Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি, ২০২৫,

রাঙ্গুনিয়ায় ধান মাড়াইয়ে মহাযজ্ঞ, কোটি টাকার ধান উৎপাদন

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪, ০৪:৫৯ পিএম


রাঙ্গুনিয়ায় ধান মাড়াইয়ে মহাযজ্ঞ, কোটি টাকার ধান উৎপাদন

কৃষি খাতে আয় দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাথমিক ফসল এবং প্রধান খাদ্য হিসেবে ধান কৃষি উৎপাদন, কর্মসংস্থান এবং পুষ্টির চাহিদার কেন্দ্রবিন্দু। এটি বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের একটি বড় অবদান। 
২০২৩ সালে আনুমানিক ৩৯.১ মিলিয়ন টন উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী তৃতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত পায়। এরো ধারাবাহিকতায় আগের বছরের চাইতে এ বছর উৎপাদন আরো বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

পরিসংখ্যানে বলছে, দেশে ১৪১.৪৩ লক্ষ একর আবাদি জমিতে ১৫৪.২৬ মেট্রিকটন আমন ধান উৎপাদন হয়েছে, তার মধ্যে ভারী বৃষ্টি, বন্যা, পোকার আক্রমণসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে রাঙ্গুনিয়ায়। গতবার যেখানে গড় ফলন ৫.১ মেট্রিক টন ছিল, সেখানে এবার ফলন বেড়ে ৫.২৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে।

এবার রাঙ্গুনিয়ার কৃষকরা প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ধান উৎপাদন করেছেন বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এরমধ্যে দেশের ধানের গোলাখ্যাত গুমাইবিলেই উৎপাদিত হয়েছে ৫৬ কোটি টাকার ধান।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের আবাদ হয়েছে। যেখানে গড়ে ৫.২৫ মেট্রিক টন হারে মোট ৭৭ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়। একইভাবে ৬১০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের আবাদ হয়েছে। যেখানে গড়ে ৬.৫৫ মেট্রিক টন হারে মোট ৩ হাজার ৯৯৫.৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়।

এছাড়া স্থানীয় জাতের ১৪০ হেক্টর জমিতে ৩.৯০ মেট্রিক টন গড় হারে মোট ৫৪৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমি থেকে ৫.২৩ মেট্রিক টন গড় হারে ৮১ হাজার ৭১৬.৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। এরমধ্যে গুমাইবিলের ৩২০০ হেক্টর জমি থেকে ১৬ হাজার ৯৬৭.৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। যা বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী গড়ে ৩৩-৩৫ টাকা কেজি হারে বা প্রতি মণ ধান ১৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে, সমগ্র রাঙ্গুনিয়ায় প্রায় কোটি টাকার ধান উৎপাদিত হয়েছে বলে কৃষি অধিদপ্তর ধারণা করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় ১৫টি ইউনিয়নের সব কয়টি বড় বিলের প্রায় শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। বিলের ধারে, সড়কের পাশে কিংবা গৃহস্থের উঠানে চলছে ধান মাড়াইয়ের মহাযজ্ঞ। এরই মধ্যে রাঙ্গুনিয়ার শস্যভাণ্ডার খ্যাত গুমাই বিলে প্রায় কৃষক আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ হারভেস্টর মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন, কেউ সেই ধান গোলায় তুলছেন, অনেক আবার ব্যাপারী ঘরে গিয়েই ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এমন অবস্থায় আমনের আবাদ নির্বিঘ্ন ও ফলন ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।

এদিকে রাঙ্গুনিয়ার কৃষকরা বলছেন, ‘গত বছরের চেয়ে এ বছর আমন ধানের ফলন ভালো হওয়ায় আমরা অনেক খুশি। সেই সাথে বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে; সেটাও কাটিয়ে উঠতে পারবো। গতবার যেখানে ধানের দাম ২৫-২৭ টাকা ছিল, সেখানে এবার সাদা পাজাম ৩৫ টাকা কেজি এবং অন্যান্য ধান ৩৩ টাকা কেজি হারে বাজার দাম পাওয়া যাচ্ছে। এই হারে ধানের দাম পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট করে কৃষকদের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।

কৃষকরা আরো জানান, এরমধ্যে বন্যা সহনশীল ব্রী ধান ৫১ জাতের আবাদ করেছে। ভালোই ফলন পেয়েছে। তবে বন্যা না হলে ফলন আরও বাড়তো। গুমাইবিল নিয়ে কর্তৃপক্ষকে ভাবা দরকার। কারণ এটি দখল হয়ে যাচ্ছে, খালগুলোর তলানি ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

কৃষি গবেষক ও উদ্যোক্তা খালেদ মঞ্জু বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতগুলো সারা দেশের কৃষকদের আবাদে আগ্রহী করতে মতবিনিময় ও প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে সার ও বীজ দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর। এতে কৃষকরা এবং আমরা উদ্যোক্তারা উদ্বুদ্ধ হয়ে কৃষি প্রধান দেশে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষকেরা নিরাপদে ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই, শুকানো শেষে গোলায় তুলছেন। এরই মধ্যে ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। গতবারের চেয়েও এবার ধানের ফলন বেড়েছে। বাজারেও দাম ভাল পাওয়া যাচ্ছে। তাই কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়ে পরের মৌসুমে কৃষকরা আরও বেশি পরিমাণ জমিতে আবাদ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বিআরইউ

Link copied!