Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,

চলছে শান্ত বরিশালকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্র

আরিফ হোসেন,বরিশাল ব্যুরো

আরিফ হোসেন,বরিশাল ব্যুরো

জানুয়ারি ৩০, ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম


চলছে শান্ত বরিশালকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্র

ফ্যাসিস্টদের সহযোগীরা জনদুর্ভোগে পরিণত করে এরা পরিস্থিতি চরম আকারে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে এখনও

  • অপ্রীতিকর পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে ফেলছে মুহূর্তেই
  • বিগত সরকার পতনে লাভবান রাজনৈতিক মহলও এদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বসে আছে।
  • উস্কানিদাতাদের লক্ষ্য রয়েছে পরিকল্পিত

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বরিশালেও একের পর এক অঘটনের খবর মিলতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে মাঠে থাকা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের।

সরকার বিরোধী এই শক্তি যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে ফেলছে পারে বলে এমনই ধারণা তাদের। পুলিশ-প্রশাসন তাদের ভূমিকা আরও কঠোরভাবে পালন না করলে ফ্যাসিস্টদের সহযোগীরা শান্ত বরিশালকে অশান্ত করার সুযোগটা কাজে লাগাতে পারে বলেও অভিযোগ তাদের।

তবে বরিশালকে শান্ত রাখতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম।

বিভিন্ন শ্রমিক আন্দোলনকে বিক্ষোভে রূপ দেয়া, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকে তাদের অজান্তেই হিংসায় রূপ দেয়া, পেশাজীবীদের আন্দোলনকে জনদুর্ভোগে পরিণত করে এরা পরিস্থিতি চরম আকারে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।

বিগত সরকার পতনে লাভবান রাজনৈতিক মহলও এদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বসে আছে। সর্বশেষ রুপাতলি বাসস্ট্যান্ডে বাস ধর্মঘট এর বড় নজির হয়ে উঠেছে। এখানে এক শিক্ষার্থীর সাথে বাসের কর্মীদের সাথে বাগবিতন্ডাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদী হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এরা বিষয়টি প্রতিবাদ করতে আসে বাসস্ট্যান্ডে, তখন ভাঙচুর করা হয় একটি বাস।

বিষয়টি এ পর্যন্ত থেমে গিয়েছিলো। কিন্তু উস্কানিদাতাদের লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। তারা শিক্ষার্থীদের ভিড়ের সাথে মিলে শুরু করে বিক্ষোভ এবং বিনা কারণে হামলা চালায় নিরপরাধ দুটি বাসের উপর, ভাঙচুর করা হয় বাস দুটিকে। এরপর শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। অফিসের সামনে থাকা তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এরপর ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে পুরো বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়। শিক্ষার্থীরা চলেও যায়।

এ অবস্থায় পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে দেখে চক্রান্তকারীরা বিএনপির নেতৃত্বাধীন বাস মালিক-শ্রমিক গ্রুপে ঢুকে পড়ে উসকানি দিয়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয়। এদের ফাঁদে পা দিয়ে ডাকা ধর্মঘট শুরু হয়ে যায়। চক্রান্তকারীদের উদ্দেশ্য ছিল জনদুর্ভোগ চরমে উঠানো এবং তারা তাতে সফল হন। এর আগে কাশিপুর এলাকায় এক যুবকের হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হয়। এটিও কয়েক ঘণ্টার জন্য দুর্ভোগের সৃষ্টি করে। বিসিসির পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে এরা কর্মীদের পরিচ্ছন্নতার কাজ থেকে বিরত করে রাখে। শহর হয়ে যায় আবর্জনায় ভরপুর, সৃষ্টি হয় জনদুর্ভোগের।

বিএম কলেজের সামনে দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে এক পর্যায়ে ওরা ঠেলে নিয়ে যায় নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে। শুরু হয় অবরোধ। ওদের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিচক্ষণতায় দাবি আদায় হয় এবং ঘটনার সমাপ্তি ঘটে। প্রতিটি ঘটনাকে উস্কানি দিয়ে জনদুর্ভোগ পর্যন্ত নেয়ায় ওরা তৎপর রয়েছে এবং সফলও হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ভূমিকায়ও দেখা দিচ্ছে সন্দেহ। যে ঘটনা ঘটার পর পরই সুরাহা হয়ে যায় তার নিষ্পত্তিতে পুলিশ ও প্রশাসনের দীর্ঘ বিলম্ব নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করছে। সর্বোপরি বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা প্রায় প্রতীয়মান হচ্ছে যে বরিশালকে অস্থির করার জন্য বর্তমান সরকারের বিরোধী একটি চক্র সুকৌশলে কাজ করে যাচ্ছে। নানা পেশায় কর্মরত এই চক্রটি যে যার অবস্থান থেকে চক্রান্ত বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। এর পরিণতি নিয়ে চিন্তিত বরিশালের সাধারণ মানুষ যাদের কথা বলার কোন প্লাটফর্ম নেই।

বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন শিকদার জিয়া বলেন, কিছু কিছু ঘটনার সাথে সাবেক সরকারের নেতারা প্রকাশ্যে না এসে তারা পিছনে থেকে মানুষকে  উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে এবং কি জনদুর্ভোগ পর্যন্ত নেয়ায় ওরা তৎপর রয়েছে। তবে সফল হচ্ছে না। বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

তিনি আরও বলেন, জনগণের জানমাল রক্ষাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিগত দিনে আমরা তাদের পাশে ছিলাম এবং এখনও আছি ও থাকবো।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও বরিশাল মহানগর শখার আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, জাতীয় পার্টি আগে থেকেই বলে আসছে দেশে একটি বৈষম্য ব্যবস্থা এবং সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত যদি না হয় তাহলে বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি তা বিরাজমান হবে। জাতীয় ঐক্য যে ভাবে হওয়ার কথা তা বর্তমান করে করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই জাতীয় পার্টি মনে করেন ৭১ সালের পরাজিত শক্তি এবং বাংলাদেশ কোন উন্নতি আনতে পারবে না। তাদের জন্যই আজ বাংলাদেশের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আমরা মনে করি ২৪ সালে যে ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের যে পতন হয়েছে। সেই স্বৈরাচারী সরকার যেন আর ফিরে আসতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, বরিশালের অবস্থা একদম লেজে গোবরের মত অবস্থা। ক্ষমতাসীন দল হচ্ছে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে এখানে মনে হচ্ছে সরকার চালাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত। বর্তমানে যারা ক্ষমতাসীন মনে করে এবং ক্ষমতায় গেছে মনে করেন তাদের দখলে এখন সব সিন্ডিকেট চলে।

হাবুল আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সেই শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা আত্মগোপনে চলে গেলেও তারা এখনও পিছনে বসে দেশ ও বরিশালকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের পদধারী নেতারা। তবে বরিশালকে শান্তর রাখতে জাতীয় পার্টি’র বরিশাল জেলা ও মহানগর শাখার নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে থাকবে।

বরিশাল মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা জহির উদ্দীন মুহাম্মদ বাবর বলেন, আসলে বিচ্ছিন্ন ঘটনা তো বিছিন্নই। যদিও কোন ঘটনাই আমাদের কাম্য নয়।  তবে সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের মূল হোতা পালিয়ে গেলেও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা তারা এখনও আছে। কিছু করার চেষ্টা করতেও পারে। এবিষয়ে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আরো অ্যাকটিভ হতে বলবো।

তিনি আরও বলেন, যদি কোন ঘটনায় কারও উস্কানি থাকে তা প্রমাণিত হয় সে ক্ষেতে আমরা আগেও যেমন জনগণের পাশে ছিলাম ঠিক তেমনই থাকবো। তবে পুলিশকে আরও সচেতন হওয়ার আহবায়ন জানান তিনি।

ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েব আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম সাথে দেশে এবং বরিশালকে অস্থির করার কোন ষড়যন্ত্র চলছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগীরা এখনো ষড়যন্ত্র করছে এটা তো স্বাভাবিক। তবে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সাধারণ জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকার কোন বিকল্প নেই। আমাদের সম্মিলিতভাবে এটা সবাইকে রুখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেশের স্বার্থে এবং জনগণের স্বার্থে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম এর সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, উল্লিখিত যে ঘটনাগুলো হয়েছে। সেগুলো হলো তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে। তবে বরিশাল শান্ত রয়েছে। কেউ যদি শান্ত বরিশালকে অশান্ত করা চেষ্টা করে তাহলে তাদের কোন ছাড় দিবে না পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, বরিশালকে শান্ত রাখতে প্রস্তুত রয়েছে মেট্রোপলিটন পুলিশ।

ইএইচ

Link copied!