পরাণ আহসান, ভোলা
জানুয়ারি ২২, ২০২৫, ১০:০৯ পিএম
পরাণ আহসান, ভোলা
জানুয়ারি ২২, ২০২৫, ১০:০৯ পিএম
বেত হাতে শিক্ষকের টেবিলের ওপর বসিয়ে তিন বছর বয়সী নিজের কন্যা শিশুকে দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর পাঠদান করালেন হাফছা খানম ওরফে প্রিয়া ইসলাম নামে এক শিক্ষিকা।
তিনি ৩৯নং হাজারীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। বিদ্যালয়টির অবস্থান জেলার চরফ্যাশন উপজেলায়।
ওই সময় শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়ে নিজের কোলের শিশুর পাঠদানের ভিডিওচিত্র মোবাইলে ধারণ করে ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন শিক্ষিকা নিজেই।
ওই শিক্ষিকা তার ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে নিজের শিশু কন্যাকে ম্যাডাম আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, ‘ম্যাডাম যখন দ্বিতীয় শ্রেণীর ইংরেজি ক্লাসে বাকবাকুম পায়রা কবিতা শেখায়।’ পাঠদানকারী ওই শিশু তার ছোট মেয়ে।
এমন একটি ভিডিও গত সোমবার বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে তার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করলে মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়। মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় শিক্ষক ও অবিভাবকদের মধ্যে।
এরই প্রেক্ষিতে বুধবার বিকালে স্কুলে গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত হলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক অভিভাবক জানান, এই শিক্ষিকা যদি প্রকৃত পড়াশোনা করে শিক্ষকতা পেশায় আসতো তাহলে এমন জ্ঞানহীন কাজ করতো না। তিনি সম্ভবত শ্রেণিকক্ষটাকে নিজের বসতঘর মনে করেছে। ওনার কাছ থেকে আমাদের সন্তান কী ধরনের শিক্ষা অর্জন করবে?
সূত্র জানায়, শিক্ষিকা হাফছা খানম ওরফে প্রিয়া ইসলাম জালিয়াতি করে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় পাশ করেছেন। জালিয়াতির পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন তার স্বামী শ্রমিক লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম সবুজ। তার স্বামী চরফ্যাশন পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি থাকার সুবাদে তিনি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষায় নিজে অংশগ্রহণ না করে টাকার বিনিময়ে অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে।
শিক্ষিকা হাফছা খানম ওরফে প্রিয়া ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘দুষ্টুমির ছলে ওই ভিডিওটি ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করেছি। বিষয়টি এমন হয়ে যাবে তা আমার জানা ছিলোনা। এখনই আমি ভিডিওটি ডিলেট করে দিবো।’
৩৯নং হাজারীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মামুন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে, খতিয়ে দেখা হবে।`’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, `যদি কোন শিক্ষক এমনটা করে থাকে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি বলেন, `বিষয়টিকে তদন্ত করে দেখা হবে।`
ভোলা জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান জানান, কোন শিক্ষক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে তাদের শিশু সন্তান নিয়ে যাওয়ার কোন নিয়ম নেই। তার শিশুকে দিয়ে ক্লাসে পাঠদান করানোর কোন বৈধতা তার নেই। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইএইচ