চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:
ডিসেম্বর ১২, ২০২৪, ১২:৫৭ পিএম
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:
ডিসেম্বর ১২, ২০২৪, ১২:৫৭ পিএম
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকারকে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল হক রাসেলের বদলি স্থগিতের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
জানা যায়, যশোর অঞ্চল থেকে আমিরুল হকসহ চারজন কর্মকর্তাকে বদলি করার আদেশ দেওয়া হলে, আমিরুল হকের বদলি ঠেকাতে একটি পরিকল্পিত নাটক সাজানো হয়। দুপুরের খাবার ও টাকার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে কৃষি অফিসে জড়ো করা হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গার আহ্বায়ক আসলাম অর্ক ও সিফফাতুল ইসলাম ও ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। স্থানীয় ছাত্র নেতারা জানান, অনেকেই জানতেন না কেন সেখানে এসেছেন।
অভিযুক্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান জানান, তাকে একটি মিটিংয়ের কথা বলে ডেকে আনা হয়।
গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার বদলি ঠেকাতে সেখানে লোকজন জড়ো হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই বলতে পারছেন না কেন তারা সেখানে এসছেন। দুপুরের খাবার দেয়ার সময় সদর উপজেলার আরেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান ছাত্রদের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছিলেন। ওই দপ্তরে চাকরি করে ওই দপ্তরের কর্মকর্তাকে যারা অবরুদ্ধ করছেন, তাদেরকে কিভাবে খাবার সরবরাহ করছেন এমন প্রশ্ন করছিলেন শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার পেছনে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিন বিনতে আজিজ এবং বদলি হওয়া কর্মকর্তা আমিরুল হক রাসেলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের কেউ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আমিরুল হক রাসেল আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত। তিনি আওয়ামী লীগের লোকজনকে নানাভাবে সুবিধা দিতেন। আওয়ামী লীগের ইন্ধনেই একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা খবর পায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। আমরা এখানে এসে দেখি বেশকিছু লোকজন কৃষি অফিসের নিচে এবং দোতলায় অবস্থান করছেন। পরে উপপরিচালকের কক্ষে গেলে দেখি লোকজন একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার বদলির দাবি জানাচ্ছেন। কোনো লিখিত অভিযোগ নয়, লিখিত দাবিও নয়। তারা মৌখিকভাবে বদলি স্থগিত করার জন্য উপ-পরিচালককে চাপ দিচ্ছিলেন। আমরা তাদের সাথে কথা বলি। কথা বলে মনে হয়, তারা কিছু একটা ভুল করছেন বা প্রলোভিত হয়ে এসছেন। পরে আরও ভালোভাবে বিস্তারিত খোঁজ নেয়ার পর দেখা যায়, ওখানে আসা অল্প চার/পাঁচজন বাদে কেউ জানেনই না কেন সেখানে গেছেন। তাদেরকে বোঝানো হয়েছে, একটি মিটিং আছে। দুপুরের খাবার এবং ৩শ থেকে ৫শ টাকা দেয়া হবে। আমরা বিষয়টি অনুধাবন করে তাদেরকে প্রথমে অনুরোধ করি, একটি লিখিত আবেদন দিয়ে যেতে। কারণ, উপ-পরিচালকের বদলির আদেশ স্থগিত করার এখতিয়ার নেই। কিন্তু যারা এসছিলেন, সকলেই উগ্রতা দেখিয়ে তাদের দাবি মেনে নিতে চাপ প্রয়োগ করেন। পরে ঘটনাস্থলে ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হলে তাদের সহযোগিতায় বিষয়টি আরও যখন জানার চেষ্টা করা হয়, তখন প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে।
মূলত, টাকা দিয়ে নাটক সাজিয়ে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। পরে সকলের পরিচয় জানতে চাইলে ধীরে ধীরে প্রায় সকলেই ওখান থেকে চলে যান।বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গার আহ্বায়ক আসলাম অর্ক বলেন, ‘আমরা সেখানে গিয়ে এক প্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায় পাই জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালককে। একপর্যায়ে আমরা সব ঘটনা শুনি। যারা উপপরিচালককে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন, তাদেরকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে গোলযোগ করার জন্য সেখানে পাঠানো হয়েছিলো। ছাত্রদলের সহযোগীতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। এর পেছনে বদলিকৃত কর্মকর্তা আছেন বলেই আমাদের মনে হয়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘সদর উপজেলার একজন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার বদলি স্থগিত করার অযৌক্তিক দাবিতে আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো। আদেশ স্থগিত না পর্যন্ত আমার ওপর চাপট দেয়া হচ্ছিল। পরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের ছেলেরা এসে সকলের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। যারা এসেছিলেন, তাদেরকে শিখিয়ে পড়িয়ে পাঠানো হয়েছিলো। তবে বেশিরভাগই জানতেন না, কেন এসছেন। দুপুরের খাবার ও টাকার লোভ দেখিয়ে তাদেরকে এখানে আনা হয়। আমরা এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করবো। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং প্রশাসন দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন।
বিআরইউ