হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি:
নভেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৩:৪১ পিএম
হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি:
নভেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৩:৪১ পিএম
‘ও বউ ধান ভানেরে... ঢেঁকিতে পা দিয়া... ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া ও বউ ধান ভানেরে।’ গ্রাম বাংলার গৃহবধূদের কণ্ঠে আগে প্রায়ই শোনা যেত এ ধরনের সুর আর ঢেঁকির ঢিপ ঢিপ শব্দ। ঢেঁকির তালে কত গান ও কত প্রবাদ গাওয়া হতো গ্রাম্য মেয়েদের যার কোন ইয়ত্তা নেই। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে অনাদিকালের এই ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে।
সূত্র মতে, ঢেঁকি হচ্ছে লোকজ ঐতিহ্যের সাথে জড়িত ধান ভানা বা শস্য কোটার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র বিশেষ। ঢেঁকি দ্বারা চাউলের ছাতু,ধান, চিড়া, মাসকালাই এর ডাল, মসলা, হলুদ, মরিচ ইত্যাদি ভাঙানো হয়।
আড়াইবাড়িয়ার মামুন পৌর এলাকা কুঁড়ি ঘাটের মুদি দোকানি ,সাহেবের চরের সুতি মিয়াসহ অনেকে জানান,ঢেঁকিতে ধান ভাঙতেন গ্রামের বৌ-ঝিরা তাদের সঙ্গে যোগ দিতেন পাড়ার কিশোরীরা। গ্রামের বধূরা ঢেঁকির তালে তালে তাদের বাপ দাদার আমলের গীত গেয়ে চলত।
উপজেলার সাহেবের চর এলাকার লোকজ সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী সেই ঢেঁকি আজ বিলুপ্ত প্রায়।উপজেলার প্রতিটি গ্রামে আশির দশকে ঢেঁকির ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই ঢেঁকি আজ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে ইঞ্জিনচালিত মেশিনের কাছে। বর্তমান যান্ত্রিকতার যুগে এই চিরচেনা ঐতিহ্য যেন প্রায়ই হারিয়ে গেছে। এক সময় উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রায় সকল বাড়িতে ছিল ঢেঁকি। কিন্তু এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।যদিওবা দু-একটা চোখে পড়ে অযত্নে পড়ে আছে উঠানের কোণে উইপোকারা বসতি করে নিয়েছে, হয়ত কিছুদিন পড়ে কোথাও আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
বাড়িতে অতিথি এলে ঢেঁকিতে ধান কুটার তোড়জোড় শুরু হতো। এই নিয়মে চিড়ে, ছাতু তৈরি করা হতো। তারপর গভীর রাত অবধি চলতো রকমারি পিঠা-পায়েস বানানো আর সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে খাওয়ার আমেজটা ছিল খুবই উপভোগ্য। ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত, পোলাও, জাউ আর ফিরনী ছিল অত্যন্ত সুস্বাদু।
উপজেলার সাহেবেরচর গ্রামের বাহার উদ্দিন, খলিল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ করে রেখেছেন ঢেঁকি।
জানা যায়,ঢেঁকিতে কোটা চিড়া আর চালের গুড়ির পিঠার কোনো জুড়ি ছিল না। অন্যদিকে ঢেঁকিছাঁটা চালে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে বলে চিকিৎসকরা রোগীকে তা খাওয়ার পরামর্শ দিতেন। দ ‘দশক আগেও গ্রামগঞ্জের বাড়িতে দু’একটি ঢেঁকি দেখা যেত। এখন ঢেঁকির পরিবর্তে আধুনিক ধান ভাঙার রাইচ মিলে চাল কোটার কাজ চলছে। আবার ডিজেলের মেশিন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ ভ্যান গাড়িতে শ্যালো ইঞ্জিন নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ধান মাড়াই করা হয়।
আধুনিক যান্ত্রিক যুগে স্থানীয় গৃহবধূদের কষ্ট অবশ্য লাঘব হয়েছে কিন্তু বিলীন হয়েছে সুনিপুণ ঐতিহ্যের ধারক-বাহক। অন্যদিকে স্বাদেরও হয়েছে সমাধি বলে জানান সচেতন মহল।
বিআরইউ