সাইদুর রহমান, মিরপুর (কুষ্টিয়া)
জানুয়ারি ১৬, ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
সাইদুর রহমান, মিরপুর (কুষ্টিয়া)
জানুয়ারি ১৬, ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে কু্ষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা অডিটোরিয়াম রুমে তারুণ্যের উৎসব পালিত হয়। "বাংলাদেশকে বদলাই, বিশ্বকে বদলাই" এই স্লোগান কে বুকে ধারণ করে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
বিষয় ভিত্তিক আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশের পূর্ববর্তী চিত্রসহ বর্তমান পরিস্থিতি। এসময় ছাত্র-ছাত্রীরা বলেন সময়োপযোগী পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। নানান দুর্নীতি আর অনিয়মের বেড়াজালে উন্নয়ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই আমাদের প্রয়োজনীয় সঠিক পরিকল্পনা, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিবি করিমুন্নেছা বলেন আঠারো থেকে পঁয়ত্রিশ বছরের মধ্যে যাদের বয়স তাদেরকেই বলা হয় তরুণ। জনসংখ্যার এই অংশটা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ সেটি ব্যাখ্যা করতে তিনি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের আঠারো বছর বয়স কবিতার কয়েকটি লাইন পাঠ করেন - আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়, পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাঁধা। এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়, আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা। তিনি আরো বলেন যাদের বয়স হয়েছে তারা যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে আগে পিছে ভাবে। কিন্তু তরুণরা যে কোনো সিদ্ধান্ত যেকোনো সময় নিতে পারে। তাদের রক্ত টগবগে তাই তারা শত বাধা কে অপেক্ষা করে সবকিছু জয় করতে পারে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা (ভূমি) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার উপজেলা সহকারী কৃষি অফিসার সহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ।
আজকের তরুণ আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তারুণ্যের মধ্যেই সর্বদা লুকায়িত সব বাধা-বিপত্তি, অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার উজ্জীবিত শক্তি। বৃদ্ধের প্রজ্ঞা, পরামর্শ আর তারুণ্যের শক্তি একটি জাতির সমৃদ্ধি অর্জনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হয়ে থাকে। তাই বলা হয়, ‘তারুণ্যেই শক্তি, তারুণ্যেই মুক্তি’। পৃথিবীর যত মহত্কর্ম সাধিত হয়েছে, মুক্তির উদ্যম হাওয়া যত প্রান্তর বেয়ে প্রবাহিত হয়েছে তার প্রত্যেকটির পেছনে অসামান্য অবদান রয়েছে তরুণদের। আর এই তারুণ্যের শক্তির আশ্রয়ে পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে।
ইতিহাস বারবার এগিয়ে আসে তরুণদের অবদানকে স্মরণ করিয়ে দিতে। বলা হয়ে থাকে তারুণ্যের চোখে বিশ্বকে জয় করা যায়। কিন্তু আজকের দিনে তরুণদের বিচরণ চার দেওয়ালেই সীমাবদ্ধ। যে তরুণদের বিচরণে রাজপথ, খেলার মাঠ চারপাশ হইহুল্লোড়ে মুখরিত থাকত, সেই তরুণরা আজ যেন কোথায় হারিয়ে গেছে বাংলা থেকেই। আজ বাঙালি, ইছামতী, করতোয়া নদীর বুকে একঝাঁক তরুণের উন্মুক্ত সাঁতার কাটার দৃশ্যও তেমন চোখে পড়ে না। ভাসানীর মতো দুষ্টুমিতে ভরপুর শৈশব, বঙ্গবন্ধুর মতো সবার হয়ে মুক্তির কথা বলা কৈশোর, আর টগবগে রক্তের শেরে বাংলার মতো প্রতিবাদী যুবকের বাংলার চিরচেনা পথে-প্রান্তরে আর বিচরণ করতে দেখা যায় না। এক জনের রক্তের জবাবে হাজার তরুণের বুক পেতে অবলীলায় তাজা রক্ত বিলিয়ে দেওয়ার সমৃদ্ধ এবং শানিত ইতিহাস বাংলার আছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী এবং সর্বশেষ ২০২৪ এর আন্দোলনে তরুণদের সাহসী এবং আত্মত্যাগের মহিমা বাঙালির প্রেরণার হাতিয়ার।
এমতাবস্থায় এই তরুণ প্রজন্মের চেতনায় বিস্তর পরিবর্তন ঘটাতে দেশের সচেতন সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে অবশ্যই। তরুণ দিয়ে নিয়মিত কথা বলার ব্যবস্থা করে দিতে পারলে তরুণরা দিতে পারবে নতুন এক সোনার বাংলা।
আরএস