বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪, ০৪:৫০ পিএম
বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪, ০৪:৫০ পিএম
‘ঘরে ঘরে খবর দে, এক দফার কবর দে’ স্লোগান দিয়ে কোটা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এএসএম জুলফিকার হায়দার এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
গত ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দেখিয়ে পদ-পদবি বাগিয়ে নেয়া, ঋণ উত্তোলনের করে ব্যাংকের কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া, বিরোধী দলের লোকজনকে হয়রানি ও ওয়ারিশদের ঠকিয়ে পিতার সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বরে তিনি তার একটি বাণিজ্যিক কার্যালয়ের অন্তরালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে উসকানি দেয়াসহ সরকার পতনের নানা ষড়যন্ত্রের ছক কষে চলেছেন। এনিয়ে জনমনে জেগেছে নানা প্রশ্ন।
জানা যায়, উপজেলার গারুড়িয়া ইউনিয়নের কাঞ্চন আলী শিকদারের বড় পুত্র এএসএম জুলফিকার হায়দার দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। বর্তমানেও তিনি পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালী জেলার একাধিক বিএনপি নেতার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ও তাদের সহযোগিতায় এলাকায় আধিপত্য বজায় রেখে আত্মীয়-স্বজন ও পাওনাদারদের হয়রানি করছেন ছাত-জনতাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া এই আওয়ামী লীগ নেতা।
ঢাকার মিরপুর ও বরিশালে ছাত্র-জনতাকে হত্যায় সহায়তাকারী ও জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বিরোধিতাকারী আওয়ামী লীগ নেতা জুলফিকার হায়দারের বিরুদ্ধে এখনো কোন মামলা কিবা কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের। তাদের অভিযোগ, পতিত স্বৈরাচারী দল আওয়ামী লীগের দোসর, কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের বিরুদ্ধে অর্থ সরবরাহকারী, আন্দোলনে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের প্রতিহতের ঘোষণাকারী জুলফিকার হায়দার এখনো আধিপত্য বজায় রেখে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সে সরাসরি ঢাকার মিরপুরে শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। এমনকি তিনি ২ ও ৩ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিহত করতে বাকেরগঞ্জ উপজেলার গারুড়িয়া ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিজ উদ্যোগে ঢাকায় মিরপুরে নিয়ে তার অফিসে রেখে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাসহ ছাত্র জনতাকে হত্যার ছক এঁকেছিলেন।
কিন্তু ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরেও আন্দোলনের বিরোধিতাকারী ছাত্রজনতার উপর হামলায় সহায়তাকারী অর্থের যোগানদাতা এই আওয়ামী লীগ নেতা শত শত শহীদের রক্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দাপটের সাথেই ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন, প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং আত্মীয়-স্বজন পাওনাদারদের হয়রানি করে চলেছেন। সেই সাথে তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য গোপনে কাজ করে চলেছেন।
আওয়ামীলীগ নেতা জুলফিকার হায়দার বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে ব্যবসার নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে লোন উত্তোলন করেছে যা বর্তমানে সুদে আসলে প্রায় ২২ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় তিনি ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের কোটি কোটি আজও পরিশোধ করেননি।
সুচতুর জুলফিকার হায়দার বিগত ২০০০ সালে তার মালিকানাধীন রেদওয়ান প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেডে ৩০% শেয়ার লভ্যাংশ দেয়ার কথা বলে মামাতো বোনের ছেলে কবিরের নিকট থেকে ১৪ লক্ষ টাকা নিয়ে বিভিন্ন কিস্তিতে ৬ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে আসল ৮ লক্ষ টাকার পেঅর্ডার দেয়। কবিরকে লভ্যাংশ শেয়ার না দিয়ে উল্টো তাকে ও তার পরিবারকে ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে হয়রানী করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তার মালিকানাধীন রেদওয়ান প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে কাঁচামাল অন্যত্র বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে কাস্টমস বন্ড কর্তৃপক্ষ ৩ কোটি টাকা জরিমানা করলেও অদ্যাবধি তিনি কর ফাঁকি দিয়ে দেদারসে তার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগা নেতা জুলফিকার হায়দার ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পরিবার পরিজন নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় রয়েছে। গত ৫ আগস্টের পরে তিনি তার পুত্রকে আমেরিকায় পাঠিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র সমন্বয়ক রাতুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকার ৫ আগস্টের পর পালিয়ে গেছে। এই ফ্যাসিবাদ সরকারের অন্যতম দোসর বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করতে চাওয়া ও অর্থের যোগানদাতা আওয়ামী লীগ নেতা এএসএম জুলফিকার হায়দার এখনো বহাল তবিয়তে প্রকাশ্যে তার ব্যবসা ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক এবং ভয়ের কারণ। আমরা মনে করি তারা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিভাবে ফ্যাসিবাদকে প্রতিষ্ঠা করা যাবে, কিভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করা যাবে তারা ঠান্ডা মাথায় সেটার পরিকল্পনা করে যাচ্ছে।
ছাত্র প্রতিনিধি আল আমিন বলেন, আমরা চাই, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কিংবা অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া যা আছে সে অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা হোক। সেই সাথে তিনি দেশের সকল মানুষের প্রতি বিভিন্ন জায়গায় এমন ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এএসএম জুলফিকার হায়দারের বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বাকেরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরএস