ফেনী প্রতিনিধি
নভেম্বর ২২, ২০২৪, ০৩:৪৫ পিএম
ফেনী প্রতিনিধি
নভেম্বর ২২, ২০২৪, ০৩:৪৫ পিএম
ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ১৭০০ পরিবার তাদের বসতঘরসহ সর্বস্ব হারিয়েছে।
বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে এগিয়ে এলেও দীর্ঘ তিন মাস পর সরকারি উদ্যোগে শুধুমাত্র ১১০টি পরিবারকে ঘর করে দেওয়ার প্রাথমিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
এতে মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছে শতশত পরিবার। তবে, স্থানীয় জেলা প্রশাসনের দাবি পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে পুনর্বাসন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, এবারের বন্যায় ফেনীতে ৮ হাজার ৯৫টি কাঁচাঘর, ২৫০টি আধাপাকা ঘর সম্পূর্ণ ধ্বসে যায়। এতে আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে ১৬৩ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ৫৩ হাজার ৪৩৩টি কাঁচাঘর এবং ২ হাজার ৬৩২টি আধাপাকা ঘরের আংশিক ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৩৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে ৬৪ হাজার ৪১৫টি ঘরবাড়িতে মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৫৩৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ফুলগাজীর জগতপুর, পরশুরামের পূর্ব সাহেব নগর, বক্সমাহমুদ, টেটেশ্বর, সোনাগাজীর নবাবপুর, ফেনী সদরের কাজীরবাগ, গিল্লাবাড়িয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে কিছু ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে ক্ষতির তুলনায় এটি সংখ্যায় একবারেই নগণ্য।
এ ব্যাপারে ফুলগাজীর আমজাদহাট ইউনিয়নের মনিপুর এলাকার আবু তাহের মজুমদার বলেন, বন্যায় সব হারিয়ে তিনমাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছি। বাড়ির জিনিসপত্র থেকে শুরু করে জমির ফসল সবকিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। এতদিন যেমন-তেমন দিন পার করলেও এখন শীতের রাতে খুব কষ্ট করতে হচ্ছে। লোকজন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে। তবে কেউ আমার ঘর করে দিলে খুব উপকার হয়।
একই অবস্থায় উপজেলার জগতপুর এলাকার আছমা আক্তার ঘর হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। বলেন, বন্যার পর থেকে কয়েক দফায় বাড়িতে এসে নাম নিয়েছে। তবে এখনো মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়নি। ছেলে-মেয়ে নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটাচ্ছি। আবার দিনের বেলায় বাড়ি এসে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে। এমন কষ্ট কাউকে বুঝাতে পারব না।
ছাগলনাইয়া উপজেলার নজরুল ইসলাম নামে আরেক ক্ষতিগ্রস্ত বলেন, আমাদের সহযোগিতায় অনেকে অনেক কিছু করেছে শুনি। তবে তা এখনো খাতা-কলমে আর বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ। বন্যার তিন মাস হয়ে গেলেও অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থাকতে হচ্ছে। সরকারি সহায়তা ছাড়া আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব না।
এ ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ২০ হাজার বান্ডিল টিন ও নগদ ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। তারমধ্যে এখন পর্যন্ত ৪০০ বান্ডিল টিন ও নগদ ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রতি এক বান্ডিল টিন ও নগদ ৩ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হচ্ছে। আশা করি চলতি সপ্তাহের মধ্যেই আরও কিছু বরাদ্দ আসতে পারে।
তিনি আরও বলেন, পুনর্বাসনে ইউএনডিপি তিন হাজার পরিবারকে ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা করে, রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ছয় হাজার পরিবারকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা, মাস্তুল ফাউন্ডেশন ৯৯২ জনকে ১১ লাখ টাকা, রিকের পক্ষ থেকে ১ হাজার ৪৪৫ জনকে ৯৯ লাখ টাকা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসা ১ হাজার ৫৬০ পরিবারকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা সহায়তা প্রদান করছে। এছাড়া সাড়ে ৬ লাখ টাকায় ১৫৭ পরিবারকে চার বান্ডেল করে টিন দিচ্ছে সেনাবাহিনী।
মাহবুব আলম বলেন, বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৭১৮টি ঘরের মধ্য থেকে পাইলট প্রোগ্রামের আওতায় জেলায় ১১০টি পাকাঘর করে দেওয়া হবে। তারমধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ৩৫টি, ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় ২০টি করে, দাগনভূঞায় ১০টি ও সোনাগাজী উপজেলায় ৫টি ঘর করা হবে। পরবর্তী ধারাবাহিকভাবে অন্যদেরও এ সহায়তা প্রদান করা হবে।
এ ব্যাপারে ফেনীর নবাগত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, এখনও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সম্পূর্ণ পুনর্বাসন নিশ্চিত করা যায়নি। তবে আংশিক পুনর্বাসনের আওতায় বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৭১৮টি পরিবারের তালিকা এসেছে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় ১১০টি ঘর করে দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে পুনর্বাসন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
ইএইচ