নিজস্ব প্রতিনিধি
নভেম্বর ১৮, ২০২৪, ০৪:০৬ পিএম
নিজস্ব প্রতিনিধি
নভেম্বর ১৮, ২০২৪, ০৪:০৬ পিএম
ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ব্যাপক আলোচিত নাম হলেও ফরিদগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমীর নির্বাচনে ফ্যাসিবাদী কৌশল অবলম্বনের গুঞ্জন উঠেছে। ১৮ নভেম্বর সোমবার বিকেলে এ নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের গণবিপ্লব নিয়ে ৭ আগস্ট জামায়াতের এক কর্মসূচিতে বিতর্কিত মন্তব্য করেন তৎকালীন উপজেলা আমীর মো. ইউনুছ হেলাল। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিরূপ পরিস্থিতির তৈরি হয়। এরই প্রেক্ষিতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে ১১ আগস্ট তার সদস্যপদ (রুকন পদ) বাতিল করে কেন্দ্রীয় জামায়াত। এর পূর্বেও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ইউনুছ হেলালকে আমীর হিসেবে পুনঃনির্বাচিত করতে বিভিন্ন অন্যায্য কৌশলের আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, গত ৬ নভেম্বর, ২০২৪ ফরিদগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের সদস্যদের (রুকন) প্রত্যক্ষ গোপন ভোটে জেলা জামায়াতের মজলিসে শূরা সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক উপজেলা আমীর আবুল মান্নান খান এবং মো. ইউনুছ হেলাল। ফলে ২০২৫-২৬ সেশনে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আমীর হিসেবে আলোচনায় উঠে আসে এ দুজনের নাম। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ১৩ নভেম্বর, ২০২৪ আব্দুল মান্নান খানকে জেলার জনশক্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ফলে ফরিদগঞ্জ থেকে পুনরায় একজন জেলা মজলিসে শূরার সদস্য নির্বাচিত করার প্রয়োজন হবে। এদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আবুল হোসাইনকে হাইমচর উপজেলার জনশক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে সাবেক আমীর ইউনুছ হেলালের পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পথ নিষ্কণ্টক করতেই এমনটি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা।
অন্যদিকে মাত্র ৩২ ঘণ্টার নোটিশে উপজেলা জামায়াতের আমীর নির্বাচনের এ গুরুত্বপূর্ণ সভার আয়োজন করা হয়েছে। ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়কে সংক্ষিপ্ত করার লক্ষ্যেই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অতি স্বল্প সময়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে মন্তব্য তাদের।
জামায়াতে নিজ থেকে প্রার্থী হওয়া কিংবা ভোট চাওয়ার প্রচলন না থাকলেও, ধরি মাছ না ছুঁই পানি কৌশলে সদস্যদের কাছে নিজেকে তুলে ধরছেন মো. ইউনুছ হেলাল। তাঁর স্ত্রী মাহমুদা বেগম উপজেলা মহিলা জামায়াতের সভানেত্রী হওয়ায় নারী সদস্যদের ভোটও ইউনুছ হেলালের অনুকূলে প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
উপজেলা জামায়াতের রুকন হারুন-অর-রশিদ (ছদ্মনাম) জানিয়েছেন, একটি শব্দের ভুল প্রয়োগে হাসিনার মতো স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে। নেতা নির্বাচনে একটি ভুল সিদ্ধান্ত জামায়াতকে চাপে ফেলবে না, এর কোন নিশ্চয়তা নেই। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে ইউনুছ হেলাল যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন, তা সামাল দিতে কেন্দ্রকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। তিন মাসের মাথায় যদি তাঁকে পুনরায় আমীর নির্বাচন করা হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার তোপের মুখে পড়তে হয় কিনা, সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এমনটি হলে সাংগঠনিক সিস্টেমের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হতে পারে। এ পর্যন্ত নেওয়া পদক্ষেপগুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং পরিকল্পিত। ২০০৯ সালে জামায়াত মনোনীত ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব সংগঠনের যে ইমেজ সংকট তৈরি করে গেছেন, তার রেশ আজও কাটেনি। ইউনুছ হেলাল আমীর হয়ে আরেকটি ইমেজ বিপর্যয় সৃষ্টি হোক তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।
এ বিষয়ে জেলা জামায়াতের আমীর মো. বিল্লাল হোসেন মিয়াজী বলেন, আমাদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি রয়েছে। আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে জেলার সকল উপজেলার নির্বাচন সম্পন্ন হবে। আব্দুল মান্নান খান জেলার জনশক্তি। উপজেলা আমীর নির্বাচনে তিনি ভোট পাবেনও না, দিবেনও না। আর জামায়াতে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। প্রত্যেক সদস্যই (রুকন) একই সাথে ভোটার এবং প্রার্থী। অধিকাংশ ভোটারগণ যাকে বেছে নিবেন, তিনি নির্বাচিত হবেন।
ইউনুছ হেলাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রুকনিয়াত বাতিল হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ওনি উপজেলা আমীরের পদ থেকে বাদ পড়েছিলেন। এরপর তিনি আবার রুকন হওয়ার আবেদন করেছেন এবং রুকন হয়েছেন। ভোটাররা চাইলে তাকে আমীর নির্বাচিত করতে পারবেন। কেউ কারো পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচারণা চালানোর তথ্য প্রমাণিত হলে সাথে সাথে আমরা এর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিবো। তার রুকনিয়াত মুলতবি হয়ে যাবে। তিনি আর ভোট দিতে পারবেন না। তবে এটা প্রমাণভিত্তিক হতে হবে।
আরএস