Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪,

মহেশপুর সীমান্তে তিন মাসে মানব পাচারের সময় আটক ৩৫৩

মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি:

মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি:

অক্টোবর ১৬, ২০২৪, ১২:৪২ পিএম


মহেশপুর সীমান্তে তিন মাসে মানব পাচারের সময় আটক ৩৫৩

ঝিনাইদহের সীমান্তবর্তী উপজেলা মহেশপুর। এই উপজেলার সীমান্তের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে ইছামতি নদী। বেশ কিছু এলাকায় ভারতীয় অংশে নেই কাঁটাতারের বেড়া। সুযোগ সন্ধানী কিছু অসাধু ব্যক্তি ও চোরাকারবারিরা সীমান্তের কাঁটাতার বিহীন অংশে মানুষ পাচার সহ অবৈধ কার্যকলাপের জন্য ব্যবহারের চেষ্টা করে। দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সীমান্তের প্রতিটি এলাকায় জোরদার করা হয়েছে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। 

ফলে বিজিবি’র অভিযানে প্রায়ই আটক হচ্ছে সাবেক মন্ত্রী, হত্যা মামলার আসামি, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দালালের মাধ্যমে ভারতে পাচারের চেষ্টারত নারী-পুরুষ ও দালাল এবং ভারতীয় নাগরিক।

সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাটিলা, বাঘাডাঙ্গা, খোশালপুর, ভবনগর, সামন্তা সহ সীমান্তের কাটাতারবিহীন এলাকা দিয়ে ঘটছে বাংলাদেশি নারী-পুরুষ,রোহিঙ্গা পাচার ও পাচারের চেষ্টা। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক রাজনৈতিক নেতা, সাবেক মন্ত্রীও ভারতে পালানোর চেষ্টা করছেন এসব সীমান্ত এলাকা দিয়ে। তবে পাচারের চেষ্টার ঘটনায় বিজিবি’র অভিযানে আটককৃতদের অধিকাংশই নারী। তারা সন্ধ্যা, মধ্যরাত ও ভোররাতের সময়কেই বেছে নেয় সীমান্ত পারাপারের জন্য।

স্থানীয়রা বলেছেন, সীমান্ত থেকে একটু দূরের মানুষ অবৈধ পাচারের সাথে জড়িত, কারণ সীমান্ত এলাকায় বিজিবি’র হাতে আটকের ভয় রয়েছে। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এনে নিজেদের জিম্মায় রেখে রাতে নদী সাতরিয়ে ভারতে পাচারের চেষ্টা করে।

জানা যায়, এসব পাচারের কাজের মূল হোতারা থাকেন যশোর জেলার চৌগাছা ও ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা শহর ও আশপাশের এলাকায়। তাদের মাধ্যমে সীমান্তবর্তী এলাকার দালাল রা ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে ভারতে নারী-পুরুষ পাচারের জন্য বাহক হিসাবে কাজ করে।

বিজিবি’র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঝিনাইদহের মহেশপুরের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা রয়েছে ৭৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাড়ে ১০ কিলোমিটার অংশে খণ্ড খণ্ড আকারে ভারতের অভ্যন্তরে নেই কাঁটাতার। ফলে কাঁটাতার বিহীন অংশে মানুষ পাচারসহ অপরাধমূলক কাজের প্রবণতার চেষ্টা থাকে বেশি। অন্য এলাকার সাথে এসব অংশে দিনে ও রাতে আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে কয়েকগুণ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি’র) টহল ব্যবস্থা, চলছে নিয়মিত তল্লাশি।

ফলে চলতি বছরের ৫ আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভারতে পাচারের চেষ্টার সময় ৩৫৩ জনকে আটক করেছে বিজিবি। এর মধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, ঢাকা মহানগরের ৩৮ নং ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী ও হত্যা মামলার আসামি কিলার অনিক, ৯ জন দালাল, ১০ ভারতীয় নাগরিক, ১০ জন রোহিঙ্গা এবং শিশু সহ বাংলাদেশি নারী-পুরুষ ২৯৬ জন। যা আটকের হারে গেল এক বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

২০২৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৯শ’ (৮৭৪ এর বেশী) মানুষকে পাচারের চেষ্টার ঘটনায় আটক করে বিজিবি। ভারত থেকে আসার সময়ও অনেকে আটক হয়। এদের মধ্যে বাংলাদেশি, ভারতীয় নারী-পুরুষ ছিল। সেসময় পাচারের ঘটনায় অভিযুক্ত অনেক দালালও আটক হয়। তবে পাসপোর্ট অধ্যাদেশ আইনের দুর্বলতা সীমান্তে অবৈধ পাচার রোধে অন্যতম অন্তরায় বলে দাবি করেন সিনিয়র আইনজীবীরা।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তের মাটিলা এলাকায় বিজিবি-৫৮ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এর সাথে ৬৮ ও ৮ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএসএফ এর পক্ষ থেকে জানানো হয় গেল দুই মাসে সীমান্তে কমেছে পাচারের ঘটনা। সাধারণত বাংলাদেশিরা পাসপোর্ট বিহীন অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের যাওয়ার চেষ্টার সময় বিজিবি’র হাতে আটক হলে তাদেরকে ১৯৭৩ সালের পাসপোর্ট অধ্যাদেশ আইনে মামলা করে থানায় সোপর্দ করা হয়।

এই আইনে সাজা তিন মাস কারাদণ্ড অথবা ৫শ’ টাকা জরিমানা। ফলে আদালতে আসামীরা জামিন ধরলে সাথে সাথেই জামিন হয়ে যায়।এছাড়া কোন বিদেশি নাগরিক বা ভারতীয় নাগরিক যদি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসে আটক হয় তাহলে তাদের ক্ষেত্রে ‘দি কন্ট্রোল অফ এন্ট্রি এ্যাক্ট-১৯৫২’ আইনে মামলা করে থানায় সোপর্দ করা হয়।

 সাম্প্রতিক সময়ে বিজিবি’র অভিযানে আটক কক্সবাজার রোহিঙ্গা পল্লীর এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, জুলুলী এলাকার রবিউলে মাধ্যমে ইন্ডিয়ান ১৮ হাজার এবং বাংলাদেশি ৫ হাজার টাকায় সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেবে এমন চুক্তি হয়েছিল।

পরে রাতে বিজিবি আমাদের আটক করে। ঝিনাইদহের মহেশপুর বিজিবি-৫৮ব্যাটালিয়নের পরিচালক শাহ মো: আজিজুস শহীদ বলেন, আগের তুলনায় সীমান্তে অবৈধ পাচার কমেছে কয়েকগুণ। বিজিবি নজরদারিতে পদ্ধতি বদলেছে। যার সফলতাও আসছে। পাচার রোধে ভারত অংশে কাঁটাতার নির্মাণে বিএসএফ এর সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

ঝিনাইদহের সিনিয়র আইনজীবী শেখ আব্দুল্লাহ মিন্টু বলেন, আইনের মাধ্যমে মানুষকে সাজা দেওয়ার মানেই হল নজির স্থাপন করা বা ভীতি সঞ্চার করা। যাতে করে দণ্ডিত ব্যক্তি বা অন্য যারা অপরাধের সাথে জড়িত তারা এটা দেখে ভয় পায় এবং ভবিষ্যতে অপরাধ মুলক কর্মকাণ্ড থেকে বেরিয়ে আসে।

বিভিন্ন মামলার তথ্যসূত্রে জানা যায়, মহেশপুর উপজেলার জলুলী গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে সজল,কুলতলা গ্রামের সামছুউদ্দিন মিজানুর রহমান,লেবুতলা গ্রামের ফজর আলী ছেলে আব্দুল সালাম,বাঘাবাঙ্গা গ্রামের আজিজুল খলিফার ছেলে আফান খলিফা,পরমানিকের ছেলে হৃদয়, মাইলবাড়িয়া গ্রামের সুমন,নুর-ইসলামের ছেলে মফিজ খোড়া, নেপা গ্রোমের ফজলু রহমানের লাল মিয়া, সলেমানপুর গ্রামের ইব্রাহীম ছেলে কদম আলী, একই গ্রামের সুজন আলী ও সোবহান সহ সীমান্ত এলাকার শতাধিক দালাল রয়েছে যারা মানব চোরাচালানের সাথে জড়িত। এদের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠন (আরডিসির) নির্বাহী প্রধান আব্দুর রহমান বলেন, মামলার আসামিদের আটক করতে পারলে সীমান্তের মানব চোরাচালান অনেকটাই কমে আসবে।

বিআরইউ

Link copied!