শাহজাহান সেলিম বুলবুল, সিলেট
নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ০১:৩৫ পিএম
শাহজাহান সেলিম বুলবুল, সিলেট
নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ০১:৩৫ পিএম
সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নতুন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আশিক উদ্দিন।
পিপি হয়েই আলোচনায় তিনি। আর এই আলোচনার অন্যতম কারণ হচ্ছে দরজায় ঝুলানো একটি সাইনবোর্ড। এই সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে- ‘পিপিকে টাকা দিতে হয় না।’ সিলেটের আদালতে এটি একটি ব্যতিক্রমী সাইনবোর্ড। কারণ; সেবা পেতে সাধারণ মানুষ ছুটে আসেন সরকার নিযুক্ত আইনজীবীদের কাছে। কিন্তু পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতেন। টাকাও দিতে হতো তাদের।
এ অবস্থার ইতি ঘটাতে যাচ্ছেন পিপি আশিক উদ্দিন।
সেবা পেতে যারাই আসছেন তাদের কাছ থেকে তিনি টাকা নিচ্ছেন না। কেন এই সাইনবোর্ড এ প্রশ্নের জবাবে পিপি আশিক চৌধুরী জানিয়েছেন- ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর আশপাশের মানুষের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেছি। এতে কিছুটা সন্দেহ হওয়ার কারণে এই সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছি। সরকার পিপিকে মানুষের সেবা করার জন্য টাকা দিচ্ছে। সেখানে পিপির পক্ষ থেকে টাকা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই।’
অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন। সিলেট জেলা বারে এক নামেই পরিচিত তিনি। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে তাকে সিনিয়র ধরা হয়। বিগত ১৫ বছর নিরলসভাবে মামলায় আক্রান্ত হওয়া নেতাকর্মীদের সেবা দিয়ে গেছেন। এর আগে তিনি ৯২ সাল থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত এডিএম কোর্টে অতিরিক্ত পিপি ছিলেন। ২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন নারী নির্যাতন দমন আদালতের পিপি। সিনিয়র আইনজীবী হওয়ার কারণে এবার পিপি হওয়ার তালিকায় শীর্ষে ছিল অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিনের নাম।
কিন্তু প্রথমদিকে সিলেটে ১০৩ জন পিপি, এডিশনাল পিপি ও পিপিদের যে তালিকা এসেছিল সেখানে পিপি হিসেবে আশিক উদ্দিনের নাম ছিল না। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি হিসেবে তালিকায় ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির দুইবারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এটিএম ফয়েজ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হন সিলেটের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা। তারা এ নিয়ে আন্দোলনেও নামেন।
সিলেটের দুই পিপির কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাদের এই আন্দোলনের মুখে গত ৩ নভেম্বর সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে আশিক উদ্দিন নিযুক্ত হন। তিনি নিয়োগ পাওয়ার পরপরই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারাও সন্তুষ্ট হন। আন্দোলন থেকে সরে আসেন।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বিগত সরকারের সময় প্রথম দিকে সিলেটে পিপি পদকে কলুষিত করা হয়েছে। ওই সময় সেবা নিতে আসা মানুষজনকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। বাদী, বিবাদী উভয়পক্ষের কাছ থেকে টাকা গ্রহণের রীতি চালু ছিল। বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে নানা ধরনের কথাবার্তা ছিল। ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ পুষলেও আইনজীবীদের স্বার্থ বিবেচনা করে কেউ প্রতিবাদ করেননি।
তারা জানিয়েছেন- আগে কোনো মামলার আসামির জামিন আবেদনে পিপিকে টাকা দিতে হতো।
মামলার সাক্ষী হাজির হবে, পিপিকে টাকা দিতে হয়েছে। মামলা সংক্রান্ত যেকোনো কাজেই বাদী ও বিবাদী উভয়পক্ষের কাছ থেকে টাকা নেন পিপি। এতে করে প্রতিটি মানুষই জানতেন পিপিকে টাকা দেয়ার নিয়ম। অথচ বাদী-বিবাদী কোনো পক্ষ থেকেই পিপিকে টাকা নেয়ার নিয়ম নেই।
এ ছাড়াও পিপি কার্যালয়কে ঘিরে একটি সিন্ডিকেটও গড়ে উঠেছিল। ফলে সেবা নিতে আসা লোকজনের ভোগান্তির অন্ত ছিল না।
পিপি কার্যালয় সূত্র জানা গেছে- বর্তমানে প্রতিদিনই ১৫ থেকে ২০ জন সাধারণ মানুষ পিপি’র কাছে সেবা নিতে আসেন।
সরকারি আইনজীবী হিসেবে পিপি’র পক্ষ থেকে যে সেবা দেয়ার কথা সেই সেবা পিপি’র পক্ষ থেকে বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। অনেকেই টাকা দিতে চান। তাদের সাফ জানিয়ে দেয়া হয়; পিপিকে টাকা দিতে হয় না। বৃহস্পতিবার সেবা নিতে আসা কয়েকজন ব্যক্তি জানিয়েছেন- পিপি কার্যালয়ে এসে টাকা দেয়ার রীতি পুরোনো। এ কারণে এ প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হয়। কিন্তু এবার নতুন পিপি ব্যতিক্রম।
তারা বলেন- সেবাপ্রত্যাশীরা এ ধরনের সেবা পেলে বিচারাঙ্গনের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়বে। সিলেট জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও এডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট আল-আসলাম মুমিন জানিয়েছেন- পিপি’র এই উদ্যোগ ইতিবাচক। বর্তমানে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বিচারাঙ্গনে কোনো প্রভাব বিস্তার নেই। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে পিপিসহ আমরা সবাই কাজ করছি। অতীতে কী হয়েছে জানি না, বর্তমানকে আমরা সুন্দর করতে চাই। পিপি আশিক উদ্দিন জানিয়েছেন- হাজারো মানুষের জীবন বিসর্জন ও প্রায় ৩০ হাজার মানুষের পঙ্গুত্ব বরণের মধ্য দিয়ে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এ কারণে পূর্বের সব অন্যায়কে সরিয়ে আমরা নতুন করে যাত্রা শুরু করেছি। এখানে মানুষের সেবা নিয়ে কোনো ধরনের গাফিলতি সহ্য করা যায় না। এ কারণে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন- অতীতে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানকে কলুষিত করা হয়েছে। জনগণের আস্থা ফেরাতে এখন আমরা কাজ করতে গিয়ে পূর্বের অনেক অসঙ্গতির মুখোমুখি হচ্ছি। কিন্তু চব্বিশের রক্তাক্ত ইতিহাসের কথা মনে রেখে আমরা সবকিছুকে নতুন করে সাজাচ্ছি। এই সাজানোর অংশ হিসেবে অন্তত আদালত পাড়ায় আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সবাই কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
ইএইচ