আশাশুনি (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
আশাশুনি (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
জমির কাগজপত্র সঠিক রাখতে নামজারি করা, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা ও জমি ক্রয়-বিক্রয় করার কাজ করতে না পেরে আশাশুনির মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
দীর্ঘ একমাস যাবৎ অনলাইন সার্ভার বন্ধ থাকায় ভূমিসেবা সেক্টরে বিপত্তির পাশাপাশি সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
গত ২৬ নভেম্বর থেকে সারা দেশে ভূমিসেবা অনলাইন সার্ভার বন্ধ রয়েছে। সফটওয়্যারগুলো ধীরগতি সম্পন্ন হওয়ায় ই-নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর ও খতিয়ান সেবা পেতে অসুবিধা হচ্ছে। সেবা প্রাপ্তিতে গতিবৃদ্ধি করতে কাজ করা হচ্ছে। অনলাইন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ম্যানুয়েল তৈরি করে সরবরাহ করা হচ্ছে। আর এই কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করতে সার্ভার বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ এক মাস যাবৎ সার্ভার বন্ধ থাকায় সারাদদেশের ন্যায় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় ভূমিসেবা কার্যক্রমে ব্যাপক প্রতিকূল প্রভাব পড়েছে।
উপজেলার ১১ ইউনিয়নের ৯টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে প্রতিদিন বহু লোকজন ভূমি সেবা পেতে যাতায়াত করে থাকে। জমির কাগজপত্র ঠিক করা, ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়া, ই-নামজারীর কাজ করা, খতিয়ান সেবা নিতে ভূমি মালিকরা ভূমি অফিসে গমন করে থাকে।
অনলাইন সার্ভার বন্ধ থাকায় পরে আসেন, পরে আসেন খবর শুনতে শুনতে হতাশ হয়ে পড়েছে।
ভূমি অফিসে হাটতে হাটতে নিরাশ হয়ে যাওয়া কুল্যা ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের নিমাই চাঁদ রাজবংশী জানান, তিনি বুধহাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে তিনি একমাস হাটছেন, কিন্তু সার্ভার কাজ করছে না শুনতে শুনতে হতাশ হয়ে গেছেন। তিনি চিকিৎসার খরচ মেটাতে জমি বিক্রয় করার জন্য নামজারির কাজ করতে এসেছেন। নামজারি হচ্ছে না, চিকিৎসা নিতে না পেরে ভবিষ্যৎ চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
যদুয়ারডাঙ্গা গ্রামের প্রদীপ কুমার সরকার জানান, তিনি প্রায় একমাস নামজারীর আবেদন করতে ভূমি অফিসে আসছেন। অনলাইন সমস্যার কারণে অপেক্ষা করতে করতে চোখ ছানাবড়া হতে চলেছে।
খাজরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা তরুণ কুমার সরকার, তরুণ কুমার সরকার ও নমেদ জানান, খাজরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হাঁটতে হাঁটতে পা ক্ষয় হয়ে গেল, কিন্তু নামজারি করানো হলো না।
যদুয়ারডাঙ্গা গ্রামের উত্তম সরকার, কচুয়া গ্রামের আজীজ, কাদাকাটি গ্রামের আজাদ রহমান বাচ্চু ও মুজিবর জানান, অনলাইন সমস্যায় তারা নামজারি ও ভূমি উন্নয়ন কর দিতে পারছে না।
আরার গ্রামের বিল্লাল হোসেন জানান, তিনি জমি বিক্রয় করার জন্য নামজারি করাতে আসছেন। কিন্তু কবে কাজ করাতে পারব বুঝতে পারছি না।
হাজীডাঙ্গা গ্রামের খাদেমুল ইসলাম জানান, তিনি তাদের ফুফু আকলিমার কাছ থেকে জমি ক্রয়ের জন্য দলিল রোজিস্ট্রি করতে ২০ দিন হাটছি। দলিল লেখার পর রেজিস্ট্রি করাতে পারছি না।
এ ব্যাপারে ডিড রাইটার স্বপন কুমার মন্ডল ও তারক চন্দ্র সরকার জানান, নামজারি ও চেক দাখিলা কাটতে না পারায় জমি রেজিস্ট্রি কাজে ব্যাহত হচ্ছে। সপ্তাহে যেখানে ১৫০-২০০ দলিল রেজিস্ট্রি হতো এখন সেখানে ৪০/৫০ টিও হচ্ছে না। কেউ জরুরি প্রয়োজনে দলিল করতে আসছেন, কেউ চিকিৎসা বা অন্য কোন কাজে টাকার প্রয়োজন মেটাতে জমি বিক্রয় করতে আসছেন। কিন্তু রেজিস্ট্রি করতে না পেরে বারবার ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। এতে জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা নাজেহাল ও সমস্যায় ভুগছেন। রেজিস্ট্রি অফিসের সাথে জড়িতরা বিপত্তিতে রয়েছেন। সরকারও হারাচ্ছেন রাজস্ব।
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আ. মজিদ জানান, একমাস যাবৎ সফটওয়্যার সমস্যায় নামজারি আবেদন করা যাচ্ছে না। মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, আমরাও ঝামেলায় রয়েছি।
আশাশুনি উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদ হোসাইন জানান, গত ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনলাইন সার্ভার বন্ধ থাকায় আমরা সেবা প্রদান করতে পারছি না। নামজারি, রাজস্ব আদায় ব্যাহত হচ্ছে। আগামী ১ জানুয়ারি ২০২৫ ভার্সন-২ উদ্বোধন করা হবে বলে জানতে পেরেছি। আরমাত্র কয়েকদিন পর থেকে আমরা উন্নত সেবার মাধ্যমে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে সচেষ্ট হবো ইনশাল্লাহ।
ইএইচ