Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ জানুয়ারি, ২০২৫,

ভোলার তেতুলিয়া নদীতে থেমে নেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

ভোলা প্রতিনিধি

ভোলা প্রতিনিধি

জানুয়ারি ৩, ২০২৫, ০৩:৫৪ পিএম


ভোলার তেতুলিয়া নদীতে থেমে নেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিলেও দ্বীপজেলা ভোলার তেতুলিয়া নদীতে থেমে নেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।

তেতুলিয়ায় কোনো বালু মহাল না থাকলেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার কারণে বছরের পর বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে বেড়েছে নদীভাঙন।

এতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর জীববৈচিত্র্য। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

আগে দিনে-রাতে সমানতালে বালু উত্তোলন করা হলেও কোস্টগার্ডের নিয়মিত অভিযান ও উপজেলা প্রশাসন কৃতক জেল-জরিমানা, বলগেট-ড্রেজার জব্দ করার কারণে দিনের বেলা বন্ধ থাকলেও শুধু গভীর রাতে চলছে অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের বালু উত্তোলন কার্যক্রম।

সপ্তাহব্যাপী আমার সংবাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমনই তথ্য ।

এছাড়াও শুক্রবার দিনব্যাপী জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার তেতুলিয়া নদীর হাঁসের চর, চরলতিফ, লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের গজারিয়া খালগোড়া চরসহ কয়েকটি ছোটবড় চর এলাকার বাসিন্দা ও নদীতে নিয়মিত মাছধরা জেলেদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, প্রতিরাতে ১০–১২টি ড্রেজার দিয়ে লাখ লাখ ঘন ফুট অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

মান্নান সিপাই হাঁসের চরের বাসিন্দা, তিনি জানান বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর ইউনিয়ন সংলগ্ন তেতুলিয়া নদির হাঁসের চর, চর লতিফসহ কয়েকটি চরের কাফ (চরের তীরবর্তী অঞ্চল) থেকে দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। কোস্টগার্ড এসে আটক করে। আবার অনেক সময় কোস্টগার্ডে এবং এসিল্যান্ড স্যার আসার খবর পেয়ে তারা আগেই পেয়ে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, এখন দিনের বেলা বালু কাটে (উত্তোলন) না, রাতে বালু কাটে।

তেতুলিয়া নদীতে নিয়মিত মাছ শিকার করা মো. রাসেল নামের এক জেলে জানান, রাতে যখন মাছ ধরতে নদীতে যাই প্রায় রাতেই রাত ২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ৪-৬টি ড্রেজার একযোগে বালু উত্তোলন করে বিকট শব্দের নদীতে থাকা দায়, ঝালে ঠিকমতো মাছও পাই না।

এদিকে আরও একটি সূত্রে জানা যায়, তেতুলিয়া নদীরতীরবর্তী চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন, নাজিরপুর ইউনিয়নের ধানদী, নিমদী, কচুয়া ও ধুলিয়া ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এসব এলাকায় বালু মহল ইজারা বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র বাউফল-দশমিনা সীমানায় বুড়াগৌরঙ্গ নদীর ডুবাচরে ৪ একর এলাকায় জুড়ে বালুমহল ইজারা দেয়া হয়েছে। এর বাহিরে তেতুলিয়া নদীর কোনো পয়েন্টে বালুমহল নেই। তবে তেতুলিয়া নদীর ভোলা জেলার অংশে বালুমহল না থাকলেও আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলা এবং দশমিনা এলাকা থেকেও বেশ কয়েকটি ড্রেজার মেশিন  লালমোহন ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার তেতুলিয়া নদীর সীমানায় এসে বাণিজ্যিক কাজে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা।

জেলার সিনিয়র সাংবাদিক ও ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল হক অনু বলেন, তেতুলিয়া নদীতে  কোনো বালু মহাল নেই, সেখানে দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। কোনোভাবেই থামছে না তারা। আইনে আছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন দণ্ডনীয় অপরাধ। জেল-জরিমানা উভয়ের বিধান থাকলেও অবৈধভাবে বালু উউত্তোলন করার কারণে বছরের পর বছর ধরে ভাঙছে তেতুলিয়া নদীর দুই পাড়। বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর জীববৈচিত্র্য। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন অধীনস্থ বিসিজি ভোলার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, তেতুলিয়া নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে গত ১ মাসে কোস্টগার্ড সফল ২টি অভিযান পরিচালনা করেছে। এবিষয় কঠোর অবস্থানে রয়েছে কোস্টগার্ডে।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান আমার সংবাদকে জানান, তেতুলিয়া নদীতে কোনো বালু মহাল নেই। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদেরকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থান রয়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের লালমোহনও বোরহানউদ্দিন উপজেলায় বেশ কয়েকটি সফল অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমানা এবং বলগেট জব্দ করা হয়েছে। শীঘ্রই অবৈধ বালু উত্তোলন কারীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ইএইচ

Link copied!