মহসীন ইসলাম শাওন, লালমনিরহাট
ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৩:২১ পিএম
মহসীন ইসলাম শাওন, লালমনিরহাট
ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৩:২১ পিএম
লালমনিরহাটে শীতের সাথে বেড়েছে খেজুরের রসের চাহিদা। বছরজুড়ে খেজুর গাছ অবহেলায় পরে থাকলেও শীতে চর্চা শুরু হয় ব্যাপকভাবে।
গ্রামীণ মেঠোপথ ও সবুজে ঘেরা মাঠে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা খেজুরগাছগুলো এখন গাছিদের দখলে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছের রস সংগ্রহ ও গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন গাছিরা। এখন মাঠে ময়দানে, রাস্তায় খেজুর গাছে দেখা মিলছে গাছির। গাছিরা খেজুর গাছকে সুন্দর করে পরিষ্কার করে গাছের বুক চিরে রস বের করে। গ্রামবাংলায় ঘরে ঘরে শীতের সকালে নাস্তাতে রসের সাথে মুড়ি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে দীর্ঘদিনের।
শীতকালীন পিঠাপুলি, পায়েসসহ রকমারি খাবার তৈরিতে রস ও খেজুর গুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খেজুরের রসের পায়েস, পিঠে, পুলি, ক্ষীর, সন্দেশ, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ পিঠাসহ হরেক রকমের বাহারি পিঠা তৈরি করা হয়।
আবার অনেকে গাছিদের কাছ থেকে টাটকা রস সংগ্রহ করে তা পান করে থাকেন। আকারভেদে প্রতিটি গাছ থেকে ১২ ঘণ্টায় ৪-১০ লিটার খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়।
বর্তমানে জেলা শহরের বিভিন্ন মোড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে শীতের মৌসুমের পিঠার সাথে সাথে সকালে ও বিকালে বিক্রি হচ্ছে খেজুরের রস, স্বাদ নিচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। এক গ্লাস রস সর্বোচ্চ ১০ -১৫ টাকায় বিক্রি হয়। শুধু রস বিক্রি করে অনেকটাই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে গাছিরা।
বড়বাড়ী বাজারে শিমুলতলা বাস কাউন্টারের সামনে দেখা যায়, একজন গাছি খেজুরের রসের ভার সাজিয়ে রাস্তার পাশে বসে আছেন। আর পথচারীরা সড়কে দাঁড়িয়ে গ্লাসে গ্লাসে রস পান করছেন। অনেকেই নিজে খেয়ে পরিবারের জন্যও নিয়ে যাচ্ছে।
কথা হয় গাছির রস খেতে দাঁড়িয়ে পড়া মিজানুর রহমানের সাথে তিনি বলেন, শীতে খেজুরের রস কার না ভালো লাগে। শীত আসলেই রস খেতে মন চায়। ছোটবেলা থেকে খেজুরের রস খাওয়া আমার অভ্যাস। খেজুরের রসের স্বাদই আলাদা। যেটা অন্য কোন রসে নেই। তাই ১৫ টাকা করে ২ গ্লাস রস খেলাম।
বড়বাড়ী বাজারের জাহিদ ফার্টিলাইজারে স্বত্বাধিকারী মো. জাহিদ হোসেন বলেন, গত ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও লালমনিরহাটে সদর এলাকায় যে পরিমাণ খেজুর গাছ ছিল এখন তা অর্ধেকেরও কম হয়ে গেছে। মানুষ প্রয়োজনে আবার কিছুটা অপ্রয়োজনে খেজুর গাছ কেটে ফেলছে, এক সময় খেজুর গাছের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে। এ জন্য দ্রুত সবাই কে উদ্যোগ নিয়ে বেশি বেশি খেজুর গাছ রোপণ করতে হবে।
ডা. মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, খেজুর রস সুস্বাদু ও উপকারী পানীয়। তবে এই খেজুরের রসে রোগ-জীবাণু থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তাই কাঁচা খেজুর রস ফুটিয়ে খেতে পারলে রোগ জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা অনেকাংশেই কম থাকবে। তাই নিজের কথা চিন্তা করে সবাইকে খেজুর ও তালের রস ফুটিয়ে খাওয়া উচিত।
লালমনিরহাট জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইফুল আরিফিন জানান, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় খেজুর গাছের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া খেজুরের রস ও গুড় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য।
তিনি বলেন, আগে যে পরিমাণ খেজুর গাছ ছিল বর্তমানে তার অর্ধেকে নেমে এসেছে। জেলার বিভিন্ন গ্রামে খেজুর গাছের সঠিক পরিচর্যা করা হলে তার থেকে বাণিজ্যিকভাবে আয় করা সম্ভব।
ইএইচ