Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪,

ব্র্যাকের আলুবীজ রোপণ করে নিঃস্ব শতশত কৃষক

গোলাপ হোসেন, জয়পুরহাট

গোলাপ হোসেন, জয়পুরহাট

ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৫:৩৪ পিএম


ব্র্যাকের আলুবীজ রোপণ করে নিঃস্ব শতশত কৃষক

জয়পুরহাট জেলার প্রায় উপজেলার ব্র্যাকের নিম্নমানের বীজ আলু রোপণ করে নিঃস্ব শতশত কৃষক। গজায়নি শতশত বিঘা জমিতে আলুর গাছ। ফলে চরম হতাশ হয়ে পড়েছে ব্র্যাকের আলু বীজ রোপণ করে কৃষকরা।

জেলা সদর ও কালাই ক্ষেতলালের অনেক আলুচাষি ব্র্যাকের আলু বীজ কিনে রোপণ করেছেন। কিন্তু তাদের কারো জমিতে গজায়নি আলুর গাছ।

এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কৃষি অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন৷

জেলার ধারকি এলাকায় বেলাগাড়ি মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য।

মাথায় হাত দিয়ে চাতক পাখির মতো হতাশ হয়ে আলুর জমিতে পড়ে রয়েছে আলুচাষিরা।

জানা গেছে, যারা ব্র্যাকের বীজ আলু কিনে রোপণ করেছেন তাদের কারো জমিতে আলুর গাছ বের হয়নি। অথচ পাশের জমিতে অন্য কোম্পানির বীজ আলু কিনে রোপণ করেছেন তাদের জমিতে সুন্দরভাবে বের হয়েছে আলুর গাছ।

বেলাগাড়ী মাঠে আলু চাষি এরফান আলী ১৩ বিঘা, মনজুরুল ৩ বিঘা, জামিল ৩ বিঘা, ফরিদ ২ বিঘা, জামিল ৩ বিঘা, বজলু ৩ বিঘা, হামিদ ৩ বিঘা, ফারুক ২ বিঘা, ছালাম ফকির ৮১ শতক জমিতে বীজ বপন করেছে।  এভাবে শত শত বিঘা জমিতে কোন গাছ গজায়নি।

তারা জানান, ব্র্যাকের বীজের খুব ভালো আলুর ফলন হয় বলে তারা এবারও ব্র্যাকের বীজ আলু কিনে রোপণ করেছেন। কিন্তু তাদের কারো জমিতে আলুর গাছ বের হয়নি।

কৃষক এরফান আলী জানান, তার ১৩ বিঘা জমিতে ব্র্যাকের বীজ আলু কিনে রোপণ করেছেন। তারও জমিতে কোন আলুর গাছ বের হয়নি।

আর যে দু’একটা গাছ বের হয়েছে সেগুলো গাছের আলু পঁচে যাওয়ায় গাছ দুর্বল হয়ে মরে যাচ্ছে। এবার ব্র্যাকের বীজআলু রোপণ করে নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে হবে আমাদের।

ভুক্তভোগী কৃষক আশরাফ আলী বলেন, আলুর ক্ষতিপূরণ না পেলে আইনের আশ্রয় নিব।

জয়পুরহাট জেলায় স্বনামধন্য ব্রাক আলুবীজ কোম্পানির ১৪ জন ডিলার ও রিটেইলারসহ খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র থেকে এসব বীজ ক্রয় করে কৃষকের জমি এবার পোষ্টমেডাম করা হয়েছে৷  

২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, রবি মৌসুমে দেশে আলুবীজের চাহিদার তুলনায় সরকারি সংস্থা (বিএডিসি, বেসরকারি সংস্থার মিলিয়ে শতকরা ৬৪ ভাগ বীজের জোগান দিয়েছিলো। বাকিটা কৃষক স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন করেছিলো।  

একদিকে যেমন বাজারে বীজের সংকট দেখিয়ে দফায় দফায় নীরবে দাম বৃদ্ধি পায় অন্য দিকে সংকটে ভেজাল বীজ বিক্রি বেশি হয়। এমনকি সরকারি বিএডিসির বীজ কিনেও কোন কোন সময় প্রতারিত হয় কৃষকরা। তবে সব বীজ ভেজাল তা কিন্তু নয়। কৃষি প্রণোদনার বীজে আস্থা রেখেও কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে ভেজাল ও অশুটিং খাবার আলু প্যাকেট জাত বীজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা।

এ বিষয় জানতে চাইলে ব্র্যাকের টেরিটরি ম্যানেজার জহুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, কৃষকদের ভুলের কারণেই আলু পঁচে গেছে। কৃষকরা আর্দ্রতা ও ভেজা মাটিতে আলু লাগানোর ফলেই এ সমস্যা হয়েছে বলে জানান তিনি।  

জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা আমিনুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কৃষকদের কাছ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ইতিমধ্যে কৃষি অফিসার বরাবর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রাফসিয়া জাহান বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরে আমরা সেখানে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। তদন্তের পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রাহেলা পারভীন  বলেন, উন্নতমানের বীজ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যবসা করার কথা কোম্পানিগুলোর। কিন্তু কৃষকদের সরলতার সুযোগে প্রতারণা করছে৷ আলুবীজ খুবই স্পর্শকাতর ফসল।  হয়ত তারা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কৃষকদের কাছে বিক্রি বা বাজারজাত করেছে। কৃষকদের এই ক্ষতির দায় ব্রাক সিড কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

ইএইচ

Link copied!