Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ জানুয়ারি, ২০২৫,

নীরব প্রশাসন

বরগুনায় ৪ অবৈধ ইটভাটা, বিপর্যয়ের মুখে পরিবেশ

বেলাল হোসেন মিলন, বরগুনা

বেলাল হোসেন মিলন, বরগুনা

জানুয়ারি ৬, ২০২৫, ০১:৫২ পিএম


বরগুনায় ৪ অবৈধ ইটভাটা, বিপর্যয়ের মুখে পরিবেশ

বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের দুই গ্রামের ৫০০ মিটার এলাকাজুড়ে ঘনবসতিপূর্ণ তিন ফসলি জমির মধ্যে চারটি ইটভাটা নির্মাণ করায় পরিবেশসহ ফসল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ফলে চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভাটাগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির উপরি ভাগের মাটি। কৃষি বিভাগ কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তর নিচ্ছে না কোন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

দু’গ্রামের মধ্যে চারটি বিদ্যালয় থাকলেও তোয়াক্কা করছে না ইটভাটার মালিকরা। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী এবং জনপ্রতিনিধিরা ইটভাটাগুলো বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

কৃষি বিভাগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা ও খাকদান একটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং তিন ফসলি এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এখানকার শতভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। গ্রাম দুটি পাশাপাশি অবস্থিত। এ গ্রাম দুটির ৫০০ মিটারের মধ্যে রায়বালা গ্রামের সড়কের পাশেই কৃষি জমির মধ্যে প্রভাবশালী নূর জামাল, সবুজ মৃধা ও মঈন ভূইয়া আল্লাহর দান ব্রিকস, মাহবুবুল আলম মৃধা এসএম ব্রিকস, হান্নান মৃধা বিবিসি ব্রিকস ও শানু হাওলাদার খাকদান গ্রামে গড়ে তুলেছেন ফাইভস্টার ব্রিকস।

এই এলাকার ভাটা থেকে এক দেড়শ ফুটের মধ্যে রয়েছে রায়বালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আকবরিয়া দাখিলী মাদরাসা, খাগদান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খাগদান নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

আইনের তোয়াক্কা না করে এভাবে তিন ফসলি জমি ও চারটি বিদ্যালয় এবং গ্রামের ৫০০ মিটারের মধ্যে চারটি ইটভাটা নির্মাণ করায় গ্রাম দুটিতে দেখা দিয়েছে পরিবেশসহ ফসলের বিপর্যয়।

বাড়ির আঙিনাজুড়ে ফলের গাছ থাকলেও এখন আর নারিকেল, আম কাঁঠাল জামসহ কোন ফল আর আগের মত গাছে ধরছে না। আবার ভাটা সংলগ্ন অনেক বাড়ির গাছ মরে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়।

সোমবার সকালে রায়বালা ও খাকদান গ্রাম সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামজুড়ে ইটভাটার কর্মজঙ্গ। ভাটা চারটির ৫ থেকে ১০ ফুট দূরত্বেই রয়েছে আমনের আধাপাকা ধানক্ষেত। ফসলের রুগ্ন চেহারা দেখে তাতে স্পষ্ট ইটভাটার বিরূপ প্রভাবের ছাপ রয়েছে। আশপাশের  গাছপালা ও ঘর বাড়িতে ধুলোবালির আস্তরণ জমে পুরো হয়ে গেছে টিনের চালা আর গাছের পাতা। গ্রাম দুটিতে মানুষের বসবাস এখন তাদের নিকট নরক যন্ত্রণা হয়ে উঠছে বলে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

রায়বালা গ্রামের গ্রামের ষাটোর্ধ্ব ছত্তার সিকদার বলেন, বাবা এহন কাশতে কাশতে মইরা যাই। দ্যাহেন আমনে এই গ্রামের মধ্যে আগে গাছ পালায় ভরা আছেলে এহন নাই।

রায়বারা গ্রামের গৃহবধূ ফরিদা বেগম বলেন, মোরা ঘর বাড়িতে থাকতে পারি না। বিছানাপত্র ক্ষ্যাতা বালিশ ধুলায় সব ভইরা যায়। রাইতে ঠিক মত ঘুমাইতে পারি না।

খাগদান গ্রামের ইউপি সদস্য মো. মাসুম বলেন, ইটভাটার কারণে আমাদেরও রাস্তাঘাট সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমরা এই ভাটা বন্ধের দাবি জানাই।

রায়বালা গ্রামের ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন বলেন, রায়বালা গ্রামে তিন ফসলি জমি এবং গ্রাম ও বিদ্যালয়ের মধ্যে আইনের তোয়াক্কা না করে ৩টি ইটভাটা নির্মাণ করায় আমাদের গাছপালা ফসলসহ সব ধ্বংস হয়ে গেছে। ভাটার ধুলায় আমি নিজেই এখন শ্বাসকষ্টে ভুগছি। আমরা এইসব ইটভাটা বন্ধের দাবি জানাই।
ওায়বালা গ্রামের বিবিসি ব্রিকসের মালিক মো. হান্নান মৃধা বলেন, সব কিছু ম্যানেজ করেই আমরা এই গ্রামে ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছি।

খাগদান গ্রামের ফাইভ স্টার ব্রিকসের মালিক শানু হাওলাদার ট্রলি এবং হামজায় ইট পরিবহণের কারণে রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রশ্নের জবাবে বলেন, রাস্তাঘাট ধ্বংস হলে তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। তার নিকট পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র এবং জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে অপরাগত প্রকাশ করেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর বরগুনার সহকারী পরিচালক হায়াত মাহমুদ রকিব বলেন, আমি বরগুনায় নতুন যোগদান করেছি বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখবো।

বরগুনার আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইছা বলেন, কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়া অবৈধ। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে প্রশাসনকে জানানো হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, কৃষি জমি এবং স্কুলের নিকট কোন ভাবেই ইটভাটা স্থাপনের সুযোগ নেই। যদি সেরকম হয়ে থাকে তাহলে সরেজমিন তদন্ত করে তাদের লাইসেন্স বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করা হবে।

জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আলম বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে  আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইএইচ

Link copied!