Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ জানুয়ারি, ২০২৫,

ঝিনাইদহে মানহীন বীজে লোকসানে কৃষক

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

জানুয়ারি ৩, ২০২৫, ০৫:০৫ পিএম


ঝিনাইদহে মানহীন বীজে লোকসানে কৃষক

ঝিনাইদহে মানহীন বীজ বিক্রি করে কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে বীজ বিক্রেতারা। তাদের নেই উৎপাদিত বীজের সঙ্গনিরোধ সনদ ও কোম্পানি কর্তৃক বিক্রয় অনুমোদনপত্র।

জেলাব্যাপী সিন্ডিকেট তৈরি করে কৃষকদের মাঝে চক্রটি মানহীন বীজ ছড়িয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এই বীজ কিনে শত শত কৃষক পথে বসেছেন।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার বিএডিসি অনুমোদিত বীজ বিক্রয় প্রতিনিধি (ডিলার) রয়েছে ১৪২ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩১ জন, কালীগঞ্জে ৩০ জন।

এছাড়াও কোটচাঁদপুরে ১৪, মহেশপুরে ২৯, শৈলকূপা ২৯ ও হরিণাকুন্ডু উপজেলায় ৯ জন ডিলার রয়েছে।

অন্যদিকে জেলায় বীজ প্রত্যয়ন অথরিটি (এসসিএ) অনুমোদিত ডিলার রয়েছেন মাত্র ৫৮ জন। অথচ সারা জেলায় প্রায় সাড়ে তিনশ বীজের দোকান রয়েছে। তারা নিজস্ব পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত বীজ দেদারসে দোকানে বিক্রি করলেও তাদের নেই বীজ বিক্রির অনুমতিপত্র।

এ ছাড়াও দেশের নামিদামি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আমদানিকৃত ভুট্টা, সরিষা, আলু, পেঁয়াজ, শীতকালীন সবজির বীজ নিয়েও চলছে শুভঙ্করের ফাঁকি। উৎপাদিত বীজের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে পারেনি বীজ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সেই সাথে আমদানিকৃত বীজের সঙ্গনিরোধ সনদ ও কোম্পানি কর্তৃক বিক্রয় অনুমোদনপত্র নিয়েও বড়সড় কারসাজির চিত্র ফুটে উঠেছে মাঠ পর্যায়ে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলা শহরের মদিনা বীজ ভাণ্ডার, ঝিনাইদহ নার্সারি ও বীজ ভাণ্ডার, রামিম বীজ ভাণ্ডার, মহিদ বীজ ভাণ্ডার, হাসান বীজ ভাণ্ডার, মদিনা বীজ ভাণ্ডারসহ জেলার বিএডিসি ও এসসিএ অনুমোদিত ডিলারদের প্রতিষ্ঠানে গিয়েও কোম্পানির বিক্রয় অনুমোদন সনদ পাওয়া যায়নি। সেখানে নেই এলসিকৃত বীজের সঙ্গনিরোধ ও কোয়ারেন্টাইন সনদসহ পোর্টের ইনভয়েস। এসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ও আমদানিকৃত বীজ রোপণ করে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার হাজারো কৃষক।

সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের চন্ডিপুর বাজারের কামাল ট্রেডার্স, মিথিলা ট্রেডার্স, ভাই ভাই ট্রেডার্স, ভুঁইয়া ট্রেডার্স ও রায়হান ট্রেডার্স থেকে ভুট্টার বীজ কিনে ওই এলাকার কৃষকরা প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মির্জাপুর গ্রামের ভুট্টা চাষি সেলিম অভিযোগ করে জানান, দোকানিদের চটকদার কথার আশ্বাসে বীজ কিনে তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। শ’ শ’ হেক্টর জমিতে ভুট্টার অঙ্কুরোদগম হয়নি।

কোটচাঁদপুর উপজেলা মোড়ের টিটোন বীজ ভাণ্ডার, পোস্ট অফিস মোড়ের মুকুল বীজ ভাণ্ডার, হাসপাতাল মোড়ের বাবুল বীজ ভাণ্ডার, কালীবাড়ি সড়কের সলেমান বীজ ভান্ডারের বিরুদ্ধেও মানহীন ও অননুমোদিত বীজ বিক্রির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

মানহীন ও অননুমোদিত বীজ বিক্রির পাশাপাশি আমদানিকৃত বীজের কোয়ারেন্টাইন সনদ ও সঙ্গনিরোধ সনদ না থাকা সত্ত্বেও মহেশপুরের পোস্ট অফিস মোড়ের আমান বীজ ভাণ্ডার, বিসমিল্লাহ বীজ ভাণ্ডার, দুলারি হল পট্টির ভাই ভাই বীজ ভাণ্ডার ও উপজেলা চত্বর সংলগ্ন রহমান বীজ ভান্ডারের বিরুদ্ধে দেদারসে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অসাধু এসব বীজ ব্যবসায়ীরা প্রভাব খাটিয়ে লাগামহীন ব্যবসা চালিয়ে গেলেও জেলা ও উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা নগদ নারয়নে তুষ্ট হয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছেন।

কৃষকরা জানান, কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে দোকানের বীজের মান ও অনিয়মের অভিযোগ দিলেই কৃষি কর্মকর্তাদের ঘুষের রেট বেড়ে যায়। বীজ বিক্রেতাদের নানা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ঝিনাইদহের কৃষি বিভাগ তুষ্ট থাকেন বলে কথিত আছে।

হরিণাকুন্ডুর উপজেলার পায়রাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান ও হাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, গত মৌসুমে তারা সরকারি পেয়াঁজের বীজ নিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। সরকারি পাওয়া বীজে চারা গজায়নি।

মহেশপুর উপজেলার পাঁচলিয়া ইউনিয়নের ভুট্টাচাষি শ্যামল বিশ্বাস জানান, শহরের বড় বড় দোকান থেকে বীজ কিনে রোপন করেছি। কিন্তু বীজের কাঙ্ক্ষিত অঙ্গুরোদগম হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে ঝিনাইদহ শহরের শহিদ বীজ ভাণ্ডারের মালিক শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি ব্যবসা করে আসছি। যেসব অভিযোগ উঠেছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। 
অন্যদিকে মানহীন চারা সরবরাহের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও হাসান বীজ ভাণ্ডারের মালিক হাসান আলী জানান, যারা অভিযোগ করেছেন তাদের ২ জনকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছি। তাছাড়া আমার সকল কাগজপত্র ঠিক আছে।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় জানান, বীজ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের নির্দিষ্ট বিভাগ রয়েছে। যদি কোন অভিযোগ থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।

ঝিনাইদহ জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ মানহীন বীজে বাজার সয়লাব প্রসঙ্গে জানান, বীজ প্রত্যয়ন অফিস ধান, গম ও আলুর বীজের প্রত্যয়ন দিয়ে থাকে। এখানে আইনের কিছু ঘাটতি আছে। সবজি বীজের মান ঘোষণা করতে হলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ল্যাব থাকতে হবে। সেখানেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বীজ বাজারজাত করতে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ল্যাব নেই। তবে কোন বীজের দোকানের বিরুদ্ধে যদি নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তাহলে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ইএইচ

Link copied!