেন চাঁদপুরে। এর মধ্যে ৪৩ হাজার জেলে নিবন্ধনকৃত। শুধু নিবন্ধনকৃত জেলেরাই সরকারি সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল পেয়ে থাকেন কর্মহীন এ মৌসুমে। তাই সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার দাবি এখানকার জেলেদের।
চাঁদপুরের মেঘনা পাড়ের বেশ কয়েকজন জেলে আমার সংবাদকে বলেন, কিছু কিছু জেলে আইন মানছে না। ২২ দিন মাছ ধরতে পারবো না কিন্তু পরিবার নিয়ে কীভাবে দিন কাটে সে খবর কেউ রাখে না। আমাদের যে চাল দেয়, সেটি দিয়ে কিছুই হয় না। চালের সঙ্গে আনুষঙ্গিক জিনিস লাগে। সে খরচ কীভাবে পাবো? ধারদেনা ও কিস্তির টাকা দিয়ে আমাদের চলতে হয়। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারি না। অভাবে পরে অনেক জেলে বাধ্য হয়েই নদীতে নামে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন আমার সংবাদকে বলেন, এ বছর ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে পালিত হবে। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে কোনো জেলে নদীতে নামলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু জেলে নয়, কোনো সাধারণ ক্রেতার হাতে ইলিশ পাওয়া গেলে, তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশের পাশাপাশি এবার সেনাবাহিনীও মাঠে থাকবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান আমার সংবাদকে বলেন, আগামী ২২দিন যেন কোন অসাধু জেলে নদীতে না নামে সেজন্য উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ঘাটে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা হয়েছে। আগামী ২২ দিন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নদীতে পাহারায় থাকবে। নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার জন্য নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটরা উপস্থিত থাকবেন।
ইএইচ