Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫,

সম্পত্তির লোভে প্রবাস ফেরত স্বামীকে ‘পাগল’ বানানোর চেষ্টা স্ত্রীর

মোহাম্মদ হানিফ, সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী)

মোহাম্মদ হানিফ, সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী)

জানুয়ারি ২৩, ২০২৫, ১২:১৮ পিএম


সম্পত্তির লোভে প্রবাস ফেরত স্বামীকে ‘পাগল’ বানানোর চেষ্টা স্ত্রীর

প্রবাস ফেরত স্বামীকে মানসিক রোগী বানাতে মারধর করে সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এক মহিলার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে প্রবাসী আব্দুল হান্নানের ওপরে এই হামলা চালানো হয়। ভুক্তভোগী নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার আমিশাপাড়া ডাক্তার বাড়ির মো. ইউসুফের ছেলে। হামলার ঘটনায় তিনি ৪ জনের বিরুদ্ধে সোনাইমুড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযুক্তরা হলেন— স্ত্রী তাছলিমা আক্তার(৩৮), শ্যালক মো. আরিফ(২৯), শাশুড়ি বিউটি আক্তার(৫৫), শ্বশুর আবুল হোসেন(৬০)। তারা সকলেই উপজেলার আমিশাপাড়া সামারখিল এলাকার মেড়ীপাড়ার বাসিন্দা।

লিখিত অভিযোগে জানা যায়, আব্দুল হান্নান ২০০০ সাল থেকে কাতারে কর্মরত ছিলেন। ২০০৫ সালে তিনি ছুটিতে দেশে এসে প্রতিবেশী আবুল হোসেনের মেয়ে তাছলিমা আক্তারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ছুটি শেষে তিনি প্রবাসে চলে যান। বিদেশ থেকে অর্জিত অর্থ তিনি নিজের স্ত্রীর কাছে পাঠাতে থাকেন। শ্বশুর বাড়ির আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় দুই শ্যালককে নিজের খরচে কাতারে নিয়ে যান। পরে তাদের কাতার থেকে আমেরিকাতেও নিজের খরচে পাঠান। বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা দিয়ে তার স্ত্রী উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা শুরু করেন ও পরকীয়াতে লিপ্ত হন। ২০১৯ সালে কাতার থেকে দেশে ফিরে আব্দুল হান্নান দেখেন তার স্ত্রী বিদেশ থেকে পাঠানো সকল টাকা ও জমি-জমা আত্মসাৎ করেছেন। টাকা ও জমির দলিল ফেরত চাইলে তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হতো।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) তাকে জোরপূর্বক শ্বশুর বাড়ির লোকেরা মানসিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ফিরে তাদের চক্রান্তের বিষয়টি বুঝতে পেরে সম্পত্তির দলিল চাইলে রুমের ভেতরে আটকে মারধর করা হয়।

হামলার বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত মো. আরিফ প্রথমে ভুক্তভোগীকে নাক-মুখে ঘুষি দিয়ে জখম করে। পরে লাঠি দিয়ে ডান চোখে আঘাত করলে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এসময় হামলাকারী আরিফ গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে ও তাছলিমা আক্তার, বিউটি আক্তার ও আবুল হোসেন এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। হামলাকারীদের হাত থেকে ছুটে তিনি কোনোরকম প্রাণে বেঁচে জাতীয় হেল্প লাইন ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেন।

ভুক্তভোগী প্রবাস ফেরত আব্দুল হান্নান জানান, বিদেশে উপার্জিত সকল টাকা তিনি নিজের স্ত্রীর কাছে সরল বিশ্বাসে পাঠাতেন। তবে দেশে ফিরে দেখেন তার পাঠানো টাকা স্ত্রী তাছলিমা আক্তার আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি তার পাঠানো টাকায় ক্রয়কৃত সকল জমি-জমাও আত্মসাৎ করেছেন। টাকার হিসাব ও জমির দলিল চাইলে বিভিন্নভাবে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করেন। এছাড়া বৈবাহিক সম্পর্কেও তার স্ত্রীর কোন আগ্রহ নেই। বিদেশ থেকে ফিরে দিনাজপুর জেলায় একটা রেস্টুরেন্টের ব্যবসা দিলেও পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রী তার সাথে সেখানে যেতে চান না। মাঝে মাঝে দিনাজপুর থেকে বাড়িতে আসলেও দুর্ব্যবহার করতে থাকে। গত কয়েকদিন আগে দিনাজপুর থেকে তিনি শ্বশুর বাড়িতে আসেন। পরে স্ত্রী সহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে একপ্রকার জোর করে চিকিৎসার কথা বলে মানসিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। 

পাগল বানিয়ে সম্পত্তি আত্মসাতের ষড়যন্ত্রটি বুঝতে পেরে জমি-জমার কাগজ স্ত্রীর কাছ থেকে বুঝে নিতে চাইলে মারধর করা হয়। রক্তাক্ত জখম করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে উপার্জিত টাকা আর সম্পত্তি আত্মসাৎ করতেই পরিকল্পিতভাবে এগুলো করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

আব্দুল হান্নানের বড় ছেলে হাফেজ মাহাদী হাসান তিশার জানান, তার বাবার বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা দিয়ে তার মা বেশ কিছু জমি ক্রয় করেন। সেই জমি বাবার নোমে রেজিস্ট্রি না করে মা নিজের নামে রেজিস্ট্রি করেন। বিভিন্ন সময় এগুলো নিয়ে পরিবারে ঝামেলা হয়। গতকাল তার বাবাকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়। ছোট ভাই থেকে খবর পেয়ে মাদ্রাসা থেকে হাসপাতালে গিয়ে বাবা আব্দুল হান্নানকে রক্তাক্ত ও গুরুতর আহত অবস্থায় দেখতে পান।

নাম প্রকাশে না করার শর্তে তাছলিমা আক্তারের এক আত্মীয় জানান, আব্দুল হান্নান বিদেশ থেকে ফেরার পর থেকেই তাছলিমার সাথে পারিবারিক ও টাকা-পয়সার বিষয় নিয়ে ঝামেলা চলছে। এর আগেও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী দিয়ে আব্দুল হান্নানকে মারধর করা হয়। বর্তমানে সুস্থসবল মানুষটাকে পাগল বানানোর চেষ্টা চলছে। পরিকল্পিত ভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রচার করতে আব্দুল হান্নানকে মাইজদি জীবন আলো হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিলো বলেও জানান তিনি।

বিআরইউ

Link copied!