সাভার প্রতিনিধি:
ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪, ১১:৫০ এএম
সাভার প্রতিনিধি:
ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪, ১১:৫০ এএম
ঋতু পরিবর্তনের শুরুতেই ধীরে ধীরে বাড়ছে শীতের আমেজ। সেইসাথে শীত এলেই শুরু হয়ে যায় পিঠা-পুলির মহোৎসব। পিঠা উৎসবে আখের গুড়ের যেন জুড়ি নেই। নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে দেশের অন্যান্য জেলায়।
শীতের হিমেল বাতাস বইতে না বইতেই গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আখ চাষীরা। আর শীতের মৌসুম এলেই শুরু হয়ে যায় সুস্বাদু আখের গুড় তৈরির কাজ। একদিকে আখ কেটে সংগ্রহ করা হচ্ছে, অন্যদিকে কেটে আনা আখ থেকে মেশিনের মাধ্যমে রস সংগ্রহ করে সেই রস জাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে গুড়। ইতোমধ্যেই এ গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের আখ চাষিরা।
সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নে শান্তি পাড়া গ্রামের মাঠে দেখা যায় আখের গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে আখ চাষিরা।
দীর্ঘ ৩ বছর ধরে এই এলাকায় প্রতি শীত মৌসুমে আখ থেকে গুড় তৈরি করতে দেখা যায়। তবে আগের মত আখ চাষ না থাকায় তেমন একটা চোখে পড়ে না রস থেকে গুড় তৈরি করার দৃশ্য।
গ্রামের নারী-পুরুষ, কিশোররা আখ থেকে পাতা ও আগা বাদ দিয়ে শুধু আখ বের করে আলাদা করে রাখছেন। আর পাতা ও আগার অংশটুকু নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে গৃহ পালিত পশু গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে। তারপর সেই আখ গুলো থেকে কারিগররা একটি মেশিনের মাধ্যমে রস বের করছে।
তার পাশেই পরপর ১টি বিশাল উনুন তৈরি করে তার উপর চাপানো হয়েছে বিশাল মাপের লোহার কড়াই। তাতেই আখের রস ঢেলে জ্বাল দিচ্ছে। আর অনবরত সেই কড়াইয়ের দিকে সজাগ নজর গুড় কারিগরদের।
রস জাল করার কারিগর হাবিবুর রহমান জানান, প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা রস জ্বাল করে। পরে তা চুলা থেকে নামিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট রাখার পর শক্ত হয়। পরে কারিগরদের হাতের সাহায্যে শক্ত গুড় গুলোকে একটি নিদিষ্ট আকার দেওয়া হয়। এভাবেই তৈরি করা হয় আখের রস থেকে সুস্বাদু গুড়।
প্রতিদিন ৩ কড়াই গুড় তৈরি করি। পারিশ্রমিক হিসেবে কড়াই প্রতি ৬০০ টাকা করে পাই। এতে করে কোনো রকম ডাল-ভাত খেতে পারি।
প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় ২ থেকে ৩ কড়াই গুড় তৈরি করতে পারি। প্রতি কড়াই থেকে প্রায় ৪৮-৫০ ডিমা ৭০০ গ্রাম করে গুড় তৈরি করা যায়। আর আমাদের কাজের মান অনুযায়ী আমরা প্রারিশ্রমিক পাই। তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর আখের চাষ কম হওয়ায় আমাদের কাজও কম। বছরের ৬ মাস এ পেশার সাথে থাকি। বাকি দিনগুলো নিজ এলাকায় কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি।
আখ ক্ষেতের মালিক সাঈদ জানান, এ অঞ্চলে এক মৌসুমের ফসল চাষ করার পর আখ চাষ করি। পরবর্তীতে তা গুড় তৈরির মহাজনদের কাছে বিক্রি করে দেই। পরে তারা শীতের সময় এসে সেই আখ থেকে গুড় তৈরি করে। বিগত বছরগুলো আমার জন্য অনেক ভালো ছিল। এ বছর উল্লাপাড়ায় বিভিন্ন বাজারে ২হাজার ২শত থেকে ২হাজার ৫০০ টাকা প্রতি মন গুড় বিক্রি করছি। আশা করছি এ মৌসুমে প্রায় ৩০৪ মণ গুড় উৎপাদন করতে পারবো।
আখের গুড় কিনতে বিভিন্ন ক্রেতা রহিম এবং গৃহস্থ লালমিয়া জানান, বিগত তিন বছর ধরে এখান থেকে আখের গুড় নিচ্ছি ভেজাল মুক্ত ছাড়া এই গুড় ক্ষেত থেকে আখের রস দিয়েই তৈরি করা হয়। নিজ চোখে গুড় তৈরির প্রক্রিয়া দেখে নিশ্চিন্তে কেনা যায়।
প্রতি কেজি গুড়ের দাম ২২০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। হাঁড়িতে ২ কেজি ৫ কেজি ১০ কেজি এক মন পর্যন্ত গুড় এখান থেকে ক্রয় করা যায়।
মহোজন শুকুর আলী আরো জানান, আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষ্যে গুড়ের শরবত এবং চলতি শীতকালীন পৌষ পার্বণের পিঠা তৈরিতে এই গুড় নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায়।
এ বিষয়ে সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলভীর রহমান বলেন, আখের গুড় গ্রাম বাংলার একটি মুখরোচক খাবার। উৎপাদিত আখের গুড়ে ক্ষতিকর কোনো দ্রব্য মেশানো হচ্ছে কি না তা নিয়মিত মনিটর করেন এবং আখ উৎপাদনের সময় কোন রোগ বালাই ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করতে বিভিন্ন কীটনাশক ঔষধ এবং ভালো ফলনের জন্য উন্নত মানের সার ও জৈব সার প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, যে সমস্ত চাষিরা আখ গুলো খুচরা বিক্রি না করে আসন্ন রমজান ও শীত উপলক্ষ্যে পিঠা কুলির উৎসবে গুড়ের বেশ চাহিদা রয়েছে তাই এরা আখ ক্ষেতের পাশেই ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করছে। আখ ক্ষেতের পাশে গুড় তৈরির মেশিন চালানো ও রস জাল করার কোন জ্বালানি খরচ নেই। রস বের করার পর অবশিষ্ট আখের ছোভা শুকিয়ে রস জাল দিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
বিআরইউ