Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫,

৫ তলা ছাত্রীনিবাসে থাকতে দেয়া হয় না কাউকে

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাট প্রতিনিধি

জানুয়ারি ৯, ২০২৫, ০৫:৫৪ পিএম


৫ তলা ছাত্রীনিবাসে থাকতে দেয়া হয় না কাউকে

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সুন্দরবন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শেখ খালিদ আহম্মেদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, জাল সনদে শিক্ষক নিয়োগ, স্বেচ্ছাচারিতা, আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।

প্রভাবশালী এই অধ্যক্ষের বিচারের দাবিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সভাপতির বরাবর আবেদন করেছেন কলেজের শিক্ষক ও স্থানীয়রা।

নবনিযুক্ত সভাপতি বলছেন, তদন্ত কমিটি গঠন করে অনিয়ম পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ খালিদ আহম্মেদ অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কলেজের কোন আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয় না। কোন স্টক রেজিস্ট্রারও নেই এই কলেজে।

২০২৪ সালে কলেজের বালি ভরাটের জন্য দেড় লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করলেও, কোন কাজ না করে পুরো টাকা মেরে দিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে নামে বেনামে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ নিয়ে, হিন্দু শিক্ষার্থীদের মাঝে বণ্টন না করে অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেছেন। টিউশন ফি‘র টাকা শিক্ষকদের মাঝে বিতরণ না করে আত্মসাৎ করে আসছেন।

উপবৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা কেটে রাখেন অধ্যক্ষ। কলেজের ২৭টি দোকানে ভাড়া উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন তিনি।

নিজের আত্মীয়দের কাছে বিনা ভাড়ায় দোকান বরাদ্দ দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের পদে থাকা এবং তৎকালীন সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় চরমভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে দাবি শিক্ষকদের।

নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়েয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। কলেজে বিএম শাখায় অমিত নামের এক ব্যক্তিকে বড় অঙ্কের টাকার বিনমিয়ে জাল সনদে চাকরি প্রদান করেন। পরবর্তীতে অমিতের নামে সনদ জালিয়াতির মামলা করা হয়। একই শাখায় সুবর্না দাশ ও উৎপল নামের দুইজনকে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রদান করেন।

২০১৮ সালে দর্শন, অর্থনীতি, গণিত ও সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে চার জন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করেন। এর মধ্যে গণিত বিষয়ের শিক্ষক আল আমিন ও সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে কবিতা সানাকে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ২০১৭ সালে নিয়োগ দেখিয়ে পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি এবং রেজুলেশন জালিয়াতি করে এমপিওভুক্ত করেন।

তবে দর্শন বিষয়ে আব্বাস ও অর্থনীতি বিষয়ে ফাহিমা খাতুনকে এমপিওভুক্ত করাননি। বরং শিক্ষক নিয়োগ থাকা সত্ত্বেও এনটিআরসিএ-তে পদ দুটো শূন্য দেখিয়ে দুইজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।

আকবর আহম্মেদ নামের এক শিক্ষক ২০০২ সালে কয়েকমাস চাকরি করে, যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে চলে যায়। সেখানে এক শিক্ষার্থীকে পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য, কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় মামলা হয়। মাস খানেক জেল খেটে আবারও সুন্দরবন মহিলা কলেজে ফিরে আসেন। অধ্যক্ষকে ২ লক্ষ এবং সুভংকর নামের এক শিক্ষককে ৩ লাখ টাকা দিয়ে উচ্চ শিক্ষা অধিপ্তরের পরিচালক হারুণকে ম্যানেজ করে রাতারাতি সহকারী অধ্যাপক হয়ে যান। যা নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ অসন্তোষের সৃষ্টি হয়।

নিয়োগ পেয়েও এমপিও ভুক্তি হতে না পারা অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ফাহিমা খাতুন বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন করে, সকল নিয়ম মেনে আমরা চারজন এক সাথে নিয়োগ পেয়েছি। অধ্যক্ষ বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ব্যাকডেটে নিয়োগ দেখিয়ে দুইজনকে এমপিওভুক্ত করেছেন। আর আমাকে এবং দর্শন বিষয়ের আব্বাসের পদ শূন্য দেখিয়ে এনটিআরসিএ‘র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। আমরা এই দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের বিচার চাই এবং আমাদের এমপিও ভুক্ত করার আবেদন জানাই।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ শেখ খালিদ আহম্মেদ বলেন, এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। মূলত আমাকে হেয় প্রতিপন্য করার জন্য এসব অভিযোগ করা হচ্ছে। নতুন ভবনের পূর্বপাশে ও সামনে বালু ভরাট করা হয়েছে। টিউশন ফির টাকা শিক্ষকদের দিতে হবে এমন কোন আইন নেই।

কলেজের নব নিযুক্ত সভাপতি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান বলেন, দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে অনেক অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কলেজে লাইব্রেরি, ছাত্রীনিবাস ও মিলনায়তন বিষয়ে সমস্যা রয়েছে।বিশাল হোস্টেলে একজন ছাত্রীকেও থাকতে দেওয়া হয় না।কলেজের ২৭টি দোকানের ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। কলেজের গরীব শিক্ষার্থীদের তহবিলের টাকা লোপাট করা হয়েছে। সকল অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে সত্যতা পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ইএইচ

Link copied!