Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

হাওরে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

ডিসেম্বর ৭, ২০২৪, ০৩:৩৭ পিএম


হাওরে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ

কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলে মানুষের যাতায়াত ও জীবনমান উন্নয়নে কয়েকশ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে চলছে কর্মযজ্ঞ।

এর আগে হাওর এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলেও অনেকটা ছিল এলোমেলো। অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে এসব উন্নয়নের প্রকৃত সুফল পাচ্ছিল না হাওরবাসী।

কৃষিপণ্য পরিবহণে ও চলাচলের দুর্ভোগের কারণে পর্যটকদের আবাসন সমস্যায় গতি পায়নি সেখানকার অর্থনীতি। এ পরিস্থিতিতে ওইসব খাত চাঙ্গা করতে হাওরে চলছে উন্নয়নের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ।

নির্মিত হচ্ছে বেশকিছু সেতু, সড়ক ও পর্যটকদের আবাসনের জন্য সার্কিট হাউজ। আর কয়েকশ কোটির টাকার এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি।

একসময় অবহেলিত জনপদ হিসেবে পরিচিতি ছিল ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার হাওর অঞ্চল। কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত এই তিনটি উপজেলা আজ বহুলাংশে উন্নতি লাভ করেছে। লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। সড়ক, সেনানিবাস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবই হয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়েছে সেখানে।

তবে কয়েকটি সেতুর অভাবে উন্নয়নের প্রকৃত সুফল পাচ্ছিল না হাওরবাসী। থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরাও দুর্ভোগ-অস্বস্তিতে ছিল। এসব সমস্যা দূর করতে মিঠামইনে পর্যটকদের জন্য নির্মিত হচ্ছে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মিনি সার্কিট হাউজ। আগামী তিন মাসের মধ্যে ৪ তলা বিশিষ্ট সার্কিট হাউজটির কাজ শেষ হবে। তাছাড়া মিঠামইন সদরে ঘোড়াউত্রা নদীতে নির্মাণাধীন সেতুটির কাজও শেষের দিকে।

৩৬২ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা। এর কাজ শেষ হলে কাজীপুর-খিলপাড়াসহ অন্তত ১০টি গ্রাম সরাসরি যুক্ত হবে উপজেলা সদরের সঙ্গে। সহজ হবে কৃষিপণ্য পরিবহণ, পর্যটক ও শিক্ষার্থীদের চলাচল।

মিঠামইন সদরের মো. ওসমান গণি বলেন, এই ব্রিজটি হওয়াতে যে উন্নতি হয়েছে তা বলার বাইরে। আমরা এর আগে বৈশাখ মাসে ক্ষেতের ধান নিতে পারি না। এখন ব্রিজটি হওয়াতে আমরা সহজেই ধান নিয়ে আসতে পারব। শুধু আমরা না এই মিঠামইনে যত মানুষ আছে সবারই উন্নতি হয়েছে। এখানে একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) আছে। এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা ট্রেনিং দিতে আসে। আগে কিশোগঞ্জ যাওয়া লাগতো; এখন আর যেতে হয় না। ব্রিজটি হলে হলে ছাত্র-ছাত্রীদের নৌকা দিয়ে নদী পার হতে হবে না।

ইটনা উপজেলার বড়শিকুড়া গ্রামের আব্দুল গনি বলেন, আমরা যে গ্রামে থাকি সে গ্রামে কোন মহিলা গর্ভবর্তী হলে খুব সমস্যা হতো। যাতায়াতে খুব ঝামেলা হতো। এই ব্রিজটা নির্মিত হলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবে গর্ভবর্তী মহিলারা। আর এই ব্রিজটি হলে বর্ষা কালে এই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় বেড়ে যাবে।

ইটনা উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ননী গোপাল দাস বলেন, সেতুটি চালু হলে বহু বছরের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে হাওরের লোকজন।

তিনি আরও বলেন, ‘অষ্টগ্রামের আব্দুল্লাহপুর ও কলমা ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার মানুষজনের কাছে বহু বছরের দুর্ভোগের নাম ছিল বিলমাকসা নদী। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোকে অষ্টগ্রাম সদরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ প্রশংসা কুড়াচ্ছে এলাকাবাসীর। এখানে নির্মিত হচ্ছে ৪৫০মিটার দীর্ঘ একটি সেতু। আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুটির কাজ শেষ হবে। এটি নির্মিত হলে হবিগঞ্জের সঙ্গে অষ্টগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হবে। উপকৃত হবে কৃষি, মৎস্য ও পর্যটনখাত। পরিবর্তন আসবে মানুষের জীবনযাত্রাও। দুর্ভোগ কমবে স্থানীয় লোকজনের।’

কিশোরগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম জানান, হাওর অঞ্চেলের রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে ঠিকই কিন্তু উপযুক্ত স্থানে ব্রিজগুলো না থাকায় মানুষের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হত। হাওরবাসীর জীবনমান উন্নত করতে দুটি ব্রিজসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা বর্ষার আগেই কাজ শেষ করার চেষ্টা করব। এবং কাজের মান যাতে খারাপ না হয় সেদিকে আমরা লক্ষ রাখছি। আশাকরি সঠিক সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এবং মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

ইএইচ

Link copied!