Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪,

‘ভোট আইলে সবাই শুধু আশা দেয়, কেউ ব্রিজ করে দেয় না’

আমিনুল ইসলাম, সখীপুর (টাঙ্গাইল)

আমিনুল ইসলাম, সখীপুর (টাঙ্গাইল)

অক্টোবর ৩০, ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম


‘ভোট আইলে সবাই শুধু আশা দেয়, কেউ ব্রিজ করে দেয় না’

‘ব্রিজ অবো হুনতে হুনতে বুইড়া অয়া গেলামগা, হেই ৭০ বছর ধইরা হুনতাছি ব্রিজ অব, ব্রিজ অব তা আইজো পর্যন্ত কোনো খবর নাই। আমরা মুরুব্বি অয়া গেছি, আমাদের পোলাপানরাও বাপ-দাদা অয়া গেছেগা, কিন্তু আমাদের এই অবহেলিত গেরামে অহনো ব্রিজ অইলো না।

কথাগুলো বলছিলেন সখীপুর উপজেলার বরইতলা এলাকার ৮৫ বছরে বয়সের আব্দুল কুদ্দুস মিয়া।

টাঙ্গাইলের সখীপুর ও বাসাইল উপজেলার সীমান্তবর্তী দাঁড়িয়াপুর গ্রামের পশ্চিমপাশ দিয়ে বয়ে গেছে বংশাই নদী। সখীপুর ও বাসাইল উপজেলাকে আলাদা করেছে এই নদী।

যুগযুগ ধরে সেখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন দুই পারের লোকজন। শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো ও বর্ষা মৌসুমে নৌকা হচ্ছে লোকজনের নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা। সাথে ভারী মালামাল বা রোগী থাকলে অতিরিক্ত ৩০ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয় তাদের।  
সরেজমিনে জানা যায়, সখীপুর উপজেলার দাঁড়িয়াপুর ইউনিয়নের বরইতলা এলাকায় বংশাই নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। ওই সাঁকো দিয়েই দুই পারের লোকজনসহ বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। আবার বর্ষা মৌসুমে একমাত্র ভরসা নৌকা। সেতু না থাকায় দুই উপজেলার ১৪ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। নদীর এপারে-ওপারে রয়েছে দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মাদরাসা, চারটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও চারটি সাপ্তাহিক হাট।

স্থানীয়রা জানান, সখীপুর উপজেলার দাঁড়িয়াপুর, লাঙ্গুলিয়া, আকন্দপাড়া, আবাদি, চাকলাপাড়া, কৈয়ামধু, বেতুয়া, শোলাপ্রতিমা ও দেওবাড়ী এবং বাসাইল উপজেলার সুন্না, গিলাবাড়ী, কল্যাণপুর, মৈলানপুর, ডুমনীবাড়ী, বার্থা, কলিয়া ও কাউলজানী গ্রামের লোকজন এ নদী দিয়ে পারাপার হন।

দাঁড়িয়াপুর গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, ‘নেতারা ভোটের সময় বলে ব্রিজ করে দিবে। ভোটের পর আর তাদের খবর থাকে না। এভাবে যৌবনকাল থেকে ব্রিজ তৈরি হবে শুনতে শুনতে বুড়ো হয়ে গেলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত ব্রিজ দেখতে পেলাম না’।

আরেক বৃদ্ধ হাসমত আলী বলেন, কত এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান হলো, সবাই আশা দেয় কেউ আর ব্রিজ করে দেয় না। মৃত্যুর আগে কি ব্রিজ দেখে যেতে পারব?  

কথা হয় শিক্ষার্থী সিয়ামের সাথে। তিনি বলেন, আশপাশের এলাকার ছেলে-মেয়েরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। চলাচলের সুবিধার জন্য শুকনা মৌসুমে এলাকার লোকজন ১০০ গজের সাঁকো নির্মাণ করেন। তবে বর্ষায় পানিতে বাঁশের সাঁকো ডুবে যায়। তখন নৌকা দিয়ে চলাচল করেন লোকজন। ফলে দুই পাড়ের শিক্ষার্থীসহ অন্যদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আমরা একটি ব্রিজ চাই। এই ব্রিজটা হলে আমাদের সব দিকেই সুবিধা হবে।

দাঁড়িয়াপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘এখানে ব্রিজ না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা নৌকা ও বাঁশের সাঁকোতে ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সময় অনেক শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন’।

দাঁড়িয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী আসিফ বলেন, আমি স্থানীয় উপজেলার এলজিআরডির সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছেন আলোচনা করেছি। তারা কথা দিয়েছেন খুব অল্প সময়ে মধ্যে আমাদের ব্রিজটি করে দেবেন।

সখীপুর এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল জলিল মিয়া বলেন, সেতুটির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে সেতুটি নির্মাণের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

ইএইচ

Link copied!