তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
জানুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০১:৪০ পিএম
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
জানুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০১:৪০ পিএম
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওড়ে অন্তত ১৪টি ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। বাঁধ নির্মাণে মাটির তীব্র সংকট ও হাওড়ের এসব অংশ থেকে এখনো পানি সরে না যাওয়ায় এ অবস্থার তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, এবছর তাহিরপুরের ছোট-বড় ৮টি হাওড়ে মোট ৭৬টি পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠন করা হয়েছে। যা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। নীতিমালা অনুযায়ী এসব প্রকল্পের কাজ ১৫ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্তু মাটিয়ান হাওড়ের মহালিয়া ও বনুয়া অংশে অন্তত ১৪টি পিআইসি তাদের কাজই শুরু করতে পারিনি এখনো।
মাটিয়ান হাওড়ের ৪৭ থেকে ৫৫ নম্বর ও মহালিয়া হাওরের ২৭ থেকে ২৯ নম্বর ফসল রক্ষা বাঁধে গিয়ে দেখা গেছে, যেখানে বাঁধ নির্মাণ করা হবে তার আশেপাশের ডুবাগুলোতে পানি থৈথৈ করছে। কোন এক জায়গায় মাটি কাটার খননযন্ত্র নামানো হবে সে পরিস্থিতিও নেই। আবার কিছু জায়গায় বাঁধ কেটে হাওর থেকে পানি সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব কারণে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ পিছিয়ে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। যা বাস্তব মূল্যের সঙ্গে রেট শিডিউল এর অনেক পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। যেকারণে পিআইসি সভাপতিরা এই ১৪টি বাঁধ নির্মাণে নিজেদের অনাগ্রহের কথা লিখিতভাবে প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
সমস্যা সমাধানে বিষয়গুলো সরেজমিনে দেখতে বের হোন প্রকল্প বাস্তবায়ন জেলা কমিটির সদস্য সচিব ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার, তাহিরপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম, জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ও জেলা জামায়াতের আমির তোফায়েল আহমদ খান, পাউবো উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মামুন মিয়া ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য বাবরুল হাসান বাবলু।
এসময় ছিলানী তাহিরপুর গ্রামের কৃষক আরিফ হাসান এর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, হাওড় থেকে পানি শুকাতে বাঁধের কিছু কিছু অংশ কেটে দেওয়া হচ্ছে। আরও সপ্তাহখানেক যাবে এই পানি সরতে। যেকারণে কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না, অন্যবছর এমন সময় পিআইসির কাজ অর্ধেক হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, এবারই ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজে মাটির এমন সংকট দেখা দিয়েছে, সামনের দিনে কোথায় থেকে মাটির ব্যবস্থা হবে বুঝতে পারছি না। আগামীতে সমস্যা সমাধানে হয় নদী খনন করতে হবে না হয় বাঁধের চারপাশে ব্লক দিতে হবে।
মাটিয়ান হাওড়ের কৃষক মোশাররফ হোসেন বলেন, বাঁধের চারপাশে পানিতে ভরপুর। পানি না শুকালে মাটিও আনা সম্ভব না। এখন মাটি আনতে হলে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে যেতে হবে। বাঁধ কেটে পানি সরানোর চেষ্টা করা হলেও এখনো অনেক পানি রয়ে গেছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম বলেন, সকল হাওড়ে কাজ শুর হলেও মাটিয়ান হাওড়ের এই ১৪টি প্রকল্পে মাটির তীব্র সংকট ও হাওড় থেকে সময়মতো পানি না নামার কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছেনা। তবে এই ১৪টি প্রকল্পের কিছু কিছু জায়গায় জোর চেষ্টা চলছে কাজ শুরু করার। তিনি আরও বলেন, এসব বাঁধে দীর্ঘদিন ধরে কাজ হচ্ছে যেকারণে নিকটবর্তী যত মাটি আছে সব কেটে নিয়ে আসা হয়েছে। যার ফলে এখন মাটির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ও জামায়াতের আমির তোফায়েল আহমেদ খান বলেন, এখানে এসে যা দেখলাম, কাছাকাছি মাটি পাবার সহজলভ্যতা নেই। যে জায়গা থেকে মাটি দিবে সেটিও ডুবার মতো তৈরি হয়েছে। এই পানি হয়তো সেচ করে শুকিয়ে তারপর মাটি সংগ্রহ করতে হবে। আর না হয় প্রাকৃতিকভাবে পানির শুকানোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে এতে করে বাঁধ নির্মাণে একটু সময় বাড়িতে দিতে হবে।
হাওড়ে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে মাটির এই সংকট ও সময়মতো পানি সরে না যাওয়ার বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে ৮টি উপজেলার ১৩টি হাওড়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে পাউবো। এগুলো বাস্তবায়ন হলে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে প্রতিবছর যে সংকট তৈরি হয় তা আশা করি আর থাকবেনা।
বিআরইউ