ফরিদপুর প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ৬, ২০২৪, ০২:৫৬ পিএম
ফরিদপুর প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ৬, ২০২৪, ০২:৫৬ পিএম
ফরিদপুরে জমিতে হালি পেঁয়াজের চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক।
জেলার ৯টি উপজেলার বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে এখন পুরোদমে পেঁয়াজের চারা রোপণ উৎসব চলছে। জেলার লক্ষাধিক কৃষক পরিবার পেঁয়াজের চারা রোপণের মাধ্যমে আর্থিক সচ্ছলতার আশায় নতুন স্বপ্ন বুনছেন।
জেলার সদর উপজেলা, সালথা, নগরকান্দা, সদরপুর, ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, মধুখালী উপজেলায় পেঁয়াজ আবাদে ব্যস্ত থাকা কৃষকদের সাহায্য করে যাচ্ছেন বাড়ির গৃহিণী, ছেলে-মেয়েসহ স্বজনরা। তাদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লক্ষাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিকও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেঁয়াজ আবাদের শীর্ষ জেলাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় জেলা হিসেবে পরিচিত ফরিদপুর। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের সিংহভাগ জোগান দেয়া হয় ফরিদপুর থেকে। ফলে প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস এলেই নানা প্রজাতির পেঁয়াজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করেন কৃষকরা।
গত কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ার কারণে এবার কৃষকরা অধিক পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করছেন। এ বছর ফরিদপুর জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হচ্ছে। জেলার নয়টি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠজুড়ে বর্তমানে কৃষকরা হালি ও মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণের কাজ করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর ফরিদপুরে ৪৩ হাজার ২৬০ হেক্টর আবাদি জমিতে পেঁয়াজের চাষ করা হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় বেশি। এর মধ্যে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৫ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে, হালি পেঁয়াজ ৩৬ হাজার ১শ ৪০ হেক্টর জমিতে রোপণের কাজ চলছে। এছাড়া ১ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে দানা পেঁয়াজ রোপণ শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে নগরকান্দা, বোয়ালমারী ও সালথার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পেঁয়াজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করেছেন কৃষকেরা। তবে, ডিসেম্বর মাসজুড়ে চলবে পেঁয়াজের চারা রোপণের পুরো কর্মযজ্ঞ।
সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের ভাওয়াল গ্রামের চাষি ফরিদ মোল্যা বলেন, পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর অধিক সংখ্যক কৃষক পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন। প্রতিদিন ভোর থেকে পেঁয়াজের চারা উত্তোলনের পর জমিতে রোপণ করা হচ্ছে।
সালথা পাড়ার কৃষক ওবায়দুর রহমান বলেন, সালথা উপজেলা পেঁয়াজের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। কেবল হালি পেঁয়াজের চারা পরিচর্যা ও রোপণের প্রস্তুতি চলছে। কেউ কেউ শুরু করেছেন। আর কয়েকদিন পরে পুরোদস্তুর শুরু হবে।
বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের রুপদিয়া গ্রামের মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এবার শ্রমিক ও সার, সেচের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে এ বছর যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে এমন দাম থাকলে কৃষক লাভবান হবে।
নগরকান্দা উপজেলার চাষি কবির শেখ জানান, এবার পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ বেড়েছে বহু গুণে। সরকার যদি কৃষকদের প্রণোদনা মাধ্যমে সার, ডিজেল দিয়ে সহযোগিতা করতো তাহলে কৃষক উপকৃত হতো। তবে প্রণোদনা পেঁয়াজ বীজে জেলার কৃষকেরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে জেলার বড় পেঁয়াজ বীজ চাষি ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুরের সাহিদা বেগম জানান, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের দানা উৎপাদন করছেন। গত বছর পেঁয়াজের দানার দাম ভালো ছিল। তিনি এ বছর বেশী জমিতে দানার জন্য পেঁয়াজ বীজ রোপণ করেছেন।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুমে জেলার ৯টি উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বিভিন্ন ধরনের পেঁয়াজ রোপণের কাজ চলছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইএইচ