Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪,

কবে শেষ হবে সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার তদন্ত?

শাহজাহান সেলিম বুলবুল, সিলেট

শাহজাহান সেলিম বুলবুল, সিলেট

ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৩:৪৮ পিএম


কবে শেষ হবে সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার তদন্ত?

সিলেটে ছাত্রজনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে প্রকাশ্য দিবালোকে দায়িত্বপালনরত অবস্থায় পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত দৈনিক নয়াদিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান এটিএম তুরাম হত্যাকাণ্ডের ৫ মাস অতিবাহিত হলেও মামলার তদন্ত কাজের কোন অগ্রগতি নেই।

এ মামলার একজন এজহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিলেও এর কোন অগ্রগতী তথ্য নেই নিহতের পরিবারের কাছে। আর মামলার প্রভাবশালী একজন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হলেও অন্যান্য কর্মকর্তারা ও আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও রহস্যজনক কারণে তাদেরকে গ্রেপ্তার বা চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে না। ফলে মামলার তদন্ত নিয়ে সন্দিহান রয়েছে নিহতের পরিবার, এমনকি তার ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন।

আর এমনি পরিস্থিতিতিতে চরম হতাশায় রয়েছে নিহত তুরাবের পরিবার। তারা ইতিমধ্যে শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেছেন।

জানা যায়, বিগত ১৯ জুলাই বাদ জুম্মা সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্টে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলের ছবি তোলার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান এটিএম তুরাব। তুরাব সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার পৌরশহরের ফতেহপুর গ্রামের মাস্টার আব্দুর রহিমের কনিষ্ঠ পুত্র।

তিনভাই এক বোনের মধ্যে তুরাব ছিলেন সবার ছোট। সিলেট নগরের যতরপুরে মা আর ভাইদের সঙ্গে তিনি বাস করতেন। মাত্র আড়াই মাস আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। মেহেদীর রঙ মোছার আগেই বিধবা হয়ে যান তার যুক্তরাজ্য প্রবাসী সহধর্মিনী।

সাংবাদিকতা জীবনের প্রায় ১৫ বছরে জাতীয় পর্যায়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার, ব্রাক মাইগ্রেশন অ্যাওয়ার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু অর্জন ছিল তার। সিলেট প্রেসক্লাব, বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাব, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এটিএম তুরাব।

গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজার সংবাদ, সপ্তাহজুড়ে’সহ একাধিক গণমাধ্যমে তিনি কাজ করেছেন।

এদিকে, এ ঘটনার পর সিলেটের সাংবাদিক সমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সিলেট প্রেসক্লাব, সিলেট জেলা প্রেসক্লাব, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব, ফটো জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনসহ সিলেটের সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল ৭টি সংগঠন যৌথভাবে প্রতিবাদ করে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানায়। এরপর বিভিন্ন সময়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন সাংবাদিকরা।

ঘটনার পরপরই কোতোয়ালি থানা পুলিশ বাদী হয়ে ৩৪ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। এতে পুলিশের কাউকে আসামির তালিকায় রাখা হয়নি। বেশিরভাগ বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয় নিহতের পরিবার। ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিলেটের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা। ফলে ঘটনার এক মাস পর ১৯ আগস্ট নিহতের ভাই আবুল হাসান মো. আযরফ (জাবুর) বাদী হয়ে সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালছাড়াও এসএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো. সাদেক দস্তগির কাউসার, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়তি আওয়ামী লীগের নেতারা সহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। সেই সঙ্গে অজ্ঞাতনামাও কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

মামলা দায়েরের পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভোররাতে মামলার ৬নং আসামি ঘটনার সময়কার সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মঈন উদ্দিন শিপনকে তার বাড়ি থেকে বিজিবি আটক করে। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

এ অবস্থায় মামলাটির তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন আদালত। ফলে ৮ অক্টোবর কোতোয়ালি থানা পুলিশ মামলার নথিপত্র পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করে। পরদিন ৯ অক্টোবর মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক মোহম্মদ মুরসালিনের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সেখানে সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করেন। কিন্তু এরপর আর এ মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে কিছুই জানা যাচ্ছে না।

এর পর গত ১৭ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় মামলার এজহারভুক্ত আসামি পুলিশ সদস্য উজ্জ্বল সিনহাকে। তাকে রিমান্ডে নেয় পিবিআই। কিন্তু রিমান্ডের তিনি কি তথ্য দিয়েছে তা এখনো অজানা।

এদিকে, পুলিশ সদস্য উজ্জলকে গ্রেফতার করা হলেও এখনো বহাল তবিয়তে চাকুরি করছেন পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) আজবাহার আলী শেখ, সহ মামলার অভিযুক্ত পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা। রহস্যজনক কারণে তাদেরকে গ্রেফতার ও চাকুরীচ্যুৎ করা হচ্ছে। ফলে নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সমাজে বিষয়টি নিয়ে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে।

সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যা মামলার বাদী ও তার বড় ভাই আবুল হাসান মোহাম্মদ আযরফ (জাবুর) বলেন, আমরা খুবই হতাশ। একটি ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটলো। মামলার এতদিন পরও কোনো অগ্রগতি নেই। খুনিরা এখনও বহাল তবিয়তে। তাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তও নেয়নি প্রশাসন। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার পাবো কী না তা নিয়ে সংশয়ে আছি।

তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে পিবিআইর পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুরছালিন কোন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে চান না, বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। গতকালও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক তদন্ত কর্মকর্তা মুরছালিনকে কল দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কারো কল রিসিভ করেননি, বরং সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন।

তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে পিবিআইর পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুরছালিনের মোবাইল ফোনে গতকাল দিনভর অসংখ্যবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পিবিআই, সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান বলেন, মামলাটির তদন্তে বিলম্ব হবে। একজন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে আনা হয়েছিল, তার কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, তবে তা প্রকাশ করা যাবে না।

ইএইচ

Link copied!